দ্য গার্ডিয়ান

বাবার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ক্যামেরন

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাবা ইয়ান ক্যামেরন। আশির দশকে তিনি বাহামা দ্বীপপুঞ্জে ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংস ইনকরপোরেটেড নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন। করস্বর্গ বলে পরিচিত ভূখণ্ডে ইয়ান ক্যামেরনের সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রমের বিষয়টি ব্রিটিশ নাগরিকদের অজানা ছিল না। কিন্তু পানামা পেপারস-এর সুবাদে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এ বিষয়টি। বাবার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নের মুখে ডেভিড ক্যামেরন। এ বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধান শিরোনাম করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

পানামা পেপারস-এর নথিতে জানা গেছে, ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংসের অধিকর্তাদের যাতে ব্রিটেনে কোনো রকম কর দিতে না হয়, সেজন্য কোম্পানির পরিচালকরা বাহামার স্থানীয় অধিবাসীদের দিয়ে দাফতরিক নথিপত্রে সই করাতেন। নতুন এ তথ্যেই বিপাকে পড়তে বসেছেন ইয়ান ক্যামেরনের ছেলে ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তার পরিবারের কর ফাঁকির বিষয়টি ঘিরে গতকালও উত্তপ্ত ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত কর ফাঁকির অভিযোগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতোই বিতর্কের মুখে রয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। একই কারণে ঝুঁকিতে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিলারি ক্লিনটন, ফ্রান্সের রক্ষণশীল রাজনীতিক মেরি ল পেনসহ অনেক নেতা।

The Guardian

পানামা পেপারস ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্টেও। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পরিবারের কর আদায়ের বিষয়ে বিরোধীদলীয় এমপিদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবর্ন বিষয়টিকে ‘ব্যক্তিগত ইস্যু’ হিসেবে দেখার আহ্বান জানান। পার্লামেন্ট তাতে শান্ত হয়নি। এর পর ডেভিড ক্যামেরন পার্লামেন্ট অধিবেশনে উপস্থিত হলে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন বলেন, ‘অভিযুক্ত কোম্পানিটি যেহেতু ব্যক্তিমালিকানাধীন, সে হিসেবে বিষয়টি ব্যক্তিগত। কিন্তু যখন কর পরিশোধ না করার বিষয়টি সামনে এসে যায়, তখন সেটি আর ব্যক্তিগত থাকে না।’

জেরেমি করবিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকেই এখন বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে। এ বিষয়ে অবশ্যই তদন্ত হতে হবে। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত। বিরোধীদলীয় নেতা একই সঙ্গে প্রয়োজনবোধে করস্বর্গ বলে পরিচিত ব্রিটিশ ভূখণ্ডগুলোর স্বায়ত্তশাসন কর্তনেরও পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসহ ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের আওতাধীন ভূখণ্ডগুলো প্রয়োজনে সরাসরি শাসনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অধিবেশনে উপস্থিত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ সময় নিরুত্তর ছিলেন।

এর আগে বার্মিংহামে ইইউ না ছাড়ার পক্ষে গণভোটের প্রচারণা চালাতে গিয়েও ভোটারদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রেস রিলিজে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন অথবা তার পরিবারের সদস্যরা বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে নিবন্ধিত কোনো কোম্পানি দ্বারা লাভবান হবেন না।’ পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় সদস্যরা এ বক্তব্যকে অসম্পূর্ণ ও খোঁড়া বলে অভিহিত করেছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতোই পানামা পেপারস ঘিরে বিতর্কে পড়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। জাপান সফররত ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, ‘বিদেশে কোম্পানি ও সম্পত্তি নিবন্ধনের বিষয়টি নিতান্তই প্রচলিত রেওয়াজ। বরং দেশে কোনোরকম সুবিধা নেয়ার প্রশ্ন যাতে না উঠে, সেজন্যই আমার মালিকানাধীন ক্যান্ডি ব্যবসাটি বিদেশে নিবন্ধন করেছি।’

পানামা পেপারস ঘিরে সৃষ্ট বিতর্কে ঝুঁকির আশঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনেরও। পানামা পেপারস ফাঁসের পর থেকে ডেমোক্রেটিকদলীয় মনোনয়নের জন্য হিলারি ক্লিনটনের প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স ও তার সমর্থকরা পানামার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছেন। ২০১১ সালে স্বাক্ষরিত এ চুক্তির কড়া বিরোধিতা করেছিলেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের প্রস্তাবিত এ চুক্তি মার্কিন নাগরিকদের কর ফাঁকির পথ সুগম করবে বলে সিনেট বিতর্কে সতর্কতা বার্তা উচ্চারণ করেছিলেন বার্নি স্যান্ডার্স। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এ চুক্তির জন্য জোর দিয়ে আসছিলেন।

পানামা পেপারস ফাঁসের পর বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকরা হিলারি ক্লিনটনের স্বাক্ষরিত চুক্তিটির কথা বারবার সামনে নিয়ে আসছেন। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, আইনি পরামর্শক সংস্থা মোসাক ফনসেকার নথিতে হোয়াইট হাউজের সাবেক চিফ অব স্টাফ জন পোডেসতার নাম রয়েছে। জন পোডেসতা বর্তমানে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। বিতর্কিত কোম্পানির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি চলমান প্রাইমারি নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের বিরোধীদের প্রচারাভিযানকে আরো শাণিত করবে। এমনিতে ই-মেইল বিতর্কসহ নানা ইস্যুতে সমালোচকদের তোপের মুখে রয়েছেন তিনি। উপরন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে অনুষ্ঠিত আটটি রাজ্যের প্রাইমারি নির্বাচনের মাত্র একটিতে হিলারি ক্লিনটন জয় পেয়েছেন। অ্যারিজোনা রাজ্যে তার সে জয়ের পেছনেও বিতর্ক রয়েছে। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী বার্নি স্যান্ডার্স বরাবরই ভালো করছেন। এ অবস্থায় পানামা পেপারসে জন পোডেসতার নাম হিলারি ক্লিনটনকে বাড়তি বিপত্তিতে ফেলতে পারে।

ফ্রান্সের রক্ষণশীল রাজনীতিক মেরি ল পেনের নামও এসেছে পানামা পেপারসে। দলীয় নেতৃত্বে ভাঙনসহ নানা ঝড় সামলে সর্বশেষ স্থানীয় নির্বাচনে শরণার্থী ইস্যু সামনে রেখে জয় পেয়েছিলেন কট্টরপন্থী এ রাজনীতিক। কিন্তু পানামা পেপারস ইস্যুটি তার দলের পুনরুত্থান আবারো বিলম্বিত করতে পারে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

/এমপি/