গহনা তৈরিই যাদের পেশা...

একসময়ের অবহেলিত জনপদ ছিল সাভারের ভাকুর্তা। লেখাপড়ার দিক দিয়ে তারা  পিছিয়ে ছিল। বেকার জীবনযাপনছিল বেশিরভাগ মানুষের। এ জনপদে আজ আর কেউ বেকার ঘরে বসে নেই। ছোট-বড় নারী পুরুষ অনেকেই ব্যস্ত রূপার অলংকার তৈরিতে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে নানা প্রকার অলংকার তৈরি।

গহনা তৈরিই যাদের পেশা...

এ পেশায় থেকে ভাকুর্তা গ্রামের অধিকাংশ পরিবারেই ফিরে এসেছে স্বচ্ছলতা। রাজধানী শহরের গা ঘেঁষে মোহাম্মদপুর, আদাবর বেড়িবাঁধের ওপারে তুরাগ নদী পেরিয়ে যে জনপদ তার নাম ভাকুর্তা। সাভার উপজেলার একটি ইউনিয়নএটি। এ ইউনিয়নে রয়েছে ৩৬টি গ্রাম। গ্রামগুলির মধ্যে রয়েছে চুনারচর, ডোমরাকান্দা, সোলারমার্কেট, খাগুড়িয়া, নলাগুড়িয়া, মোগরাকান্দা, চাপরা, কান্দিভাকুর্তা, হিন্দুভাকুতা, বাহেরচর, মুশরিখোলা, ঝাউচর, লুটেরচর, চরতুলাতুলি, চাইরাসব গ্রামেইঅলংকার তৈরির একই দৃশ্য। কৃষি কাজের পাশাপাশি অলংকার তৈরির কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন গ্রামেরনারী-পুরুষ।রূপার অলংকার তৈরির কারিগররাএকসঙ্গে হিন্দু ভাকুর্তা চৌরাস্তায় অফিস নিয়ে গড়ে তুলেছেন ভাকুর্তা রৌপ্য ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন মোল্লাসাধারণ সম্পাদক বাবু লাল দাস জানান, ভাকুর্তায় প্রায় সাত হাজার নারী-পুরুষ রৌপ্য অলংকার তৈরির পেশায় জড়িত। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কারিগররা অর্ডার নিয়ে আসেন। ফরমায়েশ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা পৌছে দেন অলংকার। দিনে দিনে রূপার গহনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি ভাকুর্তায় নারী সদস্যরাও সমান তালে অলংকার তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন। হিন্দু ভাকুর্তা গ্রামের জোসনা রানী, কনা রানী, মমতা রানী, শিপু রানী, সুবর্না রানী দাস, কল্পনা রানী দাস, বিউটি রানী, ওমা রানীসহ অনেকেই ব্যস্ত সীতা হার, কানের দুল, ঝুমকা, চেইন, পায়ের নূপুরসহ নানা অলংকার তৈরিরকাজে। ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা একটি চেইন অথবা নূপুর তৈরির মজুরি। সীতা হার, কানের দুল, হাতের বালা ইত্যাদির ফরমায়েশ পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নিয়ে আসেন। অনেক সময় জরুরি ভিত্তিতে অর্ডারসরবরাহ করতে হলে একটু বেশি মজুরি পাওয়া যায়। রূপার পাশাপাশি তামা দিয়েও অলংকার তৈরি করেনবলে জানালেন কারিগররা। ডোমরা কান্দার রেজিনা আক্তার চুনার চরের ফুলেজা মোগরা কান্দার নাসিমা, ফিরোজাসহ অনেকেই জানান ঘর সংসার সামলানোর পাশাপাশি তারা গহনা তৈরি করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। তবে বাজারেরূপার দর পতনের প্রভাব পরে তাদেরকাজে। বর্তমানে প্রতি ভরি বিক্রয় হচ্ছে ১হাজার ৩০০ টাকা হিসেবে। তবে এ ঘটনায় ভাকুর্তার রৌপ্য ব্যবসায়ীদের ভেতর তেমন প্রভাব পড়েনি। তারা সকলে রূপার পাইকারি বাজার সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রাম ও ঢাকার তাঁতিবাজার থেকে রূপা ক্রয় করে গহনা তৈরির পর সরবরাহ করেন। রূপা ব্যবসায় সফল সুশীল দাস, রবীন্দ্রনাথ, আবদুল বাতেন, জাহাঙ্গীর আলম,বাবু লাল দাস, পরিতোষ সরকার, সাধু সরকারসহ ভাকুর্তার অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। তাদের কারও কারও অধীনে ৫/১০ জন কর্মী কাজ করেন। ব্যবসার সফলতায় কেউ কেউ জমি কিনে পাকা বাড়িও নির্মাণ করেছেনবলে জানালেন।

 

/এনএ/