আশি’র দশক হতে শুরু হওয়া ঐতিহ্যের এই যাত্রাকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ‘‘মঙ্গলশোভাযাত্রা’’ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা বা ইনট্যানজিবল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার কারণ হল এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।
প্রাণের এ উৎসবকে সামনে রেখে চলছে ব্যাপক প্রস্ততি। চারুকলার শিক্ষার্থীরা এখন ব্যস্ত নানা শিল্পকর্মে। কেউ বানাচ্ছে মাটির তৈরি অশুভ শক্তির প্রতীকী মুখোশ, কেউ কাগজ কেটে তৈরি করছে পেঁচার প্রতিকৃতি, কেউ বানাচ্ছেন হাতি আর কেউ করছেন তাতে রং। আবার কেউ কেউ চারুকলার খোলা জায়গায় কাঠের বৃহৎ প্রতিকৃতির কাজে লেগে আছেন।
এবারের শোভাযাত্রার কাজ করছে চারুকলার ১৮ এবং ১৯তম ব্যাচ। দুই ব্যাচেরই শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক এবং সিনিয়র শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা ও উপদেশ অনুযায়ী কাজ করছেন। ১৯তম ব্যাচের মুক্তা খানের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের কাজ মূলত শোভাযাত্রা পালন করেই শেষ হবে। কাগজ দিয়ে হাতে ধরার মত এবং ঝুলানোর মত বিভিন্ন প্রতিকৃতি বানাচ্ছেন তারা।
‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই বন্দনাকে ঘিরে এবারের আয়োজন। একদিকে আনন্দ উদযাপন এবং একই সাথে সকলের কাছে বার্তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে এই প্রতিবাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান মঙ্গল শোভাযাত্রার অন্যতম উদ্যোক্তা এবং চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, “ইউনেস্কোর স্বীকৃতি সকলের অর্জন, তাই গত ২৭ বছরে এর সাথে যারা জড়িত সকলকে নিয়ে এবারের শোভাযাত্রা আয়োজনের চেষ্টা করছি।”
চারুকলার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গল শোভাযাত্রার সরকারি বাধ্যবাধকতাকে সাধুবাদ জানিয়ে নিসার হোসেন বলেন, “আমি ব্যাক্তিগতভাবে চাইবো যেটা ভালো কাজ সেটা সবাই করুক, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা করতে পারলে আমরা অবশ্যই চাইবো অন্যরাও করুক। আমরা শুরু থেকেই চাইছিলাম এইটা বিভিন্ন জেলায় হোক, গোটা দেশে হোক। বাইরে এখন অনেক দেশেই হচ্ছে। আমাদের দেখে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার শোভাযাত্রা করবে। আমাদের এখান থেকে তিনজন শিল্পীও যাচ্ছেন তাদের সাহায্য করতে। এটা এখন একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। সুতরাং সবারই করা উচিত বলে আমি মনে করি।”
/এফএএন/