সিলেটে ঘোরাঘুরির আরও এক প্রস্থ

india Dauke bazar 4সিলেটে ঘোরার জায়গার অভাব নেই। বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, জাফলং ছাড়াও রয়েছে রাতারগুল, লালাখাল, সীমান্তবর্তী তামাবিল, ডাউকি বাজার, জৈন্তা রাজবাড়িসহ অনেক দর্শনীয় স্থান। প্রতিবছর ঈদে ও অন্যান্য ছুটির সময় এসব এলাকায় পর্যটকদের ঢল নামে।

রাতারগুল: সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। ভরা বর্ষায় মাথার ওপর সূর্য দেখা দিলে ঈষৎ ছায়া জলে এক অপূর্ব রূপ ধারণ করে রাতারগুল। এখানে ঘন গাছের কালো কালো ডালপালায় সবুজ পত্র-পল্লব ভেদ করে কদাচিত সূর্যের স্পর্শ পাওয়া যায়।  কাঁচের মতো মসৃণ নিথর জলে গাছের ডালপালার প্রতিবিম্ব এক অদ্ভূত দৃশ্যের অবতরণা করে। তখন হঠাৎ কোনও বন্যপ্রাণী মেছোবাঘ, অজগর, কাঠবিড়ালি, বানর, বনবিড়াল, বেজি বা শিয়াল পাতার ছায়ায় জলে উঁকি দেয়। জালিবেত, কদম, হিজল, মূর্তাসহ নানা জাতের গাছে সমৃদ্ধ এই ফরেস্ট। রাতারগুলে দেখতে পাবেন ঘুঘু, চড়ই, পানকৌড়ি, চিল, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, চিল, বালি হাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখিও দেখতে পাবেন গাছে গাছে।

লালাখাল: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় স্বচ্ছ নীল পানির নদী ‘লালাখাল’। প্রকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করার জন্য স্থানটি বেশ উপযোগী। পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগান ও নানা জাতের বৃক্ষের সমাহার লালাখাল জুড়ে। লালাখালে ঘুরতে গিয়ে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচেই লালাখালের অবস্থান। চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন এই নদী বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। লালাখালের চারপাশে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তটা আরো অবিস্মরণীয়। ওপরে আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত সূর্য ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে।  এসব দেখলে মনে হয়, পাহাড় থেকে তিরতির সন্ধ্যা নেমে আসছে। ধীরে ধীরে গোধূলিকেও আঁধার ঢেকে দেয়।

হযরতশাহজালাল (রহ.) হযরতশাহপরাণ (রহ.) এরমাজার : সুদূর ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন সাধক পুরুষ হযরত শাহজালাল (রহ.)। দীর্ঘদিন সিলেটে বিভিন্ন মানুষের মাঝে ৩৬০ জন আউলিয়াসহ ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক সিলেটে আসেন তার মাজার জিয়ারতে। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর ব্যবহৃত কতগুলো মূল্যবান পবিত্র দ্রব্যও মাজারের সন্নিকটে অতীব যত্মের সঙ্গে সংরক্ষিত আছে আজও।

তামাবিল : তামাবিল সিলেট শহরের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার উত্তরে সিলেট-শিলং (ভারত) যাতায়াত পথের প্রান্তসীমায় চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে অবস্থিত। মনোমুগ্ধকর পর্বতের দৃশ্য দেখা যায়। প্রতিদিন ভারত থেকে অসংখ্য ট্রাক স্থলপথে এই বন্দরে কয়লা নিয়ে আগমনের কারণে বাংলাদেশ বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। এছাড়া এখানকার স্থলপথেও অনেক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসেন।

ঈদগাহ : সিলেট শহরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে একটি ছোট টিলার উপরে সিলেটের শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম শাহী ঈদগাহের একটি। দৃষ্টিনন্দন, মনোমুগ্ধকর, কারুকার্যময় এই শাহী ঈদগাহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। বিভিন্ন সময় এই শাহী ঈদগাহ ময়দানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখে গেছেন কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলাসহ উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিকরা।

sylhet pic ratargul 3

জৈন্তারাজবাড়ি: একটি সমৃদ্ধ, ঐতিহ্যবাহী জনপদ জৈন্তারাজ্য এক সময় ছিল প্রাচীন নারী রাজ্য। প্রবাদ আছে পান, পাতা আর নারী এই তিন নিয়েই সিলেটের জৈন্তাপুর। এখানকার রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ থাকলেও ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রিয় পর্যটকরা ঐতিহাসিক এ স্থানে ঘুরতে বেশ পছন্দ করেন।  এখানে বর্তমানে দেখার মতো অবশিষ্ট আছে শিবপূজার জন্য নির্মিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, রাজ্যের সভ্যগণ যে বিরাট পাথরে বসতেন সেসব পাথর খণ্ড যার নাম মেগালিথ। এছাড়া অক্ষত অবস্থায় আছে বধ্যভূমিও। এখানেই অবাধ্যদের হত্যা করা হতো।

পাথররাজ্য ভোলাগঞ্জ: পাথর ছুঁয়ে নামছে পাহাড়ের স্বচ্ছ জল, সেই জলে বাসা বেধেছে সাদা পাথর। এর সাথে আছে নীল আকাশ আর পাহাড়ের বুকে কালো মেঘের আনাগোনা। যাত্রা পথেই চোখে পড়বে বালির পাহাড় আর সারি নৌকা। যেখানে পাথর আহরনে কর্মব্যস্ত মানুষ। এমন সব নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভ্রুমণ পিপাসুদের যেতে হবে, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে।

/এফএএন/