বিনোদনের জন্য বরিশালে কীর্তনখোলাই ভরসা

Barisal photo- Recreation centers crowded with people

 

ঈদের ছুটিতে সময় কাটাতে বরিশাল নগরবাসীসহ নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষেরা বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছেন নদীর তীর, মুক্ত বাতাসের সু-বিশাল পুকুরের পাড়, গাছ-পালা-তরু-লতার বাগ-বাগিচা, নদ-নদীর উপর নির্মিত সেতু ।

গত দুইবছর ধরে ঈদের সময় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রাকৃতিক বিনোদনের খোঁজে বরিশাল নগরীর কীর্তনখোলা নদীর তীরে ছুটে আসেন। ফলে শীত, গ্রীস্ম, বর্ষা কিংবা শরত, সব ঋতুতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত অবধি এখন ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারনায় মুখরিত কীর্তনখোলা নদীর তীরের দেড় কিলোমিটার এলাকা।

দিনের আলোতে প্রাকৃতিক দৃশ্যের নৈসর্গিক দৃশ্যের পাশাপাশি বয়ে চলা কীর্তনখোলা নদী বিনোদন প্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করে তুলছে।

জলরাশির ঢেউ আর শান্তির সুবাতাস ভরা কীর্তনখোলার নৈসর্গিক রূপে মানুষের টান থাকে সর্বক্ষণ।

সারাদিন হৈ চৈ, আনন্দে মাতামাতি, দর্শনার্থীদের বাড়তি বিনোদন হিসেবে নৌকা-ট্রলার এবং সি-বোট রয়েছে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য।

নদীর মাঝামাঝি কিংবা এপার-ওপার সংক্ষিপ্ত ভ্রমণের জন্য নৌকায় উঠে থাকেন দর্শনার্থীরা।

একটু দূরবর্তী দপদপিয়া সেতু, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বেলতলা ফেরিঘাটের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য আগ্রহী দর্শনার্থীরা ট্রলারে (ইঞ্জিন চালিত নৌকা) ভ্রমণ করে থাকেন।

দিনের আলো শেষে সন্ধ্যার পরে নদী আর চাঁদের জ্যোস্নার সৌন্দর্য উপভোগ করেন শত শত মানুষ। কেউ কেউ চাঁদের মায়াবী আলোতে গভীর রাত পর্যন্ত উপভোগ করেন নয়নাভিরাম এ সৌন্দর্য।

কীর্তনখোলা নদীর তীরের মুক্তিযোদ্ধা পার্কে প্রবেশের পর নতুন বেড়িবাঁধের ওপর হাঁটতে গিয়ে যে কোন ভ্রমন পিপাসু মুগ্ধ হন। অনেকে নৌকা ভ্রমণও করেন।

নদীর ধার ঘেষে নির্মানাধীন শহর রক্ষা বাঁধের ওয়াকওয়ের সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদন পিপাসুরা হেঁটে কীর্তনখোলার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

কীর্তনখোলা নদীর তীর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যও এখন জমে উঠেছে। সারাদিন মানুষের আনাগোনায় মুখরিত নদী পারে হাল্কা সব ধরনের খাবারের আয়োজন রয়েছে। কীর্তনখোলার তীরে চা-কফি কিংবা স্ন্যাকস সবই মেলে এখন হাতের কাছে। সেই সাথে মুক্তিযোদ্ধা পার্কে বসে অনায়াসে নদীর সৌন্দর্য অবলোকন করা যায়।

সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, কীর্তনখোলা নদীর তীরবর্তী শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পটি বেলতলা ফেরিঘাট থেকে দপদপিয়া পর্যন্ত সম্পন্ন করার পর এ নদীর সৌন্দর্য আরও বেশি মানুষ উপভোগের সুযোগ পাবেন। ইতোমধ্যে দেড় কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার পর ওই বাঁধ ‘ওয়াকওয়ে’ হিসেবে দর্শনার্থীরা ব্যবহার করে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।

বিভাগীয় নগরী বরিশালের পাশাপাশি প্রত্যন্ত উপজেলার গ্রামীণ এলাকাও ঈদুল ফিতরের ছুটিতে প্রকৃতির খোঁজে শহরের কোলাহল ছেড়ে আসা দর্শণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে মুখর ছিলো।

বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আগৈলঝাড়ার পয়সারহাট নদীর উপর নির্মিত পয়সারহাট সেতুও হয়ে উঠেছে ভ্রমন-পিয়াসীদের জন্যে আরেক বিনোদন কেন্দ্র। যানবাহনের ভীড়ের চেয়ে এ সেতুতে পায়ে হাঁটা পথিকের ভিড় বেশি।

গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় এমনই আরেক বিনোদন কেন্দ্র দেওপাড়া গ্রামের শাহী ৯৯ পার্ক। গৌরনদী পৌর শহরের বাইরে এ বিনোদন কেন্দ্রে প্রতিদিন ১০-১৫ হাজার ভ্রমনপিপাসু লোকের সমাগম ঘটছে।

এখানে গৌরনদী পৌর শহরসহ বিভিন্ন উপজেলার ভ্রমনপিপাসুরা স্ব-পরিবারে ছুটে আসেন প্রকৃতির ছোয়া পেতে। বাদ পড়েননি প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

২০১২ সালে দেশের শাহী ৯৯ জর্দ্দা কোম্পানির স্বত্তাধিকারী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী তাঁতী লীগের ঢাকা মহানগরের (উত্তর) দক্ষিণখান থানার সাবেক সভাপতি শামীম আহমেদ তার নিজস্ব উদ্যোগে তার মায়ের মায়ের জম্মস্থান গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামে শাহী ৯৯ পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।Barisal photo- Recreation centers crowded with people

দেশ-বিদেশ ঘুরে তিনি অসংখ্য স্ট্যাচু সংগ্রহ করে পার্কে স্থাপন করেছেন। এ পার্কে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও লতার। পার্কের মধ্যে ১৪শ’ প্রজাতির গাছপালা ও লতা রোপন করা হয়েছে।

অপূর্ব সব নৈসর্গিক দৃশ্যে ঘেরা বিনোদনমূলক শাহী ৯৯ পার্কে ঈদ ছাড়াও সবার জন্য সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উন্মুক্ত এ পার্কে প্রতিদিন দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় থাকে।

দর্শনার্থী তপন বেপারী, তৌফিক বেপারী, তামিম সরদার জানান, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য গৌর নদীসহ পাশ্ববর্তী  বিভিন্ন উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আজও কোন পার্ক কিংবা বিনোদন স্পট গড়ে ওঠেনি।

দর্শনার্থীরা জানায়, দেশ-বিদেশের ১৪শ’ প্রজাতের গাছপালা ও লতা, সু-বিশাল পুকুরের চারিপার্শ্বে বিভিন্ন প্রজাতের ফুলগাছ ছাড়াও কৃত্রিম পশু-পাখি যেমন-কুমির, জিরাফ, বক, গরু, উট পাখি, কচ্ছপ, খরগোশ, পেঙ্গুইন, ভৌতিক মানুষের কঙ্কাল, সুপারম্যান, ফাইটারম্যান, ফুলসহ বিনোদনের অসংখ্য স্ট্যাচু দিয়ে প্রায় পাঁচ একর জমিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির ন্যায় সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজে।

/এফএএন/