রহস্যে ঘেরা সবুজ পাহাড়ের সংযোগস্থলে ছোট্ট, সুন্দর একটি ব্রিজ। ব্রিজের ঠিক পেছনেই আকাশ সমান পাহাড় থেকে প্রবল উচ্ছ্বাসে নেমে আসছে ধবধবে সাদা পানির স্রোতধারা। দূর থেকে দেখে মনে হয় কেউ যেন সাদা চাদর বিছিয়ে রেখেছে! প্রথমবার সিলেট সীমান্তে দাঁড়িয়ে এভাবেই দেখেছিলাম পান্তুমাই ঝরনাকে। অসম্ভব সুন্দর সেই ঝরনার পানিতেই পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও এক ধরনের হাহাকার জুড়ে ছিল দৃষ্টিতে। কারণ এই ঝরনাটি বাংলাদেশের নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয়ে এর উৎপত্তিস্থল। ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা এই ঝরনাটি তার অপরূপ সৌন্দর্য নিয়ে সেদিন দাঁড়িয়েছিল তুমুল আফসোসের কারণ হয়ে। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পান্তুমাই গ্রামে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভেবেছিলাম, কবে ছুঁতে পারবো পান্তুমাই?
অবশেষে সেই ইচ্ছাপূরণ হলো খুব চমৎকারভাবেই। ঈদের ছুটিতে হুট করেই ভারতের মেঘালয় ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা হলো। কিন্তু বিপত্তি শুরুতেই। ভিসা অনুযায়ী কেবল বাংলাবান্ধা দিয়েই ভারতে প্রবেশ করার অনুমতি রয়েছে। মেঘালয় যেতে হলে আসাম ঘুরে তারপর যেতে হবে। করতে হবে প্রায় দেড় দিনের জার্নি! কিন্তু মেঘালয় দেখার নেশার কাছে এই কষ্টটুকু নস্যি! ভারতে ঢুকে গাড়ি, বাস, ট্রেন, রিকশা- সবকিছুর জার্নি শেষ করে তবেই এলাম মেঘালয়!
ডাউকি সীমান্তের আশেপাশে প্রচুর দর্শনীয় স্থান রয়েছে। গাছের তৈরি সেতু ‘লিভিং রুট ব্রিজ’, এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রাম মাওলিননংসহ বেশ কিছু ছোটবড় ঝরনা দেখা শেষ করে একদম শেষ বিকেলে আসলাম পান্তুমাই ঝরনা দেখতে। তখন দুপুরের কড়া রোদে লাগতে শুরু করেছে নরম কমলা রং। রিওয়াই-ডাউকি রাস্তায় একদম সীমান্ত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে পান্তুমাই ঝরনা। এখানে অবশ্য পান্তুমাই ঝরনার নাম বড়হিল বা ফটাছড়া।
যেভাবে যাবেন মেঘালয়
এই বর্ষায়ই ঘুরে আসতে পারেন ভারতের মেঘালয় থেকে। ভরা বর্ষায় ঝরনাগুলোর পরিপূর্ণ রূপ উপভোগ করতে পারবেন। ডাউকি দিয়ে ভিসা করিয়ে খুব সহজেই ঢুঁ মেরে আসতে পারেন মেঘালয় থেকে। ভারতে ঢুকেই দেখে ফেলতে পারেন সীমান্তঘেঁষা চমৎকার পান্তুমাই ঝরনা। আবার চাইলে পুরো দিন হাতে নিয়ে শিলং আসতে পারেন ডাউকি সীমান্তের এই ঝরনা দেখতে। একইসঙ্গে বর্ডার ঘেঁষা রাস্তার সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পারবেন।
/এনএ/