পূজার আয়োজন: জমজমাট শাঁখারিবাজার

চারদিকে ঢাকের শব্দ, চণ্ডী পাঠে মুখর ভক্তরা। মহামায়া, জগজ্জননী দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে এসেছেন। চণ্ডী পাঠের মধ্য দিয়ে মহালয়ার পূর্ণ লগ্নে সূচিত হয়েছে দেবীপক্ষের। পঞ্চমীতে  দেবীবোধনের পর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। দেবীর অকালবোধনে তাই  প্রস্তুতির কমতি নেই ভক্তদের মাঝে। বাড়িতে, বাড়িতে খই, মোয়া, নারকেলের নাড়ু বানানো, মণ্ডপে মণ্ডপে আলোকসজ্জা, সবখানে উৎসবের আমেজ।

শাঁখারিবাজার ১
দুর্গাপূজা  উপলক্ষে জমে উঠেছে পূজার বাজারগুলো। মণ্ডপে দেবীমাতা ও তার সন্তানদের সাজসজ্জার পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে বেড়েছে পূজা আয়োজকদের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। সেই সাথে নিজের ও পরিজনদের পছন্দের পোশাক ও অলংকার কিনতে শেষ মুহূর্তে ছুটছেন কেউ কেউ। কিনছেন পূজা সংশ্লিষ্ট জিনিসপত্র। আর পূজার এইসব কেনাকাটার সবচেয়ে বড় বাজার পুরাতন ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাঁখারিবাজারে নেমেছে মানুষের ঢল। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলছে বিকিকিনি, ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ক্রেতা বিক্রেতারা। পূজার প্রতিমা ও মণ্ডপ সাজানোর উপকরণ কিনতে এখানে আসছেন বেশিরভাগ  ক্রেতা। কিনছেন প্রতিমার শাড়ি ও অন্যান্য পোশাক। কারুকাজ খচিত মুকুট, মালা, চুল, গদা, চুড়ি, বাজু, কাগজের নকশা, ময়ূর পেখম, আবির, রঙিন কাগজসহ মণ্ডপ সাজানোর সব উপকরণ। পূজার সব উপকরণ এক জায়গায় পেতে ঢাকাসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলো থেকে ক্রেতারা এখানে আসছেন, কিনছেন পছন্দের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কেউ এসেছেন আরও দূর থেকে।

শাঁখারিবাজার ২
পাবনা থেকে  শ্যামল নাথ এসেছেন মন্দির কমিটির অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে কেনাকাটা করতে। তিনি জানালেন, শাঁখারিবাজার থেকে কেনাকাটা তাদের  ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। আর এখানে একসাথে  সবকিছুই পাওয়া যায় এবং দামও বেশ সাশ্রয়ী। শাঁখারিবাজারের প্রায় সবগুলো দোকানে সমান ভীড়। বেচাকেনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী খুশি এবারের পূজার বাজারে। বিপণি বিতান সাঝঘর এর বরুন দত্ত বলেন, সারাবছর এখানে টুকটাক বেচাকেনা চললেও শারদীয় উৎসবের এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এবারের বিক্রি গতবছরের চেয়েও বেশি। তবে বন্যার জন্য ঢাকার বাইরে থেকে একটু কম ক্রেতা এসেছেন। নাহলে আরও বেশি বিক্রি হত।  তিনি জানালেন, এবছরে বেনারসি শাড়ি বেশি কিনছেন ক্রেতারা। ৪০০-৫০০ টাকা দামের শাড়ির বিক্রি বেশি হয়েছে গত কয়েকদিনে। দেবদেবীর গহনার বিকিকিনিও বেশ ভালো।

উৎসবের রংয়ে দেবীকে বরণে সিঁদুর, আলতা, টিপের কেনাকাটাও বেড়েছে এখানে। দোকান ঘুরে ঘুরে ক্রেতারা কিনছেন এসব, সাথে কেউ কেউ কিনছেন বাচ্চাদের খেলনাও। অনেকে এসেছেন মায়ের অঞ্জলি ও পূজার অর্ঘ্য দেওয়ার আগরবাতি, ঘট, প্রদীপ, থালাসহ অন্যান্য উপকরণ কিনতে। ব্যস্ততার কারণে আসার সুযোগ কম হয় বলে একই সাথে অনেকেই এখান থেকে কিনছেন অন্যান্য দেবদেবীর প্রতিমাও। দোকানী শ্যামল নাথ জানালেন, রাঁধা কৃষ্ণ ও শিব এর প্রতিমা বেশি কিনছেন ভক্তরা। বাসাবাড়ির জন্য এগুলো নিচ্ছেন তারা। ভিড় বেড়েছে এখানকার শাঁখার দোকানগুলোতেও। সারা বছর শাঁখা পরলেও দুর্গাপূজার সময় নতুন শাঁখা চাই। কারগর বিমল বলেন, চিকন শাঁখার দিকে চাহিদা বেশি এ বছর।