রোগের নাম ‘শীতকালীন বিষণ্নতা’

winter depreesion
সিজনাল এফেক্টিভ ডিজওর্ডার বা এসএডি হচ্ছে এমন এক প্রকার বিষণ্নতা যা ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত৷ এই অপ্রাকৃত রোগটি রোগীকে বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে আক্রমণ করে আবার নির্দিষ্ট সময়ে আরোগ্যও লাভ হয়।

সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজওর্ডার বা এসএডি কে ‘উইন্টার ডিপ্রেশন’ বা ‘শীতকালীন বিষন্নতা’ ও বলা হয়। কারণ এই রোগটির প্রকোপ শীতকালেই বেশি দেখা যায়।

রোগের সম্ভাব্য কারণসমূহ

উইন্টার ডিপ্রেশনের প্রকৃত কারণ এখনও অজ্ঞাত। তবে কিছু কিছু বিষয়কে এই রোগের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে ভাবা হয়।

  • অপর্যাপ্ত সূর্যালোক: আমাদের শরীরে সূর্যালোকের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে৷ অপর্যাপ্ত সূর্যালোক আমাদের জৈবিক ঘড়ির ছন্দকে (সার্কাডিয়ান রিদম) ব্যাহত করে। জৈবিক ঘড়ি হচ্ছে জীবের দেহঘড়ির কিছু প্রক্রিয়া ঘড়ির তালে চলে। যেমন কিছু হরমোন আছে রাতে ঘুমের মধ্যে নিঃসরণ হয়। এই সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ঘড়ির ছন্দ ব্যাহত হলে শীতকালীন বিষণ্নতা হতে পারে।
  • অসঙ্গতিপূর্ণ সেরোটোনিনের মাত্রা: অপর্যাপ্ত সূর্যালোক সেরোটোনিনের স্বাভাবিক মাত্রাকে ব্যাহত করে। সেরোটোনিন হচ্ছে এক ধরনের বায়োকেমিক্যাল যা মানুষের ক্ষেত্রে ভাল থাকার অনুভূতি প্রদান করে। তাই একে অনেকসময় সুখানুভূতির হরমোন বলা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই অসঙ্গতিপূর্ণ সেরোটোনিনের মাত্রা উইন্টার ডিপ্রেশন বা শীতকালীন বিষণ্নতার কারণ হতে পারে।
  • মেলাটোনিনের মাত্রা: মেলাটোনিন হচ্ছে এক ধরনের হরমোন যা আমাদের ঘুম এবং জাগরণ নিয়ন্ত্রণ করে। ঋতু পরিবর্তনের সময় মেলাটোনিনের স্বাভাবিক মাত্রা ব্যাহত হতে পারে যা পক্ষান্তরে উইন্টার ডিপ্রেশনের দিকে ধাবিত করতে পারে।

এই রোগের লক্ষণ

এই রোগের লক্ষণ হচ্ছে বিষণ্নতা, মনমরা ভাব, আশাহত হওয়া, নিজেকে মূল্যহীন মনে হওয়া, দুর্বলতা, যে কাজটি একসময় খুব উপভোগ্য ছিল সেটিতেও আনন্দ না পাওয়া, কম অথবা মাত্রাতিরিক্ত ঘুম, খাবারে রুচি কমে যাওয়া, ওজনহীনতা, অলসতা অথবা উত্তেজিত ও বিচলিত থাকা, অতিমাত্রায় মৃত্যুচিন্তা অথবা আত্মহত্যাপ্রবণতা, রোষপ্রবণতা, ক্লান্তি, হাত-পা ভারি মনে হওয়া ইত্যাদি।

রোগ দূর করার উপায়

  • কানাডার ভ্যানকুভারে অবস্থিত ইউবিসি হাসপাতালের এক গবেষণায় দেখা গেছে সূর্যালোক বা সানলাইট থেরাপি ঋতুকালীন বিষণ্নতায় খুবই উপকারী।
  • কানাডার মন্ট্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চর্চায় দেখা গেছে হাস্যকর ছায়াছবি দেখা,বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করা বা এধরনের অন্যান্য মজাদার কর্মকাণ্ড মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। আগেই বলা হয়েছে মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত সেরোটোনিনের মাত্রা শীতকালীন বিষণ্নতার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, সুতরাং মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি এই রোগ উপশমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই হাসুন প্রাণ খুলে।
  • মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। একাকিত্ব এই রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

এই রোগের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরি।