প্রাচীন শহর কলকাতায়...

“এ সন্ধ্যের শহর আমার/যে রাস্তায় নিয়ন একাকার/...এ রাস্তা বড়ই পুরোনো/রাস্তায় আমার ছেলেবেলা...” এভাবেই অঞ্জন দত্ত তার স্মৃতিময় কলকাতাকে নিয়ে এসেছিলেন গানে। অঞ্জন দত্তের মতো এমন লক্ষ-কোটি স্মৃতির সাক্ষী প্রাচীন শহর কলকাতা। এ শহরের অলিগলিতে এখনও ইতিহাসের গন্ধ লেগে আছে। পুরনো স্থাপনা, ট্রাম, কফি হাউসের পরিবেশ আপনাকে মনে করিয়ে দেবে কৈশোরের কথা। যে কৈশোরে ফেলুদা কিংবা অঞ্জন দত্ত ছাড়া চলতোই না! কিংবা ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ শুনতে শুনতে হয়ে পড়তেন আবেগপ্রবণ।

কফি হাউস
কেবল খুব ভালো করে শহরটি ভ্রমণের জন্যই গিয়েছিলাম কলকাতায়। যদিও সময়ের অভাবে সেটা পারিনি। তবুও শহরের অলিগলি চষে বেড়ানো, মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়া কিংবা স্ট্রিট ফুড চেখে দেখার সুযোগ হারাইনি। সত্যি কথা হচ্ছে, একটি নতুন শহর চেনার আনন্দের কোনও তুলনাই হয় না!

কলকাতার স্ট্রিট ফুড
আমরা উঠেছিলাম কলেজ স্ট্রিটের একটি হোটেলে।  এখান থেকে কফি হাউসে যাওয়া যায় হেঁটেই। সকাল সকাল ঢুঁ মারলাম কফি হাউসে। একজনকে ঠিকানা জিজ্ঞেস করতেই তিনি খুব গর্ব করে জানালেন, এটাই মান্না দে’র কফি হাউস। পুরো কলকাতায় শুধু নয়, সারা বিশ্বেই আর এমনটির দেখা মিলবে না। ভেতরে ঢুকে অবশ্য সেটি মানতেই হলো। দেয়ালে টাঙানো পুরনো সব পেইন্টিং এবং পুরনো দিনের আসবাব আপনাকে মনে করিয়ে দেবে চল্লিশ দশকের কথা, যখন জন্ম হয়েছিল কফি হাউসের। কিছুক্ষণের মধ্যেই খানসামার টুপি পরা ওয়েটার এসে হাজির অর্ডার নেওয়ার জন্য। কফির পাশাপাশি কাটলেট, সিঙ্গারা, অমলেট, স্যান্ডউইচ রয়েছে। সবকিছুর দামই মোটামুটি কম। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে কালজয়ী গানটি গুনগুনিয়ে উঠলাম মনের অজান্তেই ‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...।’

সায়েন্স সিটি
কফি হাউস থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম সায়েন্স সিটি। প্রায় ৫০ একর জমির উপর দাঁড়ানো ঝকঝকে সায়েন্স সিটি ঘুরতে ঘুরতেই কেটে গেল গোটা দিন। বিজ্ঞানকেন্দ্রিক এই বিনোদন উদ্যানে প্রচুর অ্যাক্টিভিটি করার সুযোগ রয়েছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে পারবেন বিজ্ঞান মিউজিয়াম। সন্ধ্যায় বের হয়ে এসে পড়লাম নিউ মার্কেট। সেখানে খাওয়া-দাওয়া ও ঘোরাঘুরি শেষে স্থানীয় একটি সিনেমা হলে দেখে ফেললাম হিন্দি সিনেমা। বেশ কেটেছে দিনটা।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল
পরদিন শ্বেত মার্বেল পাথরের তৈরি মহারাণী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিসৌধ ‘ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’ দেখতে গেলাম। সবুজ ঘাসের উপর দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল এই স্থাপনাটির কারুকাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে সন্দেহ নেই। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ২৫টি গ্যালারির সমন্বয়ে গঠিত। কুইন্স হলের সকল দেয়ালে মহারাণীর ঘোষণা লিপিবদ্ধ। তার স্মৃতি বিজড়িত বিভিন্ন ঘটনার অঙ্কিত চিত্র যেমন- তাঁর সিংহাসনারোহণ,  বিয়ে, তার পুত্র ইত্যাদি দ্বারা গ্যালারি সজ্জিত। রয়েছে রাণীর ব্যবহৃত সামগ্রী।

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে আরও আছে বিভিন্ন সময়ে ভারতবর্ষে আসা বিখ্যাত ব্রিটিশ নাগরিকদের প্রতিকৃতি। রয়েছে  মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিও। এছাড়াও আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের স্মৃতিবাহী বিভিন্ন নিদর্শনা যেমন- রাণী মেরী, পঞ্চম জর্জ ও অন্যান্যদের আবক্ষ মূর্তি, ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে দখলকৃত ফরাসি কামান ইত্যাদি।

কলকাতায় বাস ভ্রমণ
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল থেকে বের হয়ে বাসে চড়ে হাওড়া ব্রিজ দেখতে গেলাম। এর নাম রবীন্দ্র সেতু হলেও হাওড়া ব্রিজ নামেই বহুল পরিচিত। হুগলি নদীর উপর অবস্থিত সেতুটি কলকাতা ও হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে। ব্রিজের চমৎকার নকশা অবাক করবে আপনাকে। উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন বলা হয় হাওড়া ব্রিজকে। এই ব্রিজের নিচে কোনও পিলার নেই! ঝুলন্ত ব্রিজটির পুরো ভারসাম্য রক্ষা করে এর উপরের ভারি পিলারগুলো। অন্যতম শক্তিশালী ব্রিজ বলা হয় একে।

হাওড়া ব্রিজ

জেনে নিন

  • কলকাতায় শপিং করতে চাইলে নিউ মার্কেট হতে পারে সেরা অপশন। এখানে মোটামুটি সব কিছুই মিলবে। তবে প্রচুর দামাদামি করতে হবে। গড়িয়াহাট, দক্ষিণাপন, বর্দান মার্কেট, হাতিবাগান কিংবা বড় বাজার চলে যেতে পারেন অনেক সময় নিয়ে শপিং করতে চাইলে। ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে চাইলে চলে যান কোয়েস্ট মলে।
  • কম খরচে ঘুরতে চাইলে বাস, মেট্রো রেল অথবা ট্রাম ব্যবহার করতে পারেন। কলকাতার রাস্তায় বাস-ট্রাম খুবই অ্যাভেইলেবল। ট্রামে চড়ার অভিজ্ঞতাটাও মন্দ লাগবে না।
  • কলকাতায় খুবই সস্তায় মেলে হাজারো স্ট্রিট ফুড, খেতেও বেশ সুস্বাদু। মোমো, পানি পুরি, ফালুদা, ছোলা বাটোরাসহ মজার মজার সব ট্রিট ফুড চেখে দেখতে পারেন। তবে খোলা জায়গায় তৈরি এসব খাবারে কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যায়!  
  • আকাশপথে, রেলপথে কিংবা সড়কপথে যাওয়া যায় কলকাতা। ঝামেলা ছাড়া যেতে চাইলে আকাশপথের বিকল্প নেই।