রাত ১০টায় অফিস থেকে বের হয়ে দেখি আকাশে বিশাল একটা চাঁদ। সারি সারি দালানের উপর চাঁদটাকে কেমন যেন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। সাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখবো- সিদ্ধান্তটা ঠিক তখনই নেওয়া।
এরপর তড়িঘড়ি করে বিমানের টিকিট করা। পরদিন দুপুরে বিমানে চেপে মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যেই লোনা জলের কাছাকাছি চলে যাওয়া। উঠলাম কলাতলী বিচের একদম সামনেই ‘সমুদ্র বিলাস’ হোটেলে। ব্যাকপ্যাক হোটেলে রেখেই ভৌ দৌড় সমুদ্রের কাছে! এরপর খুব প্রিয় কিছু সময় কাটানো। ছোট ছোট পায়ে হেঁটে চলা সাগর ঘেঁষে, হেডফোনে প্রিয় গান শোনা।
সাগরের সঙ্গে সময় কাটাতে কাটাতে খাওয়ার কথা ভুলেই গেছি! মনে পড়লো সারাদিন তেমন কিছুই খাওয়া হয়নি। অটো নিয়ে ছুটলাম পৌউষী রেস্তোরাঁয় ভাত-ভর্তা আর কাস্টার্ড খেতে। কক্সবাজার এসে পৌউষীর ভর্তা খাবো না সেটা তো হতেই পারে না!
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বের হয়ে দেখি সন্ধ্যাবাতি জ্বলে গেছে শহরজুড়ে। ফের সাগর পানে ছুটলাম। লোকজন খুব একটা নেই বিচে। হয়তো বর্ষাকাল বলেই পর্যটকদের আনাগোনা কম।
অন্ধকারের সমুদ্র যেন একদম অচেনা। শোঁ শোঁ গর্জন কেমন একটা ভয় ধরিয়ে দেয়। মনে হয় ঘাপটি মেরে থাকা কোনও দৈত্য বুঝি ছুটে আসছে উন্মাতাল হয়ে। আবার একই সঙ্গে কোথায় যেন ভালোলাগার পরশ বুলিয়ে দিয়ে যায় আঁধারে ঢাকা সাগরের গান। হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলাম, কিন্তু চাঁদের তো দেখা পাই না! নিকষ আঁধারে ঢেকে আছে চারপাশ। আকাশে থাকা কালো মেঘের আড়ালেই বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছে পূর্ণিমার চাঁদ। সমুদ্রের পাড়ে রাখা বেঞ্চিতে বসে পড়লাম ক্লান্ত হয়ে। কখন যে চোখ লেগে এসেছে টের পাইনি। হঠাৎ চোখ খুলেই চমকে উঠলাম। কোথায় যেন বিশাল একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। হুট করেই বদলে গেছে পৃথিবী। আকাশে তাকিয়ে দেখি বিশাল একটা চাঁদ। চাঁদের আলোয় ভাসছে সমুদ্র।
হঠাৎ করেই হারিয়ে গেল চাঁদ, মেঘের আড়ালে। গা কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস বইতে শুরু করলো। বড় বড় ফোঁটায় পড়তে শুরু করলো বৃষ্টি। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস আর বৃষ্টির তোড়ে উঠে পড়লাম আমিও। বৃষ্টি শুরু হয়েছে বেশ জোরেশোরেই। দৌড়ে বিচের পাশের বার্মিজ মার্কেটে ঢুকলাম। রঙিন শামুক-ঝিনুকের ছড়াছড়ি। চমৎকার দেখতে। ছোটখাট কিছু জিনিষ কিনে ফেললাম উপহার হিসেবে। বৃষ্টির ধরার নামই নেই। অগত্যা ফিরে আসতে হলো হোটেলে।
পরদিন সারাদিনই ছিলাম সাগর পাড়ে। সমুদ্রের জলে ঝাঁপিয়ে পড়েছি ইচ্ছে মতো, সাগর পাড়ে বসে বালু দিয়ে বানিয়েছি প্রাসাদ! ঘণ্টার পর ঘণ্টা হা করে তাকিয়ে থেকেছি আকাশের দিকে। রোদের তীব্রতায় যেমন চোখ জ্বালা করেনি একটিবারও, তেমনি বিব্রত করেনি বৃষ্টির বাড়াবাড়ি। মাত্র দেড় দিনের মধ্যেই অনেক রুপের সাগর দেখে ফেলেছি। কখনও রৌদ্র ঝলমলে সাগর, কখনও ধূসর মেঘলা। কখনও রিমঝিম বৃষ্টির উচ্ছ্বাস, কখনও জোছনা মাখা সমুদ্রের মুগ্ধতা।
বর্ষার এই সময়টায় সাগরের রূপটা একটু বেশিই খোলে যেন। অনেকে মনে করেন সমুদ্রে আসার জন্য শীতকাল সেরা। তবে আমার মনে হয় বর্ষাকালের চাইতে আদর্শ সময় আর হয় না সাগর দেখার জন্য। আপনি যদি সমুদ্রে বৃষ্টি দেখে না থাকেন, তবে কিন্তু জীবনে অনেক কিছুই মিস করে ফেলেছেন!