‘দুই বছর ধরে আমার হতাশা কাজ করছে’

প্রশ্ন: দুই বছর ধরে আমার হতাশা কাজ করছে। করণীয় কী?

উত্তর: আপনার হতাশা যদি সুনির্দিষ্ট কোনও কারণে শুরু হয়ে থাকে তবে তা সেকেন্ডারি ডিপ্রেশন। আর যদি তা কোনও কারণ ছাড়াই শুরু হয়, তাহলে সেটা প্রাইমারি ডিপ্রেশন। প্রাইমারি ডিপ্রেশন সাধারণত মধ্য বয়সের পরে শুরু হয়। সেকেন্ডারি ডিপ্রেশন যে কোনো বয়সেই শুরু হতে পারে। আপনার হতাশার লক্ষণ বা উপসর্গ এবং মাত্রা সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। লক্ষণগুলো হচ্ছে: অন্তত দুই সপ্তাহ ধরে অধিকাংশ দিন, দিনের অধিকাংশ সময় মন খারাপ থাকা, আনন্দের কাজগুলো ভালো না লাগা, ওজন কমে বা বেড়ে যাওয়া, চিন্তা ও কাজের গতি কমে যাওয়া, ক্লান্তি, নিজেকে হীন বা অপরাধী মনে করা, মনযোগের অভাব, মৃত্যুচিন্তা বা আত্মহত্যার চিন্তা ইত্যাদি। আপনার হতাশার মাত্রা কম হলে সেটাকে ডিপ্রেশন না বলে ডিসথাইম্য়া বলা যেতে পারে। অন্তর্মুখী এবং আবেগপ্রবণ স্বভাবের মানুষ ডিসথাইম্য়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। হতাশা থেকে বের হতে হলে আগে নিজের হতাশা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। হতাশার মাত্রা কম হলে আপনার কাউন্সেলিং প্রয়োজন। আপনার কাউন্সেলিংয়ে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব দিতে হবে- অপরাধবোধ বা গুনাহের চিন্তাকে গঠনমূলকভাবে মোকাবিলা করা, জীবনের স্বাভাবিক ছন্দের সাথে একাত্ম হওয়া, কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া প্রকাশের চর্চা করা ইত্যাদি। আর হতাশার মাত্রা বেশি হলে বা আত্মহত্যার চিন্তা বা ইচ্ছা তৈরি হলে অনতিবিলম্বে আপনাকে মনোচিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

প্রশ্ন: আমি পর পর কয়েকবার চাকরির পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছি। এই কারণে আমার পরিবারের কেউ আমাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখে না। আমাকে বিভিন্ন সময় যেকোনো কাজে বিনা কারণে কটু কথা শুনতে হয়। এখন আমি না পারছি আত্মহত্যা করতে, আর না পারছি পরিবারের কাছ থেকে পালিয়ে দূরে সরে যেতে। এখন আমি কী করবো বুঝতে পারছি না।

উত্তর: পরিবারের মধ্যেই যেহেতু আপনাকে থাকতে হচ্ছে, সেহেতু এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনাকে কিছুটা কৌশলী হতে হবে। পরিবারের সদস্যদের কটাক্ষ বা কটু কথার বিপরীতে প্রতিক্রিয়াশীল হবেন না, রেগে যাবেন না বা কোনও কটু কথা বলবেন না। আবার তাদেরকে এড়িয়েও চলবেন না। এড়িয়ে চললে তারা আপনার প্রতি আরও ক্ষুদ্ধ হবেন। উনাদের কথাগুলো আপনার অন্তরে তীরের ফলার মতো বিদ্ধ হচ্ছে, সেগুলোকে আপনার ঠান্ডা মাথায় নীরবে হজম করতে হবে। এটা আপনার জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ। আপনার সহনশীলতা এবং উদ্যম বাড়াতে তারা আপনাকে সাহায্য করবে। বিভিন্ন মোটিভেশনাল ভিডিও দেখুন এবং বই পড়ুন। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট শরীরে রোদ লাগান। শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ করুন। ব্রিদিং এক্সারসাইজ, মাইন্ডফুল মেডিটেশন, মেনিফেস্ট মেডিটেশন করুন। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে শরীক হোন। আপনার চাইতে খারাপ অবস্থায় আছে এমন মানুষকে দেখে অনুপ্রাণিত হোন। নিজের জীবনের ছোট ছোট প্রাপ্তির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।