‘প্রেমিকা আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়’

প্রশ্ন: আমার নাম হাসান। বয়স ২৫ বছর। আমি গত ৮-৯ বছর ধরে তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছি। ঘরের বাইরে লোকজনের সংস্পর্শে আসলে আমার বুকের ভেতর চিনচিন করে। কথা বলার সময় কষ্ট হয় ও গলা শুকিয়ে আসে। প্যানিক অ্যাটাক হয় ঘন ঘন। নিচের দাঁতের পাটি আটকে ধরে।

উত্তর: আপনার বর্ণিত অবস্থা সামাজিক আশঙ্কা বা আতঙ্কের (সোশ্যাল অ্যাংজাইটি বা সোশ্যাল ফোবিয়া) কারণে হয়েছে। এই সমস্যা দূর করার জন্য আপনি কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন-

১। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভেতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখনই একটানা কয়েকবার এই রকম করুন।

২। অনেক সময় অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতা বিভিন্ন সামাজিক অবস্থানে আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য সাহায্য করে। পরিচিত মানুষের সাথে কথোপকথনের অনুশীলন করুন! ধীরে ধীরে বিভিন্ন সামাজিক পরিস্থিতিতে অংশ নিন।

৩। ক্ষুদ্র সামাজিক সংলগ্নতা বাড়ানোর মাধ্যমে সামাজিক দক্ষতা শিখুন এবং আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়ান।

৪। পরিস্থিতির সাথে যুক্তিভিত্তিক বিশ্লেষণ করে দেখুন এবং সম্ভাব্য ফলাফল বিবেচনা করুন।

৫। নিজের ইতিবাচক ও নেতিবাচক সকল চিন্তা ও বৈশিষ্ট্যকে সমানভাবে মেনে নিন এবং ভালো দিকগুলোর ওপর মনোনিবেশ করুন।

৬। সবাই ভুল করে। তাই সবার সামনে ভুল হলে স্বীকার করুন এবং নিজেকে দোষারোপ না করে সমর্থন দিন।

৭। যদি এই সমস্যা গুরুতর হয়, তবে একজন মানসিক চিকিৎসকের সাথে দেখা করার পরামর্শ দেওয়া হলো।

প্রশ্ন: আমার নাম রাহাত। বয়স ২৭ বছর। আমার প্রেমিকা আমার চেয়ে ১০ বছরের বড়। এটা নিয়ে সামাজিকভাবে খুব বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমি দিন দিন মনোবল হারিয়ে ফেলছি। মনে হচ্ছে এই সম্পর্ক নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবো না। প্রেমিকা বয়সে বড়, এটা কি আসলেই অনেক বড় সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে?

উত্তর: প্রেমিকা বয়সে বড়, দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা কোনও সমস্যাই নয়। সমস্যা এটাই যে আপনি নিজেকে ছোট মনে করছেন। কিছু পরামর্শ মেনে চললে আপনার উপকার হবে বলে আশা করি-

১। নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে পারলে এবং ভালো-খারাপ সকল বৈশিষ্ট্যসহ মেনে নিতে পারলে একটা ম্যাজিক ঘটবে। আপনি যে সমাজকে নিয়ে এখন ভয় পাচ্ছেন, সেই সমাজই দেখবেন আপনাকে বাহবা দিচ্ছে আপনার সাহসী এবং প্রথাবিরোধী ভূমিকার জন্য।

২। আপনার নিজের মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনি আত্মসহায়তামূলক বই, মনোযোগ বা নিশ্বাসের ব্যয়ামের মাধ্যমে এটি করতে পারেন। যদি প্রয়োজন অনুভব করেন, একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

৩। স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন। যোগা, ধ্যান, দীর্ঘশ্বাস নেওয়া ইত্যাদি পদ্ধতির মাধ্যমে মনোবল বাড়ান।

৪। আপনার প্রেমিকার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। বয়সের পার্থক্য নিয়ে তার ভেতরে কোনও জটিলতা বা লোকলজ্জা কাজ করছে কিনা তা জানার চেষ্টা করুন। আপনার ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে তা আপনার প্রেমিকার মধ্যে সঞ্চালন করুন।

৫। নিজের প্রয়োজনীয় পরিচর্যা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করুন। শ্রান্তি নিন এবং সুস্থ খাবার খান। মেডিটেশন করুন। যথেষ্ট ঘুম নিশ্চিত করুন।

৬। সামাজিক কর্মকাণ্ডে বেশি করে অংশগ্রহণ করুন। বিভিন্ন সেবামূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। দেখবেন আপনার অহেতুক লোকলজ্জা কেটে গেছে।

৭। ধৈয্যশীলতা বজায় রাখুন এবং পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত করুন। দেখবেন সকল অহেতুক লোকলজ্জা থেকে আপনি বের হয়ে আসতে পেরেছেন।

৮। যদি আপনার মনোবলের ঘাটতি বেশি দিন ধরে চলে বা আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর তা দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, বা প্রেমিকার সাথে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাহলে একজন মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন।