প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৪ বছর। আমার বাবা-মায়ের যথেষ্ট টাকা পয়সা থাকার পরেও তারা চান আমি যেন টাকা দিয়ে তাদের চালাই। কারণ তারা আমাকে বড় করেছেন শেষ বয়সে ছেলে তাদের দেখভাল করবে সেজন্য। আমাকে ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে জন্ম দিয়েছেন বাবা-মা। সারাজীবন শুনিয়েছেন আমার জন্য তারা কষ্ট করেছেন, এখন সেটার প্রতিদান হিসেবে চান যেন মাসে মাসে কাড়ি কাড়ি টাকা দিই। আমার অল্প বেতনের চাকরি। স্ত্রী চাকরি করে। তারপরেও সংসার আর সন্তান সামলে খুব কম টাকা হাতে থাকে। বাবা-মা প্রতি মাসে আরও টাকা চান, না দিলে ইমশোনাল ব্ল্যাকমেইল করেন। অথচ তাদের পেনশনের টাকা, বাড়িভাড়া বাবদ পাওয়া টাকা সবই জমে তাদের ব্যাংকে। আমার একজন বোন আছে, সে দেশের বাইরে থাকে। আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছি বাবা-মায়ের এই আচরণে। কী করবো?
উত্তর: বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আপনাকে আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির সীমা অতিক্রম করে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে। আপনাকে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিকে নিজের মতো করে এবং বাবা-মার দৃষ্টিভঙ্গিকে তাদের মতো করে নিরপেক্ষভাবে অনুভব করতে হবে। তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে, প্রত্যেকের কাছেই তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক। এজন্য কাউকেই দোষারোপ করার কিছু নেই; আপনাকেও না, আপনার বাবা-মাকেও না। সেই সাথে আপনাকে আপনার ভালো-মন্দ সকল ধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা, আচার-আচরণ, কাজ-কর্ম নিরংকুশভাবে নিজ সন্তানের মতো আপন করে নিতে হবে। নিজের চরিত্রের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের সাথে যুদ্ধ বন্ধ করে একে আপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মনে করুন। এর সমালোচনা করবেন না, একে পাল্টানোর চেষ্টা করবেন না বা এর জন্য নিজেকে তিরস্কার বা দায়ী মনে করা যাবে না। নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসতে হবে। এরকম করতে পারলে আপনার মন প্রশান্ত হবে ও মনের ক্ষত নিরাময় হতে শুরু করবে।
প্রশ্ন: আমার বয়স ৫০ বছর। আমার জীবনে অনেক বড় একটা আফসোস আছে। আমার ভুলে আমার খুব কাছের আর প্রিয় একজন মারা গেছে। সেটাও অনেক বছর হলো। তাকে যথাসময়ে ডাক্তারের কাছে নিলে সে হয়তো বেঁচে থাকতো। তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল, কিন্তু আমি ভেবেছিলাম এমনি অসুস্থ বোধ করছে। তাই ব্যথার ওষুধ খেয়ে শুয়ে থাকতে বলি। সে ঘুমের মধ্যেই মারা যায়। এরপর থেকে আমি আর স্বাভাবিক হতে পারি না। ওইদিনের কথা মনে হলে কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে যাই। মনে হয় ঠিক সময়ে ডাক্তারের কাছে নিলে সে হয়তো বেঁচে থাকতো। এই গ্লানি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী?
উত্তর: আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কোনও ঘটনার উপরই আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কোনও ব্যাপারে নিজেকে দায়ী করাটা তাই অর্থহীন। ভবিষ্যতে যেমন যেটা হওয়ার সেটাই হবে, অতীতের ক্ষেত্রেও তেমনি যেটা হওয়ার ছিলো সেটাই হয়েছে। সুতরাং আপনি যে কারণে বিবেকের দংশনে ভুগছেন, সেটা অমূলক। এই বিবেকের দংশন থেকে চাইলেই আপনি নিজেকে মুক্ত করতে পারবেন না। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা না করে এটাকে নিবিড়ভাব আত্মস্থ করতে হবে। সুখ ও আনন্দকে আমরা যেমন আলিঙ্গন করি, অবধারিত কষ্ট ও যন্ত্রণাকেও আমাদের তেমনি আলিঙ্গন করতে হবে, ভালোবাসতে হবে। দুঃখকষ্ট থেকে পালানোর কোনও সুযোগ নেই। সুখ এবং দুঃখ, হাসি এবং কান্না, ভালো এবং মন্দ, জীবন এবং মৃত্যু, এরা একে অপরের পরিপূরক। এদের একটিকে বাদ দিলে আরেকটির অস্তিত্ব থাকে না। এসব বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য মিলিয়েই আমরা পরিপূর্ণ মানুষ।