‘আমার স্ত্রীর অতিরিক্ত খরুচে স্বভাব’

প্রশ্ন: আমাদের বিয়ের ৭ বছর চলছে। আমার স্ত্রীর অতিরিক্ত খরুচে স্বভাব। সেও উপার্জন করে, আমিও করি। কিন্তু সে খরচ করতে শুরু করলে হিসাব থাকে না। দোকানে গিয়ে সবচেয়ে  দামি জিনিসটি কিনবে। এমনকি অপ্রয়োজনীয় নানা জিনিস কিনেও ঘর ভর্তি করে ফেলে। এই স্বভাবের কারণে সে বেশ কয়েকবার লোনে পড়েছে। আমাদের সন্তানের বয়স ২ বছর। স্ত্রীর স্বভাবের কারণে ওর ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কায় পড়েছি। কারণ আমরা কোনোভাবেই সঞ্চয় করতে পারছি না। একে তো দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, তার উপর সবসময় বাড়তি খরচ। কীভাবে স্ত্রীর এই স্বভাব দূর করতে পারি? 

উত্তর: 'শপিং স্প্রী' (Shopping Spree), মানুষসহ অন্যান্য প্রজাতির একটি বিবর্তনীয় প্রক্রিয়া যেখানে ভবিষ্যত প্রয়োজনে সঞ্চয় করার প্রবণতা তৈরি হয়। প্রকৃতিগতভাবে মৌমাছি মধু জমা করে, পিঁপড়া খাদ্য সংগ্রহ করে, উদ্ভিদ স্টার্চ-এর মাধ্যমে এবং মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী গ্লাইকোজ ও ফ্যাটের মাধ্যমে শরীরে খাদ্য জমিয়ে রাখে। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া যখন মাত্রারিক্তভাবে বেড়ে যায়, তখনি “কম্পালসিভ হোর্ডিং বিহেভিয়ার” পরিলক্ষিত হয়। আপনার স্ত্রীর “কম্পালসিভ বায়িং”-এর সমস্যা সম্পর্কে উনি নিজে যদি ওয়াকিবহল থাকেন এবং ব্যর্থ সত্ত্বেও পরিত্রাণের পথ খোঁজেন, তাহলে এটা মোকাবিলা করা উনার জন্য তুলনামূলকভাবে সহজ। উনাকে আগে নিজেকে তিরস্কার করা বন্ধ করতে হবে, নিজের ভালো-মন্দ সকল বৈশিষ্ট্যকে আপন করে নিতে হবে। এরপরই উনার ভেতরে ইতিবাচক পরিবর্তন সূচিত হবে। জোর করে অভ্যাস পরিবর্তন করতে চাইলে ব্যর্থতা অনিবার্য। পরিবর্তন করার চেষ্টা বন্ধ করলেই শুধুমাত্র পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে আপনার স্ত্রী যদি উনার অস্বাভাবিক কেনাকাটার স্বভাবকে আদৌ অস্বাভাবিক মনে না করেন, তাহলে উনাকে বোঝাতে পরিবারের সদস্যদেরকে সম্পৃক্ত করুন। এতেও ব্যর্থ্য হলে মনোবিদ বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। 

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। আমি সবসময় এক ধরনের তাড়াহুড়োর মধ্যে থাকি। এমন করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনাতেও পড়েছি। সব কাজে তাড়াহুড়া থাকে আমার। কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে এটা জানলে তো কথাই নেই। আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। ঘাম হতে থাকে। স্বভাব থেকে এই অস্থিরতা দূর করার উপায় কী?

উত্তর: আপনি এক ধরনের অ্যাংজাইটি সমস্যায় ভুগছেন, যার ফলে আপনার মনে হচ্ছে আপনি তাড়াহুড়ো করছেন। এ সমস্যা দূর করার জন্য আপনি নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করতে পারেন

১) ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার স্ট্রেস রিঅ্যাকশনকে সংহত করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাসটাকে ফুসফুসে ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের মাংসপেশীগুলো যতোটুকু সম্ভব ভেতরের দিকে টেনে ধরে রাখুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এ রকম করুন।

২) মাইন্ডফুল মেডিটেশন: ব্রিদিং এক্সারসাইজ নিজেই একটি মাইন্ডফুল মেডিটেশন। তাছাড়া আপনি যখন চা খাচ্ছেন, তখন অনুভব করুন চা কীভাবে আপনার অন্ননালী বেয়ে পাকস্থলীর ভেতরে প্রবেশ করছে। চায়ের, স্বাদ, গন্ধ, স্পর্শ, তাপমাত্রা, রঙ ইত্যাদি অনুভব করুন। আপনার শরীর এবং মনে প্রশান্তি নেমে আসবে।

৩) নিজের সকল বৈশিষ্ট্যকে মেনে নেওয়া: নিজের মধ্যে আসা অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তার সাথে যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়ে নিজের তাড়াহুড়ো করার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে একে নিজের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে মেনে নিন। এভাবে চর্চা করতে থাকলে আপনি আপনার তাড়াহুড়ো স্বভাবকে সাহসিকতার সাথে মোকাবিলা করতে পারবেন এবং আপনার ভেতরে ধীরে ধীরে একটা প্রশান্তি চলে আসবে। এভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে সেই ব্যর্থতাকে মেনে নিন। এভাবে চেষ্টা করতে থাকলে না মেনে নেওয়ার মতো কিছুই আপনার কাছে থাকবে না।