‘বিয়ের পর বাবা মায়ের সাথে থাকতে চায় না আমার হবু স্ত্রী’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। প্রেম করে বিয়ে করেছি ৩ বছর আগে। স্বামী বেকার, আমি চাকরি করি। আমিই সংসারের খরচ চালাই, স্বামীর হাতখরচ বা ঘোরাঘুরির মতো শৌখিন খরচও পুরোটা আমিই করি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে স্বামী এগুলো নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে এবং আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। সে ব্যবসা করতো, যেটাতে লস খেয়েছে। চাকরি খুঁজেও পাচ্ছে না। কিন্তু এখানে আমার দোষ নেই, উল্টো অনেক চাপ নিতে হয় আমাকে। তারপরেও কথায় কথায় খারাপ ব্যবহার করে। কী করবো?

উত্তর: আনন্দময় জীবিকা সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় অধিকাংশ মানুষ পেশাগত জীবনে ব্যর্থ্য হন অথবা নিজের অপছন্দের পেশায় জীবন কাটান নিজের ভাগ্যকে অভিসম্পাত করতে করতে। আমরা শৈশব থেকে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক পড়াশোনার উপরেই জোর দিতে শিখি। ফলে আমাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না এবং আমাদের প্যাশন ও পেশার মিল হয় না। হতাশার কারণে আপনার স্বামী এই মুহূর্তে হীনমন্যতায় ভুগছেন। উনার জীবনের এই ক্রান্তিকালকে প্রশিক্ষণকাল হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। নিচের পরামর্শগুলো আপনাদের উভয়ের জন্য উপকারী হবে:

১) মাইন্ডফুল মেডিটেশন: বর্তমান মুহূর্ত ও পরিবেশকে সকল ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করুন।

২) ব্রিদিং এক্সারসাইজ: মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে নিঃশ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। তারপর মনে মনে ১ থেকে ৬ গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের মাংসপেশি শক্ত করে পেট ভেতরের দিকে যথাসম্ভব টেনে রাখুন।

৩) নিজের অনুভূতির মূল্যায়ন: নিজের মধ্যে ইতিবাচক, নেতিবাচক যে অনুভূতিই আসুক না কেন সেটাকে পরিপূর্ণভাবে আলিঙ্গন করুন।

৪) লাভিং কাইন্ডনেস: নিজের এবং অন্যদের প্রতি নিঃশর্ত ভালোবাসা ও সহানুভূতি চর্চা করুন। আপনার ইচ্ছাশক্তি ও ইতিবাচক মনোভাব প্রবল হলে আপনার স্বামীর মধ্যে তা সঞ্চালিত হবে।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৩ বছর। আমার বাবা মা দুজনই অসুস্থ। প্রেম করি ৫ বছর হলো। বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে আমার প্রেমিকা। কিন্তু আমি বিয়ে করলে বাবা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। বিয়ের পর বাবা মায়ের সাথে থাকতে চায় না আমার হবু স্ত্রী। আবার আলাদা লোক রেখে উনাদের সেবা করানোর মতো আর্থিক সংগতি নেই আমার। কী করবো কিছুতেই বুঝতে পারছি না।

উত্তর: আপনার অগ্রমস্তিষ্ক বা প্রিফ্রন্টাল লোবে তৈরি হওয়া যুক্তি-বুদ্ধি আপনাকে বাবা-মার প্রতি দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আর আপনার এমিগডালায় তৈরি হওয়া আবেগ আপনাকে আপনার হবু স্ত্রীর মনরক্ষা করতে বলছে। এ ধরনের ক্ষেত্রে প্রায়শই আবেগ জয়যুক্ত হয় যুক্তিবুদ্ধির কাছে। কারণ বিবর্তনের দিক থেকে এমিগডালা অনেক প্রাচীন ও স্থিতিশীল কিন্তু প্রিফ্রন্টাল লোব নবীন ও অস্থিতিশীল। তবে মস্তিষ্কের গঠন ও আভ্যন্তরীণ যুক্তি ও আবেগের টানাপোড়েন ব্যক্তিসাপেক্ষে, সময়সাপেক্ষে অথবা পরিস্থিতিসাপেক্ষে ভিন্ন হতে পারে। নিচের পরামর্শগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে:

১) অপেক্ষা করুন: আপনার মধ্যে যুক্তি ও আবেগ, কোনটির প্রভাব কেমন তা বোঝার জন্য সময় নিন। জীবনের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যখনই দ্বিধা অনুভব করবেন, তখনই বুঝতে হবে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথাযথ সময় এখনও আসেনি। সময়ের সাথে সাথে প্রাকৃতিকভাবে, যা কিছু সমস্যা মনে হয় তা একসময় জীবনের অপরিহার্য অংশ হিসেবে স্থিতিশীল হয়।

২) স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন: আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। নিজের জন্য সময় বের করুন।

৩) আত্মসমালোচনা থেকে বিরত থাকুন: নিজের কোনো অনুভূতি বা আবেগের জন্য নিজেকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকুন। ভালোমন্দ বৈশিষ্ট্যসহ আপনি যেরকম, ঠিক সেরকম ভাবেই নিজেকে আত্মস্থ করুন।

৪) মেডিটেশন ও ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন: মেডিটেশন এবং ব্রিদিং এক্সারসাইজ আপনার মানসিক চাপ কমাতে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।