‘স্বামীর আমার উপর থেকে সব আগ্রহ চলে গেছে’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৩ বছর। বিয়ে করেছি ৮ বছর আগে, একটা বাচ্চা আছে। চাকরি করি স্বামী স্ত্রী দুজনই। সমস্যা হচ্ছে আমার স্বামী বেশ অনেকদিন ধরেই চুপচাপ। সম্পর্কে উষ্ণতা নেই। স্বামীর আমার উপর থেকে সব আগ্রহ চলে গেছে। সারাদিন চলে যায় কথা হয় না, আমি সুযোগ পেলেই টেক্সট করি। সেটার উত্তর দিতেও তার আগ্রহ নাই। বাসায় ফিরেও ফোন দেখে সারাক্ষণ। বাচ্চার সাথেও ঠিক মতো কথা বলে না। বলেছি চলো কোথাও ঘুরতে যাই। কিন্তু তার আগ্রহ নাই। কি করতে পারি?

উত্তর: ১) খোলামেলা কথা বলুন: আপনার স্বামীর সাথে সরাসরি এবং খোলামেলা কথা বলুন। আপনার নিজের অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন এবং তাকে তার অনুভূতিগুলো শেয়ার করতে উৎসাহিত করুন। হয়তো তিনি কোনও চাপের মধ্যে আছেন। অভিযোগ না করে, আপনি কী চান তা স্পষ্টভাবে বলুন। যেমন, ‘আমি চাই আমরা একসাথে আরও সময় কাটাই।’ আপনার অনুভূতিগুলো বোঝাতে নির্দিষ্ট উদাহরণ ব্যবহার করুন। যেমন, ‘যখন তুমি ফোনে ব্যস্ত থাকো এবং আমার সাথে কথা বলো না, তখন আমি একা বোধ করি।’ আপনার স্বামীর ইতিবাচক দিকগুলো এবং তার ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করুন।

২) নিজের যত্ন নিন: নিজের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন এবং এমন কিছু করুন যা আপনাকে সুখী করে। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত ঘুমান। ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। প্রতিদিন পনেরো মিনিট থেকে আধঘণ্টা খালি পায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন।

৩) ধৈর্য ধরুন: পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ হতে পারে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান এবং একে অপরকে সমর্থন করুন। একবারে সবকিছু সমাধান করার চেষ্টা করবেন না। ধীরে ধীরে এবং ধৈর্য ধরে সমস্যাগুলো নিয়ে কাজ করুন। আপনার স্বামীর সাথে খোলামেলা কথা বলার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে।

৪) বিশেষজ্ঞ পরামর্শ গ্রহণ করুন: যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে কোনও সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে পারেন। তারা হয়তো আপনাদের সম্পর্কের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে এবং সমাধান করতে সাহায্য করতে পারবেন। আপনার স্বামী শারীরিক বা পারিপার্শ্বিক কোনও সমস‍্যার কারণে (সেকেন্ডারি ডিপ্রেশন) বা কোনও কারণ ছাড়াই (প্রাইমারি ডিপ্রেশন) বিষণ্ণতায় ভুগতে পারেন। সে রকম ঝুঁকি থাকলে আপনাদের উচিত একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৫ বছর। একটা মেয়ের সাথে সম্পর্ক ৪ বছরের। আমি দেশের বাইরে যাচ্ছি ক্যারিয়ারের জন্য। কিন্তু আমার প্রেমিক প্রেমিকা রাজি না। সে বলেছে দেশের বাইরে থাকা ছেলের সাথে তার পরিবার বিয়ে দেবে না। সে ব্রেকআপ করতে চায়। আমি দিশেহারা অবস্থায় আছি। ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দিব নাকি সম্পর্ককে, সেটা বুঝতে পারছি না।

উত্তর: ১) ধৈর্য ধরুন: পরিবর্তন সময় সাপেক্ষ হতে পারে। ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান এবং একে অপরকে সমর্থন করুন। আপনার প্রেমিকার সাথে খোলামেলা কথা বলার মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নতি হতে পারে। যদি এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথাযথ সময় এখনও আসেনি।

২) ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করুন: আপনারা দুজনেই ভবিষ্যতের জন্য কী পরিকল্পনা করছেন তা নিয়ে আলোচনা করুন। হয়তো কিছু সময় পর আপনি দেশে ফিরে আসতে পারেন বা আপনার প্রেমিকা আপনার সাথে বিদেশে যেতে পারেন। আপনার প্রেমিকাকে বোঝান যে আপনি তাকে ভালোবাসেন এবং তার প্রতি আপনার প্রতিশ্রুতি অটুট।

৩) সুবিধা ও অসুবিধার তালিকা তৈরি করুন: প্রতিটি পথের সুবিধা ও অসুবিধার তালিকা তৈরি করুন। এতে আপনার চিন্তাভাবনাকে আরও স্পষ্ট করতে সাহায্য করবে। আপনার অনুভূতি ও উদ্বেগ আপনার আস্থাশীল ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করুন। তাদের কাছ থেকে সমর্থন ও পরামর্শ পেতে পারেন।

৪) নিজের অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দিন: আপনি কী চান এবং কীভাবে সুখী থাকবেন, তা বিবেচনা করুন। ক্যারিয়ারের সুযোগ ছেড়ে প্রেমিকার সাথে থাকার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত কিনা সেটা ভেবে দেখুন। আপনি দেশের বাইরে না গেলেও আপনার সাথেই আপনার প্রেমিকার পরিবার তাকে বিয়ে দেবে তার কোনও নিশ্চয়তা আছে কিনা বিবেচনা করুন। আপনার প্রেমিকা যদি আপনার ক্যারিয়ারের চেয়ে তার পরিবারের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়, তাহলে আপনাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার ঝুঁকি রয়েছে। বিভিন্ন সংস্কৃতিতে পারিবারিক প্রত্যাশা বৈচিত্র্যময় হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত আপনারই নিতে হবে। সঠিক বা ভুল কোনও উত্তর নেই। আপনার মূল্যবোধ এবং ভবিষ্যতের দর্শনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পথটি বেছে নিন, যদিও এটি কষ্টদায়ক হতে পারে।