‘টক্সিক বুঝেও সম্পর্কটা থেকে বের হতে পারছি না’

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। সিঙ্গেল মাদার, দুই সন্তান আমার। ডিভোর্স হয়েছে ৭ বছর আগে। আমি চার বছর আগে একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। আমার বয়ফ্রেন্ডের স্ত্রী-সন্তান আছে, ডিভোর্স দেবে দেবে করেও তিন বছর পার হয়ে গেছে। সে আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করে। নানাভাবে মানুষের সামনে ছোট করে, আমাকে গ্রান্টেড মনে করে। টক্সিক বুঝেও সম্পর্কটা থেকে বের হতে পারছি না। দুইদিন কথা না হলে আবার নিজেই আত্নসম্মান বিসর্জন দিয়ে কথা বলতে যাই। কিছুতেই বের হতে পারছি না। কেন পারছি না সেটাও বুঝতে পারছি না। কী করবো?

উত্তর: ১) নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে নিঃশর্ত ভালোবাসুন এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। আপনার সমস্ত গুণ এবং ত্রুটিগুলোকে গ্রহণ করুন। আপনি যেমন আছেন, ঠিক তেমনই নিজেকে ভালোবাসুন। আপনার অনুভূতি এবং চিন্তাগুলোকে পর্যবেক্ষণ করুন, কিন্তু সেগুলোকে বিচার করবেন না। নিজেকে সময় দিন এবং নতুন কিছু শিখুন বা এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়।

২) নতুন সম্পর্ক গড়ে তুলুন: ইতিবাচক এবং সমর্থনশীল মানুষের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলুন। আপনার পরিবার এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে সময় কাটান। বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন, যেমন ক্লাব, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক সংগঠন বা স্বেচ্ছাসেবী কার্যক্রম। শরীরচর্চা, মেডিটেশন, বইপড়া, রান্না, বা এ ধরনের কোনও আত্মউন্নয়নমূলক কোর্সে অংশগ্রহণ করুন। নতুন কিছু শিখুন বা এমন কিছু করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়।

৩) মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন করুন: প্রতিটি মুহূর্তে সেই মুহূর্তের বাস্তবতা ও পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে সচেতন হওয়াই মাইন্ডফুলনেস। প্রতিদিনের স্বাভাবিক অভ্যাস যেমন ব্রাশ করা, চা খাওয়া, বা হাঁটাচলা করার সময় মাইন্ডফুল থাকুন। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটান। এসময় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করুন এবং চারপাশের গাছ, ফুল, পাখির গান এবং বাতাসের শব্দ শুনুন।

৪) শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন: প্রতিদিন কিছু সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন। মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। এরপর মনে মনে ১ থেকে ৬ গুনতে গুনতে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেট ভেতরের দিকে টেনে রাখুন। যখনই মনে হবে তখনই কয়েকবার এই ব্যায়ামটি করুন।

প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৯ বছর। বিয়ে করেছি ৮ বছর আগে। আমার স্ত্রী খুব পজেসিভ। সবসময় নেতিবাচক চিন্তা করে। ওর পরিবারও তাই। অনেকবারই মনে হয়েছে এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যাই, কিন্তু মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। আমি এই সম্পর্কে আসলে শ্বাসটাও ঠিক মতো নিতে পারি না। সবকিছুতে আমার স্ত্রী খুঁত ধরতে থাকে। সবকিছুতেই তার কিছু না কিছু অভিমত আর অভিযোগ। অনেক বুঝিয়েও ওকে ঠিক করতে পারিনি।

উত্তর:

১) বাস্তবতাকে মেনে নিন: আমরা চাইলেই আমাদের বা অন্যদের স্বভাবধর্ম রাতারাতি পরিবর্তন করতে পারবো না। পরিবর্তন হওয়ার থাকলে তা এমনিতেই হবে, আমরা চাই বা না চাই, চেষ্টা করি বা না করি। অনুরূপ, পরিবর্তন না হওয়ার হলে শত চেষ্টা করেও লাভ হবে না। সুতরাং সবকিছুকে যেমন আছে ঠিক তেমন ভাবে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করাটা অধিকতর যুক্তিসঙ্গত এবং স্বস্তিদায়কও বটে।

২) আত্মবিশ্লেষণ করুন: আমরা আমাদের সকল আচরণ বা অনুভূতির অন্তর্নিহিত কারণ অনেক সময় নিজেরাও সঠিক জানি না। হয়তো আপনার স্ত্রীর তথাকথিত নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের কারণেই আপনি তাকে ভালোবাসেন। হয়তো শুধুমাত্র সন্তানের কারণেই নয়, বরং আপনার স্ত্রীর প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসা এবং তার আচরণের ব্যাপারে সহনশীলতা আছে বলেই আপনাদের সম্পর্ক এখনও টিকে আছে। আপনাদের একে অপরের মধ্যে আচরণ বা স্বভাবধর্ম পরিবর্তনের চেষ্টার করার আগে আপনাদেরকে এটা বুঝতে হবে যে, আপনাদের একজনের কাছে অন্যের যে স্বভাব অস্বাভাবিক, তার জন্য সেটাই স্বাভাবিক।

৩) ধৈর্য্য ধরুন: ধৈর্য্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ যা আপনার জীবনে অনেক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে। সময়ের সাথে সাথে আপনার স্ত্রীর মানসিকতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। নিয়মিত মেডিটেশন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এগুলি আপনাকে ধৈর্য্যশীল হতে সাহায্য করবে। যদি এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার যথাযথ সময় এখনও আসেনি। যখন সময় আসবে, যথাযথ সিদ্ধান্ত আপনাআপনি আপনার ভেতর থেকে উঠে আসবে, সক্রিয় চেষ্টা ছাড়াই।

৪) নিজের যত্ন নিন: স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো নিশ্চিত করুন। প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানো। প্রকৃতির সাথে সময় কাটান। প্রতিদিন পনেরো মিনিট থেকে আধঘণ্টা সময় খালিপায়ে মাটিতে বা ঘাসের উপর হাঁটুন বা দাঁড়িয়ে থাকুন। অথবা দুই হাতের তালু দিয়ে বড় কোনও গাছের কাণ্ড কিছু সময়ের জন্য জড়িয়ে ধরে রাখুন (ট্রি-হাগিং)।