‘আমি কোনও কারণ ছাড়াই প্রচুর মিথ্যা কথা বলি’

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৪ বছর। আমি কোনও কারণ ছাড়াই প্রচুর মিথ্যা কথা বলি। বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে আমার ভালো লাগে। এক পর্যায়ে নিজের বানোয়াট কথা নিজেই বিশ্বাস করতে শুরু করি। এটা কি কোনও মানসিক সমস্যা?

উত্তর: ১) এটা একটা মানসিক সমস্যা। এ ধরনের মানসিক সমস্যাকে বলা হয় প‍্যাথোলজিক‍্যাল লাইং বা মিথোম‍্যানিয়া বা স‍্যুডোলগিয়া ফ‍্যান্টাসটিকা। তিনটি শব্দই একই আচরণকে নির্দেশ করে, যেখানে ব্যক্তি কোনও স্পষ্ট কারণ বা উদ্দেশ্য ছাড়াই ক্রমাগত বা বাধ্যতামূলকভাবে মিথ্যা বলে থাকে।

২) এই সমস‍্যাটি অপর তিনটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। যেমন নার্সিসিস্টিক পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, যেখানে ব্যক্তি নিজেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং অন্যদের অনুভূতির প্রতি কম গুরুত্ব দেয়। অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার, যেখানে ব্যক্তি অন্যদের অধিকার ও অনুভূতির প্রতি কম গুরুত্ব দেয় এবং মিথ্যা বলাকে একটি কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে। অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, যেখানে ব্যক্তি বাধ্যতামূলকভাবে কিছু কাজ করে থাকে।

৩) অতিরিক্ত মিথ্যা বলার অভ্যাসের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের থেরাপি এবং কাউন্সেলিং ব্যবহার করা হয়। যেমন কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি, যা মিথ্যা বলার পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো পরিবর্তন করতে সাহায্য করে; হ্যাবিট রিভার্সাল ট্রেনিং, যা মিথ্যা বলার অভ্যাস পরিবর্তন করে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করে; পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার থেরাপি, অর্থাৎ যদি মিথ্যা বলার অভ্যাসটি কোনও পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের সাথে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সেই ডিসঅর্ডারের চিকিৎসার জন্য বিশেষ থেরাপি ব্যবহার করা; সাপোর্ট গ্রুপে অংশগ্রহণ করে অন্যদের সাথে অভিজ্ঞতা শেয়ার করা এবং অন্যদের থেকে সমর্থন নেওয়া।

৪) নিজের সকল বৈশিষ্ট্যকে আপন করে নেওয়ার মাধ্যমে আপনি এই সমস্যাজনিত মানসিক পীড়ন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেন। আপনি যেহেতু আপনার সমস্যা চিহ্নিত করতে পারছেন এবং তার সমাধানের উপায় খুঁজছেন, সেহেতু আপনি সমস্যার সমাধানের পথে ইতোমধ্যেই অর্ধেকটা পৌঁছে গেছেন। আপনি মেটাকগনিশন মাত্রা বেশি হওয়ায় আপনি সহজেই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।

প্রশ্ন: আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষে পড়ি। যে মেয়েটার সাথে সম্পর্ক সেও একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। দুই বছরের সম্পর্ক শেষে জানতে পারি সে অন্য একটি ছেলের সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ একই সঙ্গে দুটি সম্পর্ক চালাচ্ছে। তাকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে সে নিজের দোষ স্বীকার করে নেয় এবং ক্ষমা চায়। আমিও যেহেতু মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসি, তাই মাফ করে দিয়েছি। কিন্তু এখন কথায় কথায় আমাদের ঝগড়া লাগে, সন্দেহ করি ওকে। দিন দিন মানসিকভাবে ভেঙে যাচ্ছি। কী করবো? এই সম্পর্কটা থেকে কি আমার বের হয়ে আসা উচিত?

উত্তর: ১) নিজের সাথে বোঝাপড়া করুন: আপনার প্রেমিকার এই অভ‍্যাস পরিবর্তন হচ্ছে কি না তা নির্ভর করবে তার আচরণের স্বচ্ছতার উপর, মৌখিক প্রতিশ্রুতির উপর নয়। কারোর মধ্যে এমন অভ‍্যাস থাকলে সেটির পরিবর্তন দুঃসাধ্য। বিষয়টি নির্ভর করে আপনি তাকে আপনার জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং তার এই অভ্যাসের কারণে আপনার মধ্যে সৃষ্ট মানসিক চাপ মোকাবিলায় আপনি কতটুকু সক্ষম, তার উপর।

২) ধৈর্যশীল হোন: বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা একটি ধীর এবং ধৈর্যশীল প্রক্রিয়া। আপনি যদি মনে করেন আপনার প্রেমিকা সত্যিই নিজেকে পরিবর্তন করেছেন এবং আপনার বিশ্বাসের যোগ্য, তবে ধীরে ধীরে তাকে আরেকটি সুযোগ দিতে পারেন। আমরা কেউই ভবিষ্যত সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি না।

৩) নিজের মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিন: আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দিন। মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন করুন। দৈনন্দিন কাজ করার সময় বর্তমান মুহূর্তে থাকার চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। মনে মনে ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিন এবং এরপর ১ থেকে ৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। শেষে ১ থেকে ৬ গুনতে গুণতে শ্বাস ছাড়ুন। এই প্রক্রিয়াটি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করুন।

৪) আর্থিং বা গ্রাউন্ডিং করুন: প্রকৃতির সাথে সংযোগ স্থাপন করুন। প্রতিদিন আধাঘণ্টা খালি পায়ে ঘাস বা মাটির উপর হাঁটুন বা দাঁড়ান, অথবা বড় কোনও গাছের কাণ্ড জড়িয়ে ধরে রাখুন (ট্রি হাগিং)। সম্ভব হলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে সাঁতার কাটুন।