গণটিকা থেকে যা শিখলাম, যা করতে হবে

দেশে ৭-১২ আগস্ট পালিত হলো গণটিকার বিশেষ কর্মসূচি। ক্যাম্পেইনে মোট ৫০ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৩ জন মানুষকে এক (১ম ডোজ) ডোজ কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে পুরুষ ২৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪১৫ জন ও নারী ২৩ লাখ ২ হাজার ৯০৮ জন। ক্যাম্পেইনে নারী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছিল আগের চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি। প্রথমেই স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাই বিশেষ এ উদ্যোগের জন্য। যারা টিকা নিয়েছেন, তাদেরও অভিবাদন।

করোনা মহামারির শুরু থেকেই আমরা যেকোনও কারণে জনগণকে পুরোপুরি সম্পৃক্ত করতে পারিনি। কিন্তু গণটিকার আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ কাজটি ভালোভাবেই পেরেছে। গণটিকার উদ্দেশ্য ছিলো-

  • জনগণকে সচেতন করা।
  • জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
  • শহর থেকে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা, দুর্গম, হাওড় এলাকা, চরাঞ্চলে করোনার টিকা পৌঁছে দেওয়া।
  • দ্রুত বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া।

বেশ দক্ষতার সঙ্গে বিশাল কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি রোহিঙ্গাদের মাঝেও করোনার টিকা দেওয়া গেছে। এটা ছিল পাহাড়সম কাজ। কিন্তু সকলের সহযোগিতায় কাজটি সম্পন্ন ঠিকই হয়েছে।

বিশেষ টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য বিভাগকে নিতে হয়েছিল বিশাল কর্মপরিকল্পনা, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো-

  • বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতা ও সমন্বয় স্থাপন।
  • টিকার মজুত নিশ্চিত করা।
  • টিকার সরবরাহ, বিতরণ, ক্লাউড চেইন সংরক্ষণ।
  • ইউনিয়ন, গ্রাম, দুর্গম এলাকাসহ দেশব্যাপী টিকাকেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করা।
  • স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুশীলনের ব্যবস্থা করা।
  • টিকা দেওয়ার পর জনগণের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের (ফার্মাকোভিজিল্যান্স) ব্যবস্থা করা।

বিশেষ এই ক্যাম্পেইন সম্পন্ন করতে গিয়ে কিছু অসঙ্গতিও ধরা পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-

  • টিকা কেন্দ্রে বিশাল জনগণের সমাবেশ।
  • ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না থাকা।
  • প্রতিটি কেন্দ্রে মজুতের চেয়ে বেশি লোকের সমাগম।

এসবের মাঝেও প্রাপ্তিটা কিন্তু বেশি। জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশেই টিকা নিয়েছেন। সকল বাধা অতিক্রম করে সকল শ্রেণির সবাই কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন।

আপাতত টিকা নিলেও মহামারিকে পুরোপুরি দূর করতে দরকার দুটো জিনিস-

 

প্রথমত: সঠিক নিয়মে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।

দ্বিতীয়ত: টিকা নেওয়া।

 

আমরা যদি একযোগে এ কাজগুলো সেরে ফেলতে পারি তবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

তথ্যসূত্র: স্বাস্থ্য অধিদফতর

 

লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং ডেপুটি ডিরেক্টর, মেডিক্যাল সার্ভিসেস, এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা।