শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ সংগ্রহশালা উন্মুক্ত হলো

বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ- এর সৃজনশীল, সৃষ্টিশীল জীবনের প্রতি স্মৃতি রক্ষার্থে পরিবারের উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমদ সংগ্রহশালা’ এর উদ্বোধন হয়েছে। রাজধানীর ধানমন্ডির ৪ নং সড়কের ‘সাইফউদ্দীন শিল্পালয়ে’ শুক্রবার (১২ মার্চ) উদ্বোধন হলো এই সংগ্রহশালা, প্রিন্টমেকিং স্টুডিও ও গ্যালারির।

উদ্বোধন করেছেন নাট্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, চারুকলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক আবুল বরাকত আলভী, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন- এর সন্তান ময়নুল আবেদীন।

20210312_184717উদ্বোধনী আয়োজনে আসাদুজ্জামান নুর বলেন, শিল্পগুরু সফিউদ্দীন ছিলেন আমাদের প্রেরণার উৎস। রাজনৈতিকভাবে তাঁর চিন্তার জায়গা স্পষ্ট ছিলো। তিনি অল্পভাষী ছিলেন, কিন্তু তার চোখের ভাষা আমরা বুঝতে পারতাম যে তিনি আমাদের সাথেই আছেন। এই আর্ট গ্যালারির উদ্বোধনের বিষয়টা নিয়ে আমি খুব আনন্দিত ও গর্বিত। আমাদের দেশীয় শিল্পকর্মগুলো সংরক্ষণের জন্য আর্ট গ্যালারীর প্রয়োজন। এটি ব্যক্তিগতভাবে হলেও সরকারিভাবে উদ্যোগ নেবার জন্য আমি এবং আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হয়তো খুব শীঘ্রই আমরা তা পেয়ে যাবো। আমি বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই আহমেদ নজীর ও নাহিদা শারমিনকে এমন একটি উদ্যোগ গ্রহণের জন্য।20210312_185408

অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, স্যারের কাছে শিখেছি কীভাবে একটি শিল্পকর্মের যত্ন নিতে হয় এবং সংরক্ষণ করতে হয়। আমি স্যারকে দেখেছি নিজের কাজ ছাড়াও অন্য শিল্পীর কাজও সংরক্ষণ করে রাখতেন। চিত্রকর্ম ছাড়াও স্যারের সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ ছিল তীব্র।

অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন লেখক, চিত্র সমালোচক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। তিনি বলেন, শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদকে শুধু বাংলাদেশের পথিকৃত শিল্পীদের অন্যতম বললে কম হয়ে যায়। তিনি ছিলেন প্রকৃতঅর্থেই শিল্পের এক স্বতন্ত্র পথযাত্রী। তার শিল্পের প্রতি যে ভালোবাসা, যে অনুরাগ, জ্ঞান, অধ্যাবসায় ছিলো সেগুলো সম্পর্কে আমাদের সবার জানা প্রয়োজন। দেশের শিল্পের জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ছিলেন শিল্পগুরু সাইফউদ্দীন আহমেদ সংগ্রহশালা’র পরিচালক ও তার সন্তান আহমেদ নাজির এবং শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ সংগ্রহশালা’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাহিদা শারমিন।

20210312_190223সফিউদ্দীন আহমেদ শিল্পালয়টির তিনটি অংশ রয়েছে। একটি অংশে প্রদর্শনশালা, যার নাম রাখা হয়েছে ‘ফাইন আর্ট অ্যান্ড ফ্যাশন গ্যালারি, একটি অংশ তার ব্যবহার্য উপাদান সামগ্রির সংগ্রহশালা। যার নাম রাখা হয়েছে ‘শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ চত্বর’। আরেকটি অংশ ছাপচিত্র স্টুডিও, যার নাম রাখা হয়েছে ‘সফিউদ্দীন আহমেদ প্রিন্টমেকিং স্টুডিও’।

তিনটি কক্ষ নিয়ে ‘শিল্পগুরু সাইফ আহমেদ চত্বর’ গঠিত। এই চত্বরের প্রথম কক্ষটিতে আছে তাঁর বিখ্যাত সব ছাপচিত্রের কিছু প্লেট। যেমন- জলের নিনাদ, বিক্ষুব্ধ মাছ, মাছ ধরার সময়, নীলজল, হলুদ জাল, সূর্যমুখী। দ্বিতীয় কক্ষে আছে তার গান শোনার সরঞ্জাম- রেকর্ড, রেকর্ড প্লেয়ার, সাউন্ড সিস্টেম। ধূমপানের সরঞ্জাম, ব্যবহৃত ঘড়ি। তৃতীয় কক্ষটিতে রয়েছে তার ব্যক্তিগত পারিবারিক জীবনযাপনের নানা অপরিহার্য উপাদান।

20210312_190235উল্লেখ্য, শিল্পগুরু সফিউদ্দীন আহমেদ (১৯২২-২০১২) বাংলাদেশের চিত্রকলা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ এবং বাংলাদেশের আধুনিক ছাপচিত্রের জনক। তিনি তার কর্মে দেশের ছাপচিত্র জগতকে বিশ্বমানে উন্নীত করেছেন। উৎকর্ষমন্ডিত করেছেন ছাপচিত্রের পাশাপাশি রেখাচিত্র ও  তৈলচিত্রের ভূবনকেও। এই ক্ষেত্রেও রয়েছে তার ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, রয়েছে বিপুল অনুশীলন ও গভীর অভিনিবেশ। তিনি ১৯৭৮ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পদসহ দেশ ও দেশের বাহিরে অনেক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।