ডাকার : হোর্হে লুইস বোর্হেস
ডাকার দাঁড়িয়ে আছে সূর্যের উদয়রেখা, বালুবেলা ও সমুদ্রের সামনে।
রোদের তেজে অন্তরীক্ষ আবৃত। আবর্জনার কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে
রাস্তাটাকে ধমকে চলেছে। আর আঘাতকারী ঢেউয়ের আগারের মত
হয়ে আছে সমুদ্র এখন।
আমি এক আরব শেখকে দেখলাম, তার নীল জ্বালাময় জোব্বা
জ্বলন্ত ঊর্ধ্বলোকের চেয়েও জেল্লাদার।
মসজিদের পাশে সিনেমা হলের একটা নিঃশব্দ বাতি মোনাজাতের নীরব
ভঙ্গি নিয়ে জ্বলছে। ছায়াচ্ছন্নতার ভেতর কুটিরগুলো অন্তর্হিত। আর
আফ্রিকার মহিমা যেন তরঙ্গিত যুদ্ধক্ষেত্রে, মূর্তিসমূহে, রাজ্যগড়ায়।
এবং তরবারিতে।
এভাবে আমি একটি গোধূলিবেলা এবং গ্রামজনপদকে
অনুমোদন করি।
এডগার এলেন পো : হোর্হে লুইস বোর্হেস
তার সেই শীতল প্রতীক, যা ছিল সংগ্রহে তার
শ্বেত পাথরের আলো, অস্থিবিদ্যা , কালো হাড়গোড়
আর উঁইধরা ডানার বিস্তার। মরণের চিহ্নে ভরপুর।
কেবল নির্ভীক তিনি মরণের দিগ্বিজয়ে একা।
তারও ছিল ভয়ের বিষয় এক ভালোবাসা। যাতে সুখী
অন্য সবে। অন্য মানুষেরা যাকে বলে, প্রেম।
কেবল পড়তো চোখে আস্তরণ, ধাতু আর প্রদীপ্ত মার্বেল
অথচ গোলাপ দেখে গোলাপের বর্ণগন্ধে কানা—
দর্পণের উল্টোদিকে দৃষ্টিবিদ্ধ হয়ে আছে যেন;
নৈসঙ্গের অনুগত। বিপুল সৌভাগ্য তার বুনে
তারই অদৃষ্টলিপি ভয়াবহ দুঃস্বপ্নের রাত।
কিংবা যেন মরণেরই উল্টোদিকে কিছু একটা নীরবতাময়
আর তার অনিচ্ছুক বিষয়াদি ওতপ্রোত ভাঁজ পড়ে গিয়ে
চমৎকার বেদনার অপরূপ মর্মরে দাঁড়ায়।
দিনভর : তুরহান কক
আমি কীভাবে জানবো বলো
কবিতার অন্তর কেমন, কী নম্রতা রুটির হৃদয়ে
শান্ত ঋতুর স্বাদ লেগে থাকা আমার জিহ্বায়
আমি কি গুনতে পারি
আমার পকেটে রাখা পুষ্পের মাসগুলো
আর যত অগণন ছবির সংগ্রহ?
এই সায়াহ্নবেলা আমার অন্তর্গাহে মর্মর ধ্বনিতে মুখর,
তোমার দীঘির মতো আয়তলোচন বাস্পাচ্ছন্ন।
হাঁটো, তোমার পথ অনিঃশেষ, অফুরন্ত,
এগোও, তোমার মাতৃমহিমা সুঠাম-স্বাস্থ্যবতী হোক।
আমার অন্তরাকাশে কী এক নূরের ছটা
অতি সন্তর্পণে জেগে ওঠে যেন।
কী করে বুঝব বলো
এরই নাম প্রেম নাকি আমারই নিঃসহায়
বেদনার ছটা।
নাস্তা : চাহিত জারিফগলু
আমরা একটি সুকুমার জাতি
মৃত্যুই আমাদের কাছে একমাত্র আকস্মিকতা
আমরা খাই, এবং এই অনুগ্রহ ও ভালবাসার জন্য আমাদের
প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে করতে টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়াই
আমরা টেবিল ছাড়ি শানিত অস্ত্র হাতে নিয়ে,
আমরা আমাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু এবং বৈরী নিধনের আগে
প্রথমেই হাত ধুয়ে নিই, কারণ এটাই নিয়ম
প্রথমে আমরা দাঁত ,মাজি যেমন নিত্য অভ্যেস
তা না হলে মুখ পূতিগন্ধ ছড়ায়।
প্রাত্যহিক : আরিফ আঈ
শান্ত সমীরণ বইছিল ধীরে
অকস্মাৎ বাগানে একটি ইট খসে পড়লো
সূর্য আমার কররেখা পরখ করছে
একটি বৃষ্টির ফোঁটা পড়লো এসে আমার চায়ের কাপে
অর্ণবপোতের মতো এক ফালি মেঘ
ভিড়ল এসে আমার টেবিলে
হাতে হাত রেখে আমরা উঠে গেলাম
গোধূলির পাটাতনে
আমরা উচ্চারণ করলাম ঐ তো তারার মেলা
এক এক করা জানা যত কুসুমের নাম ধরে ডাকলাম তাদের
যদিও শেষ পর্যন্ত ঘটলো না কিছুই
পরের দিন ভোর হতে না হতেই তুমি ফের
নিজ হাতে এগিয়ে দিলে মুরগিগুলোর প্রাত্যহিক প্রথম আহার।
আত্মজীবনিকা : ফ্রাঙ্ক ও’হারা
ছিলাম যখন ছোট্ট শিশু
নিজের সাথে নিজেরই লীলাখেলা
চলত সদা স্কুলের এক কোণে
এক্কেবারেই একা।
পুতুল আমি ঘেন্না করি
ঘেন্না করি সব রকমের খেলাও
পশুরা কেউ বন্ধু হয়না
পাখিও গেল উড়ে।
যদিইবা কেউ দেখত ফিরে
আমার দিকে তবে
অমনি আমি গাছের পিছে
লুকিয়ে, অনাথ বলে
জুড়তাম চিৎকার।
এখন আমি এখানে সব
সুন্দরের মাঝখানে
লিখছি বসে এই কবিতা
ভাবুন তো একবার!
পুনর্মুদ্রণ