পাখিদের কাকলি শুনতে পাচ্ছি,
তবু নিঝুম নগরীর নৈঃশব্দ্য ভারি হয়ে আছে;
নিঃসীম নীলিমায় ছড়িয়ে আছে অবারিত নীল,
তবু শূন্যতায় শূন্যতা জমে আছে;
এত ফুল ফুটে আছে শহরের এখানে ওখানে,
তবু বাতাসে শোনা যায় ফুলের হাহাকার;
এত আলো ছড়িয়ে আছে বিস্তীর্ণ চরাচরে ,
তবু দৃশ্যাবলী স্পষ্ট নয় তেমন আগের মতো;
মানবহীন এই ভূদৃশ্য গ্রহণীয় নয় আমার কাছে কোনো প্রকারে-
নিতান্ত নিরূপায় নিজেকে অন্তরিন রেখেছি নিজ নিলয়ে।
আমি জানি অস্থিরতার সময় এটা নয়,
স্বেচ্ছায় মেনে নিয়েছি অন্তরন সামগ্রিক মঙ্গলের জন্য;
এই অন্তরনে নানাভাবে ব্যস্ত রেখেছি নিজেকে,
উদ্ভাবনশীল হয়ে ওঠার চেষ্টা করছি ভিন্ন উপায়ে;
দার্শনিক মিহাই সোরা কিভাবে সময় কাটাচ্ছেন
তা জেনে বিশেষভাবে প্রাণিত বোধ করছি-
নিজ গৃহে সাইকেল চালানো থেকে শুরু করে
সুয়েডিশ শিখছেন সোরা একশ তিন বছর বয়সে;
কীভাবে উৎফুল্ল থাকা যায় তা নিয়ে প্রাজ্ঞজনেরা যেসব
মোটিভেশনাল বিবৃতি দিচ্ছেন তা শুনেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছি;
নতুন কিছু করলে নাকি মস্তিষ্ক সচল হয়ে ওঠে,
তাই নতুন কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টাও করছি।
তবে চাইলেই তো সর্বদা উৎফুল্ল থাকা যায় না,
ভাবনা মনের ফাঁকে ফাঁকে মাথা ঢোকায়,
সংবাদ না শুনলে ভালো হতো কি না জানি না,
তবে না শুনেও উপায় থাকে না সব সময়;
যা তোলপাড় হচ্ছে পৃথিবীময়,
তথ্য এসে চারদিক ভাসিয়ে দেয়,
তথ্যের অবাধ প্রবাহ শোক ছড়ায়,
তথ্য প্লাবন থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় নেই।
নানা কারনেই আনন্দিত হতে পারছি না,
দেশে দেশে যেভাবে মানুষ সংকটে নিপতিত হয়েছে
তা দেখে শুনে নিশ্চিন্ত নিরুদ্বিগ্ন হব কি করে?
যোগাসনে বসে মারি তান্ডব ভুলে থাকি কেমন করে?
কতিপয় ক্ষমতাবান করোনায় আক্রান্ত হয়েছে জেনে
শ্লোকবদ্ধ ‘সাম্যবাদী’(?) আনন্দ প্রকাশ করতে পারছি না;
বরং সাত জন মানুষ যারা একটি কক্ষে গাদাগাদি বাস করে,
বিচ্ছিন্নতা অবাস্তব যাদের জন্য- শঙ্কিত হচ্ছি তাদের কথা ভেবে।
শঙ্কিত হচ্ছি সেইসব সীমিত আয়ের মানুষের কথা ভেবে
অন্তরনে যাদের আয়ের পথ প্রায় বন্ধ হয়েছে।
শঙ্কিত হচ্ছি সেই পলাতক অ্যাম্বুলেন্সকর্মীর কথা ভেবে
করোনা আশঙ্কায় যে পরিত্যক্ত হয় সামাজিকভাবে-
সানু থেকে খাড়া খাদে পতনশীল ব্যক্তির কন্ঠের মতো
তার কাতর কন্ঠস্বর শুনি মধ্যরাতে ঘুমের ঘোরে।
কষ্ট পাচ্ছি রিকশাচালকের পিঠে কালশিটে দাগ দেখে-
কষ্ট পাচ্ছি প্রহারকের অসুস্থ সন্তোষ প্রকাশ দেখে-
শঙ্কিত হচ্ছি দেশ জুড়ে মানুষের নির্লিপ্ততা দেখে-
শঙ্কিত হচ্ছি অবজ্ঞা আর উপেক্ষার ধরন দেখে।
কীভাবে সময়ের সাথে মোকাবেলা হবে?
কত অসঙ্গতি, অপূর্ণতায় ভাসতে হবে কে জানে?
জানি কঠোরতার কোনো বিকল্প হয়ত নেই এই ক্রান্তিকালে,
তবু ঝোড়ো হাওয়ায় নিষ্ঠুরতা যেন নিয়ম না হয়ে ওঠে।
আজ যারা জীবন রেখেছে বাজি জীবনের জন্য-
বিস্মরণে তারা যেন তলিয়ে না যায় সংকটের অবসানে।
যুগে যুগে দেশে দেশে প্রমাদ গোনা হয় সংকটকালে-
বেমালুম ভুলে যায় মানুষ প্রমাদের কথা সংকট শেষে।
সময় এসেছে আজ প্রাণের মূল্য অনুধাবনের,
শুধু মানুষের নয় - অন্য প্রাণীর, তৃণের,
লতাগুল্মের প্রাণের মূল্য বোঝার এসেছে সময়-
সব জীবনের সাথে মিশে আছে আমাদের জীবন।
এখনো আছে সময়: উঠে দাঁড়ানোর এখনি সময়
নিরন্তর অভিন্ন উদ্যমে জগৎ ও জীবনের জন্য।
অপেক্ষা করছি আমি সেই কাঙ্খিত সময়ের জন্য-
অপেক্ষা করছি মেডুসামুক্ত স্বস্তিময় দিনের জন্য-
অপেক্ষা করছি কল্লোলিত বাংলাদেশ, বিশ্বের জন্য-
অধীর নই, অস্থির নই, ধৈর্য্যচ্যুত নই একেবারে।
নক্ষত্রের চোখে চোখ রেখে আমি অপেক্ষা করছি
অন্তরন থেকে মানববন্ধনের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য-
অন্য প্রাণী, প্রকৃতি, প্রেমের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য-
নিগড় মুক্ত জীবন স্পন্দনের কাছাকাছি যাওয়ার জন্য।