নতুন বছরের প্রত্যাশা

বাঙালির নতুন বছর বলতে তো ইংরেজি নববর্ষকে বোঝায় না। তারপরও আমরা এবং বাকি পৃথিবী যে প্রক্রিয়ায় চলছে তা মাথায় রেখেই বলছি বিগত প্রায় দুটি বছর আমরা দুঃস্বপ্নের মধ্যে কাটিয়েছি। অতিমারি আমাদেরকে যে আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে ফেলেছে সেই ধকল অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। অনেক মৃত্যু দেখতে হয়েছে চোখের সামনে; অনেক স্বজন, প্রিয়জন, গুণীজন, গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তিত্বকে হারাতে  হয়েছে যা আমাদেরকে ভীষণভাবে ব্যথিত করেছে। এই অপ্র্ত্যাশিত ব্যথা, হতাশা, অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে উঠে যেন নতুন উদ্যমে দৃঢ়তার সঙ্গে নতুন বছর শুরু করতে পারি সেটাই তো আমাদের বড় প্রত্যাশা হওয়া উচিত।

বিগত শঙ্কটকালে আমাদের পারস্পরিক সৌহার্দ-সম্প্রীতিতেও ধস নেমেছিল; আমরা গত দুবছর শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড চালিয়েছি। বিশেষ করে আমাদের শিক্ষাঙ্গণের শিশুরা পড়াশুনা থেকে দূরে ছিল, স্কুলে যেতে পারেনি। বছর শেষে তারা নতুন ক্লাস এ উঠবে, নতুন বই পাবে, পাঠকক্ষে শিক্ষা নেবে—সেসব থেকে বঞ্চিত ছিল, থাকতে হয়েছিল।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আমাদের জাতীয় জীবনে ঐতিহাসিক এবং একইসঙ্গে গর্ব করার মতো বড় ঘটনা উদযাপিত হলো—আমাদের বিজয়ের ৫০ বছর। পাশাপাশি আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ, যদিও করোনার কারণে প্রত্যাশিতভাবে উদযাপন করা যায়নি। তবুও রাষ্ট্র এবং প্রতিটি বাঙালি-হৃদয় যথাসাধ্য শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করেছে, মুজিববর্ষ উদযাপন করেছে।

নতুন এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারি আমরা; পৃথিবীব্যাপী এক আতংকের কালো ছায়া বিরাজ করছে। শঙ্কা কাটিয়ে কবে যে এই জীবন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে কে জানে। নতুন বছরে স্বাভাবিক জীবনে পুরোপুরি  ফিরতে চাই। প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। আমরা আশার আলোয় বুক বাঁধি, উদ্দীপ্ত হই, স্বপ্নে বিভোর হই, আনন্দ-উল্লাস করি। পাশাপাশি আমরা অঙ্গীকার করি নতুন বছরে নতুনভাবে চলব।

নতুন বছরে নতুনভাবে জীবনযাপন করতে নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পন্থাগুলো ঢেলে সাজাই আমরা।

আমরা চাই শিশুসহ সকল শিক্ষার্থী যেন পাঠকক্ষে ফিরে যেতে পারে এবং তাদের ভেতর প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিক। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গীকার আমাদের জাগিয়ে রাখুক।

করোনাকালে আমাদের সকল কর্মকাণ্ডে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে হয়েছিল, ভবিষ্যতে তেমন পরিস্থিতিতে পড়লে আমরা এ ব্যাপারে আরো দক্ষ হয়ে উঠব নিশ্চয়।

শ্রুতিলিখন : অরবিন্দ চক্রবর্তী