ন্যাশনাল আর্কাইভ হলো জাতির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাণ্ডার সংরক্ষণের সূতিকাগার। অথচ কর্তৃপক্ষ জানান, এ চিঠির ব্যাপারে তারা কিছুই জানতেন না। চিঠিটা নিম্নরূপ–
ওয়াশিংটন, জানুয়ারি ২১, ১৮৬৫ (৬)
প্রিয়তম বধু আমার
পূর্বে কোনো চিঠি দিতে পারিনি এজন্য ক্ষমা করবে। খুব বেশি ভালো নেই আমি। লেখার মতো যথেষ্ট শক্তিও নাই শরীরে। তবে এখন একটু ভালো অনুভব করছি। আমার ফুসফুসে সামান্য সমস্যা ধরা পড়েছে। চিকিৎসা হতে আপাতত অব্যাহতি। কিন্তু বর্তমানে বাড়ি আসার মতো অবস্থা হয়নি এখনো। আশা করছি চিঠি পাবার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর পাঠাবে। তোমাদের দিন কীভাবে অতিবাহিত হচ্ছে, সবাই কেমন আছো, মা’র খবর কী এসব জানাবে আমাকে। চিঠিটা আমি আমার এক বন্ধুকে দিয়ে লেখাচ্ছি, সে এখন আমার পাশেই বসে আছে। আমি আশা করি, ঈশ্বর চাইলে আমরা আবারও একসঙ্গে মিলিত হবো। আমার সব ভালোবাসা তোমার জন্য। এখন রাখতে হচ্ছে।
তোমার আদরের স্বামী
নেলসন জাবো
লেখক : ওয়াল্ট হুইটম্যান
একজন বন্ধু
১৮৬৪ সালে ‘দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস’-এ একটি আর্টিকেলে তিনি এসব আহত সৈন্যদের দেখতে যাওয়ার কথা লিখেছিলেন। তিনি লেখেন, অনেক অসুস্থ ও আহত সৈন্য তাদের মা বাবা, ভাইবোন, এমনকি তাদের স্ত্রীদের কাছে দীর্ঘদিন ধরে লিখতে পারেনি। এদের মধ্যে কিছু সৈন্য লিখতে পারতো না, কিছু সৈন্য কাগজ-খাম এগুলো পেত না। আবার এদের ভেতর অনেকেই তাদের এই দুঃখ-দুর্দশার কথা পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনকে জানাতে চাইতো না, পাছে পরিবার দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এই ভয়ে। আমি এসব সৈন্যদের সাহস জোগাতাম এবং তাদের হয়ে চিঠি লিখে দিতাম।
বুডেল বলেন, ‘গৃহযুদ্ধের সময় হাসপাতাল তাদের জন্য নিরাপদ স্থান ছিল না, সেই জায়গা থেকে কবির এই স্বেচ্ছাসেবকতা তাদেরকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল।’
হুইটম্যান সরকারি চাকরি করতেন এবং তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ছুটে যেতেন এইসব মানুষদেরকে দেখতে। তিনি লেখেন, ‘প্রতিদিন আমি সব ওয়ার্ডগুলোর হিসাব রাখতাম, কোনটা যাতে বাদ না পড়ে সেটাও খেয়াল করতাম। তাদেরকে তৎপর হতে সাহস দিতাম। কোনোরকম হেলাফেলা করতাম না এ কাজে।’ টাইমস-এ তিনি আরও লেখেন, ‘একটা মিষ্টি বিস্কুট, চাদর, এমনকি বন্ধুভাবাপন্ন ক্ষণস্থায়ী কিছু শব্দ বিনিময়ও তাদের জন্য অনেক ছিল সেই সময়ে। তারা নড়াচড়া না করে শুধু তাকিয়ে থাকতো।’
কবি আহত সৈন্যদের জন্য ফল, মিছরি অল্প পরিমাণ অর্থও দিতেন। জ্যাকি বুডেল এনপিআর এর বরাত দিয়ে আরো জানান, ‘আমি মোটেই মনে করি না যে, শুধু আবেগের তাড়নায় কবি এইসব বালকদের পেছনে সময় ব্যয় করেছেন। আমি মনে করি কীভাবে তারা সবচেয়ে ভালো থাকতে পারে এই চেষ্টাই তিনি করে গেছেন।’
চিঠির সালটা দেখা যায় ১৮৬৫, এটা সত্ত্বেও ‘দ্যা ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার মতে এটা হবে ১৮৬৬। রবার্ট নেলসন জাবো ছিলেন একজন ফরাসি ক্যানাডিয়ান। থাকতেন ইউইয়র্কে। এই ব্যক্তির হয়েই হুইটম্যান উল্লিখিত চিঠিটি লেখেন। চিঠিটা জাবোর স্ত্রী এডেলাইনকে সম্বোধন করে লেখা। এই দম্পতির সন্তান ছিল ৬ জন। বুডেল জানান, ‘১৮৬১ থেকে ১৮৬৬ পর্যন্ত জাবো চাকরিতে ছিলেন এবং ১৮৬৬ সালেই তিনি মারা যান।’ তিনি আরও জানান, ‘ওয়াল্ট-এর ওই সময় দেওয়া ছিল তাদের জন্য সেরা উপহার। তারা সত্যিই চাইছিল কেউ একজন তাদের পাশে এসে বসুক।’
যুদ্ধের এই সময়টার কথা হুইটম্যানের ডায়েরি ‘মেমোরিয়ানডা ডিও’রিং দ্যা ওয়ার’-এ লিপিবদ্ধ আছে। হুইটম্যান চেয়েছিলেন পাঠক এই সময়টার কথা (যদিও খুব বেশি না) স্মরণ করুক, বিশেষ করে ‘লুরিড ইনটোরিয়াস’ এবং ‘হসপিটাল পার্ট অব দ্যা ড্রামা’ এই দুইটা অধ্যায় আলাদাভাবে মনোযোগ দাবি করে। গৃহযুদ্ধের ভেতর-বাহির দুটারই সন্নিবেশ ঘটেছে এই দুই অধ্যায়ে।
ইতিহাস সেসব ভয়ঙ্কর কালো অধ্যায়গুলো ঠেসে পুরে রেখেছে বর্তমানের চাপে। জ্যাকি বুডেল বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, অনেক সৈনিক সম্পর্কে এখনো আমাদের অজানা রয়ে গেছে এবং তাদের কী হয়েছিল সেটাও আমরা জানতে পারিনি। তাদের পরিবার তাদেরকে খুঁজে পায়নি কখনো। তারা জানতেও পারেনি ওসব সৈনিকরা তাদের পরিবারের জন্য কতই না চিন্তিত ছিলেন!’
হুইটম্যান যিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন কবি ও লেখক হিসেবে, সেই জায়গা থেকেও তিনি এসব মানুষদের সাহায্য করেছিলেন।
বুডেল বলেন, ‘সৈনিকরা যেটা বলতে সক্ষম ছিল না, কবি হুইটম্যান তাদের হয়ে এই মৌখিক কাজগুলো করে দিয়েছেন। আপনি কল্পনা করে দেখুন, এই কাজটুকু কত বড় ভূমিকা রেখেছিল সেই সময়ে।’
লেখাটি আমেরিকান অনলাইন পত্রিকা ‘এনপিআর’ থেকে অনূদিত