আধুনিক সাহিত্যের রূপ বৈশ্বিক : সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

সৈয়দ মনজুরুল ইসলামnonameআমি মনে করি, লিট ফেস্ট প্রধানত সাহিত্য উৎসব। একটি সাহিত্য উৎসব যেখানে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণত সেখানে সে দেশের সাহিত্য বিশেষভাবে প্রাধান্য পায়। ইংরেজি সাহিত্য বা বৈশ্বিক সাহিত্যের প্রাধান্যও কিন্তু এসব উৎসবে এমনিতেই চলে আসে। আমি এটা কলকাতাতেও দেখেছি এবং এখানেও এটা আছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা আমাদের সাহিত্যকে অবহেলা করছি। এমনকি যখন এটা ‘হে ফেস্টিভাল’ নামে ছিল তখনও এর উদ্যোক্তারা বাংলা সাহিত্যকে একটা বিশেষ জায়গা দিয়েছিলেন। এখন দেখতে পাচ্ছি, এই পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এখানে বাংলা সাহিত্যের একটা বিরাট জায়গা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এ উৎসবের বাংলা সেশনগুলো অনুবাদের মাধ্যমে অন্যান্য ভাষার লেখকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
এবার উদ্যোক্তারা জানালেন, যখনই কোনো সেশন হবে তারা চেষ্টা করবেন সঙ্গে সঙ্গে তা অনুবাদ করার। ধীরে ধীরে সবগুলো একটি দ্বিভাষিক সেশনের চেহারা পাবে। ফলে যখন কোনো ইংরেজি সেশন হবে তা অনায়াসে বাংলায় শোনা যাবে এবং বাংলা সেশন ইংরেজিতে। এভাবে বৈশ্বিক সাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে।
আমার অভিজ্ঞতা যা বলছে, যাঁরা বিদেশ থেকে আসছেন, তাঁরা এখানে থাকতে থাকতে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে তাঁদের আগ্রহ তৈরি হয়। যেহেতু তাঁরা বাংলা পড়তে পারেন না তাই অনুবাদের একটা প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। যেমন, ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টার, বেঙ্গল পাবলিকেশন এরা ভালো অনুবাদ করছে। ইউপিএল তো করছেই। কাজেই অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে আমরা বিদেশি সাহিত্যের দ্বারে পৌঁছে দিচ্ছি। আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে এটা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে। অনুবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাহিত্যকে কেউ যখন চিনবেন, তখন বাংলাদেশের সাহিত্য মূল ভাষায় পড়ার আগ্রহ তৈরি হতে পারে।

আমি এটা জানি যে, অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল না হতে পারলে কোনো দেশ সাহিত্য বা সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহ দেখায় না। যেহেতু আমরা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছি এবং আমাদের তরুণরা ইংরেজি ভাষায় লিখছেন, ভালো অনুবাদও হচ্ছে। আমরা এমন একটি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি যে, আমাদের সাহিত্য নিয়ে বাইরের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। বেশি বেশি অনুবাদ হলে আমরা বৈশ্বিক যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারবো।

যেকোনো সাহিত্যেরই বৈশ্বিক সাহিত্যের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমরা চাই বা না চাই। আধুনিক যুগে, আধুনিক সাহিত্যের রূপ হচ্ছে বৈশ্বিক। সেই বৈশ্বিকতার মধ্য দিয়েই আমরা সাহিত্যের নানান জিনিসের উপহার পাই। আজকে যারা বাংলা ভাষায় লিখছেন, তারা কিন্তু চোখ বন্ধ করে শুধু বাংলা সাহিত্যই লিখছেন না। সেটা যেমন কবিতায় তেমনি কথাসাহিত্যেও। পশ্চিমে আধুনিকতার যে ধারাটি চলছে সেটি কিন্তু আমরাও চর্চা করছি। কাজেই একজন নাইজেরিয়ান সাহিত্যিক ইংরেজিতে বা নাইজেরিয়ান ভাষায় লিখছেন তা আমরা পড়তে পারছি। ভারতীয়, আমেরিকান সাহিত্যও আমরা পড়তে পারছি। এতে করে আমাদের জ্ঞানও পরিপক্ক হচ্ছে। এই পরিপক্কতার জন্য আমরা যখন কোনো সাহিত্য অনুষ্ঠানে যাই, তখন আদান-প্রদানের একটা জায়গা তৈরি হয়ে যায়।

আমি মনে করি ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ ক্রমান্বয়ে বাংলা ভাষাকে যেভাবে মর্যাদার দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আরো চার থেকে পাঁচটি সাহিত্য উৎসবের পর এটি পৃথিবীর সাহিত্য উৎসবের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে নেবে। সাহিত্যপ্রেমীরা ক্যালেন্ডারে মার্ক করে রাখবেন, আমরা ঢাকায় যাবো। যেমন এবার ভি. এস. নাইপল আসছেন এবং তিনিও জানলেন বাংলাদেশ এ রকম একটি সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম : কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক

শ্রুতিগ্রহণ : ইয়াসমিন ইতি। শ্রুতিলিখন : আমিনুল ইসলাম


 

আরো পড়ুন-

এবার নাইপলের সঙ্গে সামনাসামনি কথা হবে : কায়সার হক