কবিতা ও চিত্রকলার যুগলবন্দি

nonameকবি হুমায়ূন কবিরের কবিতা অবলম্বনে চিত্রশিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে Life in Light : A display of Poetry in Paintings শীর্ষক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আজ ৩১ ডিসেম্বর, শনিবার, বিকাল ৫ টায় ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের আর্ট গ্যালারীতে। প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন দেশের বরেণ্য চিত্রশিল্পী আবুল বারাক আলভী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। এটি শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগরের তৃতীয় একক প্রদর্শনী। তার প্রথম চিত্রপ্রদর্শনী হয় ২০১২ সালে ঢাকার অঁলিয়স ফ্রসেসে। দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী হয় যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি রাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির ডাউনটাউন আর্ট গ্যালারীতে ২০১৫ সালে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে দলীয় প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। এবারের প্রদর্শনীতে শিল্পীর আঁকা ৩০টি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনীতে চিত্রকর্মের পাশাপাশি কবি হুমায়ূন কবিরের ৩০টি কবিতাও প্রদর্শিত হবে।
কবিতার সাথে চিত্রকলার সম্পর্ক খুবই পুরনো। পৃথিবীর অনেক কবিরাই ছবি এঁকেছেন, অনেক শিল্পীও কবিতা লিখেছেন। বলা যায়- কবিতা ও চিত্রকলার ভাষা একই, প্রকাশ মাধ্যম ভিন্ন।

হুমায়ূন কবিরকবিতাতে যা বক্তব্যরূপে আসে, চিত্রকলায় তা ইমেজ। কবিতায় চিত্রকল্প বলে একটা বিষয়ও আছে। কোনো কবিতা পড়তে গেলেই তার কোনো না কোনো দৃশ্য মানুষের মনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। হুমায়ূন কবিরের কবিতায় রয়েছে বিচিত্র চিত্রকল্প। তার কবিতার মর্মমূলে রয়েছে সহজিয়াবাদ। ফলে কবিতাগুলো পাঠের সময় চিন্তালোকে আসে একধরনের বিমূর্ততা। ছবিগুলো আঁকতে গিয়ে শিল্পী একটা বিষয়ে দায়িত্বশীল ছিলেন, ছবিগুলো যেনো কেবল অলঙ্করণ না হয়ে যায়। যেনো তা সম্পূর্ণরূপেই এক একটি চিত্রকর্ম হয়ে ওঠে, সাথে হুমায়ূন কবিরের কবিতাকেও প্রতিনিধিত্ব করে।
মোস্তাফিজ কারিগরহুমায়ূন কবিরের কবিতায় রূপকের ব্যবহার ঘটেছে বহুভাবে, যা ক্যানভাসে চিত্রিত করতে গিয়ে শিল্পীকে একধরনের ইনফিনিটির দিকে নিয়ে গিয়েছে এবং ছবিগুলো একধরণের কাব্যময়তায় মগ্ন হয়ে এঁকে গেছেন শিল্পী। কবির কবিতার অংশবিশেষও ক্যানভাসে ক্যালিগ্রাফিক ইমেজে রেখেছেন শিল্পী, কখনো কখনো যা কবির পুরানো পাণ্ডুলিপির মতো দেখায়। তার কবিতায় মানুষের জীবনের নানা বিমূর্ত মরমিয়া ভাবনা প্রকাশ পেয়েছে- আর এই বিমূর্ততারও তো একটা রূপ আছে। হুমায়ূন কবিরের এই বিমূর্ত মরমীয়া রূপকেই শিল্পী ধরতে চেয়েছে বিভিন্ন রঙে, কখনো রেখায়।
তার কবিতার ভাষা বা বক্তব্যকে শিল্পী সরাসরি চিত্রকর্মে না এনে, আদতে তার কবিতার ভাবেরই একটা চিত্রায়ণ করেছেন। ফলে কবিতাগুলো পড়লে যেমন একটি মরমীয়া জগৎ তৈরি হয়, তেমনি চিত্রকর্মগুলোর ভেতরেও এক ধরনের আলো-আঁধারির সৃষ্টি হয়েছে। মূলত শিল্পীর আঁকা এই চিত্রগুলো সত্যিকার অর্থেই চিত্র-কবিতা বলা ভাল।
প্রদর্শনী চলবে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ থেকে ৬ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রদর্শনী সকলের জন্যে উন্মুক্ত।