অবশেষে বইমেলা

অবশেষে অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ।

‘অবেশেষে’ কথাটা বইমেলার সঙ্গে জুড়ে না দিলে বোধ হয় বইমেলা নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল তা বোঝানো যাবে না। এই অনিশ্চয়তার মূলে ছিল বৈশ্বিক ‘কোভিড-১৯’ মহামারির সংক্রমণ। এই সংক্রমণ আমাদের শিখিয়েছে ‘সামাজিক দূরত্ব’, ‘আইসোলেশন’, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার’, ‘মাস্ক’ নামক কিছু শব্দমালা এবং শ্বাসকষ্টে অক্সিজেনের নল না-পাওয়ার, বা নিজ থেকে অক্সিজেন টেনে নিতে না-পারার সীমাবদ্ধতা।  

বাণিজ্যমেলা হয়নি। বইমেলা হবে এই আশা করার দূরস্থান। কিন্তু লেখক-পাঠক-প্রকাশকরা ছিলেন নাছোর, তারা বইমেলা চান-ই চান। কারণ বইমেলা শুধুমাত্র মেলাই নয়। এটি বাঙালির একটি আবেগের বিষয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভাষা শহিদের স্মৃতি, সাংস্কৃতিক সংগ্রামের দীর্ঘ ঐতিহ্য।

এর আগে শোনা গেছে ‘ভার্চ্যুয়াল বইমেলা’ অনুষ্ঠিত হবে। ভার্চ্যুয়ালি বইমেলার রূপ রঙ কী তা আমরা জানি না। বইমেলা তো শুধু বইয়ের বেচাকেনা নয়, এটা মিলনমেলা, প্রাণের সঙ্গে প্রাণের। নবীন-প্রবীণ লেখকদের নতুন নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, লিটলম্যাগাজিনের স্টল; দেশের সকল প্রান্ত থেকে সাহিত্যমোদিরা আসেন যার স্পর্শ নিতে।

অবশেষে বইমেলা বাস্তবেই হলো। বাংলা একাডেমির মূল চত্ত্বর পেরিয়ে বরাবরের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত এর বিস্তৃতি হয়েছে। গতকাল মেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায় প্রকাশকরা স্টল বানানোর কাজ প্রায় শেষ করে এনেছেন। বই সাজাতে ব্যস্ত বিক্রয়কর্মীরা।  

তবে প্রকাশকদের মনে স্টল বিন্যাস নিয়ে অসন্তোষ আঁচ করা গিয়েছে। তাদের মতে, মূল প্রাঙ্গনে বেশিরভাগ প্যাভিলিয়ন থাকায় এক ও দুই ইউনিট স্টলের প্রকাশকরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। যে কারণে সর্বত্র পাঠকের উপস্থিতি কম থাকবে বলে তারা মনে করেন।   

আজ বেলা তিনটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি বইমেলা উদ্বোধন করবেন। এটি বইমেলার ৩৭ তম আয়োজন।

বরাবরের মতো বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মঞ্চ করা হয়েছে। সেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও মাসব্যাপী অনুষ্ঠানের কার্যক্রমও চলবে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি মেলার উদ্বোধনের পর বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা আমার দেখা ‘নয়াচীন’ বইটির ইংরেজি অনুবাদ ‘নিউ চায়না-১৯৫২’–এর মোড়ক উন্মোচন করবেন।

মেলা উৎসর্গ করা হবে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি। মেলার থিম ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী’।

মেলায় প্রবেশের জন্য সবাইকে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।