পরিসর বাড়লেও নান্দনিকতায় ঘাটতি রয়েছে

[ রাজু আলাউদ্দিনের জন্ম ৬ মে ১৯৬৫ সালে, শরীয়তপুর। মূলত কবি, প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক। কবি ও প্রাবন্ধিক হিসেবে তিনি লেখক ও পাঠক মহলে নন্দিত হয়ে আছেন সৃজনশীলতা ও মননের এক অনন্য ভুবন নির্মাণের কারণে। অনুবাদক হিসেবেও তিনি ভিন্ন পথের নির্মাতা। হোর্হে লুইস বোর্হেসসহ লাতিন আমেরিকার বহু লেখককে তিনি বাংলা ভাষায় ব্যাপকভাবে পরিচিত করে তুলেছেন অনুবাদের মাধ্যমে। দুই বাংলায় তিনি আমাদের একমাত্র বোর্হেস-বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। রাজু আলাউদ্দিনের কবিতা ও প্রবন্ধ ইতিমধ্যে ইংরেজি, সুইডিশ এবং স্প্যানিশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২ প্রসঙ্গে কথা বলেন এই লেখক ]

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ বইমেলা কেমন চান?
উত্তর :
প্রচুর মানুষ মেলায় আসুক—তা সে বই কিনুক বা না কিনুক—এমনটাই তো চেয়েছিলাম। এই চাওয়ার সবটা তো পূরণ হবার নয়। প্রথমত, কোভিডের কারণে, দ্বিতীয়ত, মেলার যারা পরিকল্পনা করে তাদের সাথে আমার আকাঙ্ক্ষার দূরত্বের কারণে। মেলার পরিসর যদিও বেড়েছে, কিন্তু এখনও এর নান্দনিকতায় ঘাটতি আছে অনেক। কেবল জায়গা বাড়ালেই হবে না। দুটি মাত্র প্রবেশপথ দিয়ে মানুষের প্রবেশ খুব কঠিন হয়ে পড়ে। প্রবেশ পথ বাড়ানো উচিত। শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক পরিবেশ ও খেলার উপকরণও যুক্ত করা উচিত। অনেক শিশু আসবে, এদের অনেকেই বই কিনবে, কেউ হয়তো কিনবে না। কিন্তু না কিনলেও মেলার প্রতি আকর্ষণ বাড়াবার জন্য এমন সব উপকরণ দিতে হবে যাতে সে মেলার পরিবেশটিকে নিজের মনে করতে পারে। আর উপকরণগুলোকে বইয়ের থিম দিয়েই করা যেতে পারে। অন্যদিকে খাবারের দোকানগুলিকে নানান জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া উচিত। এগুলো করতে পারলে ভালো হয়।

প্রশ্ন : এ বছর আপনার কি কি বই আসবে? কোন প্রকাশনা থেকে?
উত্তর :
এ বছর মোটামুটি নিশ্চিত যে-কটি বই আসবে তার মধ্যে 'নির্বাচিত বোর্হেস' যেটি কাগজ প্রকাশনী থেকে বেরুবে। বইটি আগে প্রকাশিত চারটি খণ্ডই এবার অখণ্ড রূপে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, তবে তা পরিমার্জিত, সংশোধিত ও খানিকটা পরিবর্ধিত রূপে। আগের সংস্করণটি বহু আগেই ফুরিয়ে গিয়েছিল। বহুজনের আগ্রহ ও উৎসাহে এবার দ্বিতীয় সংস্করণ বেরুতে যাচ্ছে। বাকি যেগুলো বেরুবে, সেগুলো সবই নতুন। আমার দ্বিতীয় কবিতার বই 'আশ্চর্য এই বই ও অন্যান্য কবিতা' এবং 'গার্সিয়া মার্কেসের খোঁজে কলম্বিয়ায়' নামক ভ্রমণকাহিনি বেরুতে যাচ্ছে অন্যপ্রকাশ থেকে। এ ছাড়া, পাঠক সমাবেশ থেকে বেরুতে যাচ্ছে 'বোর্হেস ও মারিও : আলাপে পরস্পর' নামে প্রবন্ধ ও অনুবাদের একটি মিশ্রপ্রকৃতির বই। ‘ভলতেয়ার : আলোকায়নের অগ্নিপুরুষ’ নামে আমার একটি প্রবন্ধের বই বেরুবে আদর্শ প্রকাশনী থেকে। এই বইটি আমার পুরোপুরি গত বছরের কোভিডকালীন ফল। এই বইটিতে আমার নিজের বেশ কিছু নিজস্ব পর্যবেক্ষণ ও আবিষ্কার, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ আছে। আরও দুটো বই বেরুবার কথা, কিন্তু আমি এখনও নিশ্চিত নই বলে ওগুলোর কথা উল্লেখ করতে চাই না।

প্রশ্ন : প্রকাশিতব্য বই সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর :
আপনার আগের প্রশ্নের জবাবেই এই প্রশ্নের উত্তরগুলো আছে।

প্রশ্ন : অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১-এর অভিজ্ঞতা কেমন?
উত্তর :
দুঃখজনক। এবং প্রকাশকদের কথা ভাবলে তা বেদনাদায়কও বটে। কিন্তু এ নিয়ে দুঃখ করার কিছু নেই। গোটা পৃথিবীই তো কোভিডের কামড়ে বিপন্নপ্রায়। এখন বেঁচে থাকাটাই প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।

প্রশ্ন : বইমেলার পর আমাদের বই খুঁজে পাওয়া যায় না এবং বইয়ের দোকানও স্বল্প। এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে আপনার ভাবনা যদি জানাতেন।
উত্তর : দেখুন, এই বিষয় নিয়ে আমি অনেক আগেই বহুবার বলেছি। গোটা বছরের প্রকাশিত বই নিয়ে এই একটি মাসে তারা মেলায় হাজির হয়, অন্য কোনো বছরের তাদের আর কোনো আওয়াজ শোনা যায় না। একইভাবে গণমাধ্যমগুলো গোটা বছরের কোনো সময়ই বই নিয়ে প্রায় কিছুই বলে না। কিন্তু এই একটি মাসে তারা প্রমোদে ঢালিয়া দিল মন। কেন, বই কি বাঙালি পাঠকদের এক মাসের খোরাক? বাকি সময় কি বাঙালি পাঠ না করে কাটাচ্ছে, কিংবা বই থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন এক নিরক্ষর জীবন যাপন করছে? গণমাধ্যমগুলো এত অসংবেদনশীল যে এদেরকে পুরোপুরি পাশবিক পর্যায়ের বলে মনে হয়। এরা শতভাগ বাণিজ্যের বাইরে এখন আর কিছুই চিন্তা করতে পারে না। আপনি বলুন, এই অবস্থায় কীভাবে আপনি বই খুঁজে পাবেন? বইয়ের দোকানগুলো এখন কাপড় বা হোটেল হয়ে যাচ্ছে। কারণ বাঙালি পড়তে ভালো না বাসলেও কাপড় পরতে ভালোবাসে, বইয়ের দোকানে যেতে না চাইলেও, খাবারের দোকানে যেতে তার আকর্ষণের কোনো কমতি নেই। ‘এই পরিস্থিতিতে বই পাঠকের কাছে পৌঁছাতে’ আমার পরামর্শ? এটা দীর্ঘ আলাপ হয়ে দাঁড়াবে। আপনার যদি সময় ও স্থানের সংকুলান হয় তখন না হয় কথা বলা যাবে।