এই পঞ্চাশ বছর অনেক টানাপড়েনের ভেতর দিয়ে এসেছি ।। সেলিনা হোসেন

সেলিনা হোসেন বাংলাদেশের প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক। জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন, রাজশাহী শহরে। তার লেখায় প্রতিফলিত হয়েছে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক সংকট এবং ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। ইংরেজি, রুশ, মেলে ও কানাড়ি ভাষায় তার গল্প-উপন্যাস অনূদিত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, কবিতা, শিশুসাহিত্য ও সম্পাদিত গ্রন্থ শতাধিক। বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশ-বিদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারটি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গ্রহণ করা হয়েছিল। 

 
জাহিদ সোহাগ : আপা, বিজয়ের সংবাদটা প্রথম কীভাবে পেলেন?
সেলিনা হোসেন : বিজয়ের দিন ঢাকায় ছিলাম। এলিফ্যান্ট রোডে। মিত্রবাহিনীকে এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে যেতে দেখেছি। আমার একজন শিক্ষক ছিলেন প্রাবন্ধিক-ফোকলোরবিদ অধ্যাপক আব্দুল হাফিজ। তিনি ওই সময় ঢাকায় ঢুকেছেন। তিনি আমার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। তিনি বাসায় এসেও আমাকে একই সংবাদ দিলেন।

জাহিদ সোহাগ : তখন কেমন লেগেছিল? পরিবারের অন্যদের অনুভূতি কেমন ছিল?
সেলিনা হোসেন : আমি তো আর একা না। পরিবারের সবাই মিলে উৎফুল্ল হয়ে উঠি। আমার বাবা-মা রাজশাহীতে থাকতেন। বিহারিরা আমাদের রাজশাহীর বাড়ি লুটপাট করেছিল। তখন বাবা-মা এবং ভাই-বোন আমার কাছে চলে এসেছিল ঢাকায়। বড় বোন ছিল চট্টগ্রামে। তাকেও নানা সমস্যায় পড়তে হয়েছিল দেখে তিনিও ঢাকায় এসেছিলেন। তো একটা বড় পরিবার—খুব উৎফুল্ল হয়ে সেদিন আনন্দ করেছি।

জাহিদ সোহাগ : দারুণ স্মৃতি। যুদ্ধের সময় সবারই ভয়-আশঙ্কা থাকে, সঙ্গে কিছু আশাও থাকে। স্বাধীনতার পর আপনি কী দেখেছিলেন? বাংলাদেশটা কী করে গড়ে তোলা হচ্ছিল?
সেলিনা হোসেন : আমার সবচেয়ে কষ্ট লেগেছে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে গিয়ে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপককে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে—এসব জেনেছি, দেখেছি। আবার স্বাধীনতা—বিজয়, গভীর আনন্দের একটা জায়গা ছিল যে আমার দেশ স্বাধীন হলো। বেদনা ও আনন্দ মিলে এই অনুভবই ছিল আমার স্বাধীনতার বড় স্মৃতি।

জাহিদ সোহাগ : আমাদের ইশতেহার এমন ছিল যে শোষণমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সমতা, সুশিক্ষা-সংস্কৃতি—এমন দেশ পাওয়ার আকাক্সক্ষা আপনার ছিল?
সেলিনা হোসেন : অবশ্যই ছিল। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলাম। মার্কস-এঙ্গেলস পড়তাম। এসব পড়ার পর মনে হয়েছিল, এই রাজনীতি যদি আমাদের স্বাধীনতার পরে আসে, তাহলে ফুটপাতে শুয়ে থাকা লোকটি ঘর পাবে, থালাভর্তি খাবার পাবে, তার ছেলেটি-মেয়েটি স্কুলে যেতে পারবে। এরকম বড় স্বপ্ন তো ছিলই। 

জাহিদ সোহাগ : বঙ্গবন্ধুর সেই প্রয়াসটা ছিল। কিন্তু ইতিহাসের একটা কালো অধ্যায় শুধু তার জীবনে নয়, বাঙালির জীবনেও ঘটে গেলো। নানান চড়াই-উতরাই করে, আমরা আবার পথে ফিরতে পেরেছি। আমরা যারা নিজেদের বাঙালি বলি, মুক্তিযুদ্ধকে যারা ধারণ করি, নতুন করে সেই পথে আমরা আবার কী দেখছি? ৫০ বছর পর সেই কাক্সিক্ষত বাংলাদেশের পথে হাঁটছি?
সেলিনা হোসেন : এই পঞ্চাশ বছর অনেক টানাপড়েনের ভেতর দিয়ে এসেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সরকার এসেছে। জনগণের মধ্যেও এরকম কিছু ছিল, যারা মৌলবাদী। তো এখন আমরা অনেকটা এগিয়েছি। অন্তত চেতনাগত এবং ধারণাগত দিক থেকে। উন্নয়নের ধারণাটা আরও বেগবান হওয়া উচিত। আমি একবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক বক্তৃতায় শুনেছিলাম গৃহহীনদের গৃহ দেওয়া হবে। এটা শুনে খুব উৎফুল্ল হয়েছিলাম যে এই ধরনের চিন্তা যেন আমাদের সরকারের মধ্যে সবসময় থাকে। যে মানুষকে কখনও খারাপ জায়গায় রাখা উচিত হবে না। তারা শিক্ষা পাবে, স্বাস্থ্য পাবে, সব ধরনের মর্যাদা পাবে। এসব নিয়ে যেন আমাদের দেশ বড় হয়।

জাহিদ সোহাগ : বাস্তবে যদি দেখি, ফুটপাতের অনেক শিশু ফুটপাতেই রয়ে গেছে। চিকিৎসাতেও যা আকাক্সক্ষা ছিল, তেমনটি পেলাম না। শিক্ষা নিয়ে আমরা আশাহত যে যেমন শিক্ষা চাই, সেটা আমাদের নেই। একটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ সবাই চেয়েছিলাম—কিন্তু একের পর এক ঘটনা ঘটতে দেখছি। সেগুলো নিয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সুষ্ঠু বিচারের জায়গায় যাওয়া কিংবা সামাজিকভাবে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ দেখছেন?
সেলিনা হোসেন : সেসব উদ্যোগ হচ্ছে না। হলে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও আমরা দেখতাম না যে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব আক্রান্ত হচ্ছে। আমরা কেন এভাবে এসব চিন্তা করবো? আমরা তো সেই সেøাগান দিচ্ছি, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’। তাহলে কেন একটি সম্প্রদায়ের মানুষেরা এভাবে আহত হবে! সুতরাং এই উদ্যোগটা সরকারিভাবে আরও গভীরভাবে নেওয়া উচিত। সরকারি পর্যায়ে যদি গভীরভাবে বিষয়গুলো ঠিক করা হয়, তখন গণমানুষের চিন্তাও এইভাবে তৈরি হবে। আমি মনে করি, এই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, এই স্বপ্ন যেন আমাদের কাছ থেকে নষ্ট হয়ে না যায়। আমরা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের মানুষ হতে পারি।

জাহিদ সোহাগ : আপনি কি অবাক হয়েছেন যে আমাদের স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের প্রতীকযুক্ত টি-শার্ট গায়ে পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশি যুবকরা এসেছিল? 
সেলিনা হোসেন : খুব খারাপভাবে দেখেছি। অবাক হয়েছি বলবো না, তবে খুব রাগ হয়েছে। মনে হয়েছিল এদের শাস্তি দেওয়া উচিত। কোন সাহসে এত বড় একটা কাজ করে? পাকিস্তান একটি দল হিসেবে আরেকটি দলের বিপক্ষে ভালো খেললে, সে সেই দলটিকে সাপোর্ট করতে পারে, সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু তাদের পতাকা, তাদের জার্সি, এসবের তো যুক্তি নেই। অন্তত বাংলাদেশে বসে।

জাহিদ সোহাগ : এ প্রজন্মকে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি—এসব কি তাদের পাঠ্যপুস্তকের মধ্য দিয়ে বা সামাজিক সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে জানাতে পেরেছি?
সেলিনা হোসেন : ঠিকভাবে পারিনি। আরও চেষ্টা করতে হবে। এটা সরকারি পর্যায়ে প্রতিটি স্কুলে, কলেজের পাঠ্যক্রমে যদি না রাখা হয়; তাহলে ব্যক্তিগতভাবে কারও পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।

জাহিদ সোহাগ : আমরা কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন কেন বাস্তবায়ন করলাম না? 
সেলিনা হোসেন : ওই তো, রাজনীতি নানা কিছু করে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এগুলো হতে দিতেন না। তিনি এসব নিঃশেষ করে দিতেন। রাজনীতির এসব জিনিস নিয়ে তো আমাদের কথা বলার সুযোগ নেই।

জাহিদ সোহাগ : এতে কি রাজনীতির লাভ হয়েছে? সাম্প্রদায়িক ইস্যু নিয়ে বড় দুই দলই রাজনীতি করলো। তাতে কি কেউ খুব লাভবান হয়েছে?
সেলিনা হোসেন : একদমই না। কী লাভবান হয়েছে! যারা আক্রমণ করেছে তারা কী লাভবান হয়েছে? তারা তো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমি তো মনে করবো যে চেতনাগত দিক থেকে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানুষ তাদের ঘৃণা করবে, অবজ্ঞা করবে।

জাহিদ সোহাগ : এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ক্ষমতায়। কিন্তু, এই সরকারের আমলেও বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ শুনছি পত্রপত্রিকায়। এটা কি সরকারের অসহায়ত্ব নাকি ব্যর্থতা?
সেলিনা হোসেন : আমি পীড়া অনুভব করি এবং সরকারের ব্যর্থতা মনে করি। সরকার কেন পারবে না! সরকারের তো পারা উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার অনেক প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে যদি এগিয়ে নিয়ে যান, সেটাই হবে সবচেয়ে বড় কথা। এই দুর্নীতি কেন আমাদের সমাজকে এমনভাবে নষ্ট করছে? এটা কীভাবে করছে? যারা করছে তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হয় না কেন? তারপর এই যে নারী-শিশু নির্যাতন, যারা ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় এদের কেন কঠিন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না!

জাহিদ সোহাগ : এক্ষেত্রে নাগরিক হিসেবে আপনি কি অসহায় বোধ করেন?
সেলিনা হোসেন : একদম অসহায় বোধ করি। কিন্তু নাগরিক হিসেবে তো কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারবে না। 

জাহিদ সোহাগ : আপনি যা বলতে চান তা বলার জন্য রাষ্ট্র-সমাজ উপযুক্ত অবস্থায় নেই, এমন কি মনে হয় লেখার সময়?
সেলিনা হোসেন : হ্যাঁ, কখনও কখনও হয়।

জাহিদ সোহাগ : আপনি তো একদম পাকিস্তান আমল থেকেই লেখালেখি করছেন। 
সেলিনা হোসেন : হ্যাঁ।

জাহিদ সোহাগ : স্বাধীনতার পর, আপনাদের মতো প্রজন্ম কেন আরও গড়ে উঠলো না? আমরা কেন আপসকামিতার মধ্যে গেলাম? 
সেলিনা হোসেন : এগুলো তো আমি বলতে পারবো না। এগুলো অনেক বড় কথা, অনেক ব্যাখ্যা। 

জাহিদ সোহাগ : এমনিতে ৫০ বছরের মোটাদাগে বাংলাদেশের সাফল্য আসলে কী?
সেলিনা হোসেন : প্রথমত, আমাদের এই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপর—বাংলা ভাষায় ভাষণ দেওয়া হয়েছে জাতিসংঘে। প্রধানমন্ত্রী এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা—এটাও একটা বড় দিক। আমাদের শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হলো।

জাহিদ সোহাগ : যুদ্ধাপরাধীদের বিচার?
সেলিনা হোসেন : হ্যাঁ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও বাংলাদেশের অর্জন। আমার মনে হয়, যত সরকারই ক্ষমতায় আসুক, তাদের উচিত আমাদের সার্বভৌম দেশটাকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রতিষ্ঠা করা। 

জাহিদ সোহাগ : আর কী কী হওয়া উচিত?
সেলিনা হোসেন : আমাদের সরকার যেন অনুবাদের একটি ইনস্টিটিউট করে। যাতে আমাদের সাহিত্য, শিল্প, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বাইরের বিশ্বে যাওয়ার সুযোগ পায়। মানুষ আমাদের চলচ্চিত্র দেখে যেন খুশি হয়। আমাদের সাহিত্য পড়ে বিদেশিরা যেন বুঝতে পারে বাংলাদেশের সাহিত্য কী! আমাদের যারা পেইন্টিং করে তাদের জন্যও একটা ইনস্টিটিউট করে এ ধরনের কিছু করা হোক।

জাহিদ সোহাগ : আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সারা দেশেই হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে পাকা রাস্তা হয়েছে। সেসব করতে গিয়ে আমরা প্রকৃতি নষ্ট করেছি বা ভারসাম্য রক্ষা করিনি। উন্নয়নের বিপরীতে একটা অন্ধকার আমরা লক্ষ করি সবসময়। ছোট খালের প্রবাহ বন্ধ হয়েছে, নদীর প্রবাহ নেই। এগুলোর কীভাবে দেখভাল করতে হবে?
সেলিনা হোসেন : এগুলো তো সরকার দেখবে। 

জাহিদ সোহাগ : কিন্তু এসব নিয়ে তো কেউ ভাবছে না।
সেলিনা হোসেন : কেউ ভাববে না কেন! জনগণ আছে, যারা নদী নিয়ে কাজ করছেন বা কৃষি কাজ করছেন এদেরও তো বিষয়গুলো দেখা উচিত। তারাই বা কেন দেখছে না! সরকারের কাছে বলছে না কেন! প্রতিবাদ করছে না কেন! কথাগুলো বলে যদি সরকারকে বাধ্য করতে পারি যে করেন এইটা। তাহলে তো এই ধরনের সমস্যা থাকে না।

জাহিদ সোহাগ : এমনিতে এখন আপনি বাংলাদেশ নিয়ে কী স্বপ্ন দেখছেন?
সেলিনা হোসেন : বিশ্বের অনেক জায়গায় বাঙালিরা আছেন। যদি আমরা বিশ্বের মর্যাদায় দেশটাকে ওঠাতে পারি তাহলে সব দেশের মানুষ আমাদের বাংলাদেশকে স্যালুট করবে।

জাহিদ সোহাগ : সেই পথে যাওয়ার উপায় কী? অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা...
সেলিনা হোসেন : অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিক্ষা, সবকিছু মিলে আমাদের চেতনা। সবকিছু মিলে এগুলো তৈরি করতে হবে।

জাহিদ সোহাগ : বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দেখছেন, এই অনুভূতি কেমন?
সেলিনা হোসেন : বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী দেখছি। কিন্তু সুবর্ণতে যত অগ্রগতি হওয়া উচিত ছিল সেটা হয়নি বলে কষ্ট পাই।

জাহিদ সোহাগ : আপনাদের প্রজন্মের যাদের সঙ্গেই কথা বলতে যাই, প্রায় সবাই এই কষ্টের কথাটাই বলেন। প্রশংসারও কমতি নেই, কিন্তু এই কষ্টের কথাটা আছেই। আপনার কি কখনও মনে হয় না যে আসলে কেন এই সামান্য কাজটা সরকার করতে পারে না? কেন পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে পারে না? 
সেলিনা হোসেন : মনে হয়। পারে না যেটা, সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে হয় না। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়া কি খুব কঠিন? যারা দুর্নীতি করে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া কি কঠিন? যারা অন্যায় করে, ধর্ষণের মতো কাজ করে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া কি কঠিন কাজ? তাহলে কেন করে না! তার মানে এখানে রাজনীতি খেলা করে। এসব করলে আবার হয়তো ভোট কম পাবে। এটাও হতে পারে।

জাহিদ সোহাগ : আপনার স্বপ্নের বাংলাদেশটা কেমন সেটা শুনতে চাই।
সেলিনা হোসেন : আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ এতক্ষণ যা বললাম তার সবটুকু। এখানে কেউ গৃহহীন থাকবে না, কোনও নদী নষ্ট হবে না, কৃষি উৎপাদন অনেক বেশি হবে। আমাদের শিক্ষার জায়গাতেও আরও কাজ করতে হবে। 
‘গায়ত্রীসন্ধ্যা’ উপন্যাসের জন্য একটি পুরস্কার পেয়েছিলাম—১০ লক্ষ রুপি। আমি পেয়েছিলাম আর ইমদাদুল হক মিলন বাংলাদেশ থেকে, ওইদিক থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর সমরেশ মজুমদার পেয়েছিল। সেই টাকাটা দিয়ে আমার হাজব্যান্ড ওর বাবার কাছ থেকে যেসব জমি পেয়েছিল তাতে একটা স্কুল ও একটা কলেজ করেছে। আমি তো মহাখুশি। সবসময় সাপোর্ট করি। যেমন, আমার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’-এর তিন লাখ টাকা কলেজে দিয়ে বলেছি, এটা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাবৃত্তি। একটি ছেলেমেয়েও যেন ফি’র কারণে পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। সেদিন বক্তৃতায় বলেছি, প্রত্যেকটি ঘরের সব ছেলেমেয়ে এসএসসি পাস করা থাকবে। নিরক্ষর গ্রাম কোথাও থাকবে না।