পাণ্ডুলিপি

‘অন্তঃস্থ আ’ থেকে

১১.৬.২০। ১০:৪৫ সকাল

আজও মশারি কুড়োলাম মশার বাইরে থেকে। না, ভুল হলো—মশা কুড়োলাম মশারির বাইরে থেকে। যেভাবে শেফালি কুড়াতাম এককালে। আজ নয়টা। কাল ছিল গোটা ছয়েক। তার আগে চারটা। ক্রমবৃদ্ধি হচ্ছে—মশার ঔষধ ছিটানো হচ্ছে কিনা!

আজ কয়েকরাত বারান্দার দরজা খোলা রাখছি বেশি গরম পড়ায় (রাস্তায় মানুষ-গাড়ি বাড়ায় বোধকরি) আর টেবিল ফ্যানটা মশারির মুখের কাছে। মশারা একটানা বাতাসে মশারির গায়ে আটকে ধারণাকরি দমবন্ধ হয়ে মরছে। বাজে মৃত্যু। আমিই দায়ী।
* * *
আমারও দমবন্ধ লাগে। একটু বেশিকিছু ভাবতে গেলেই অবশ লাগছে পেশি-টেশি। আর সাথে শর্টনেস অফ ব্রেথ। আর বুকে খানিকটা ইয়ে। সে হতেই পারে—হার্টের (হার্ট মানে হার্ট, মেটাফরিক অর্থে নয়) দোষ দিই না। ভাবি মানুষের এতবড় ঘিলু (গড়ে ১.৪ কেজি) না গড়ে উঠলেই হতো ভালো—পৃথিবীর কী এমন লাভ হলো? এই ঘিলুর কারণেই অর্থলিপ্সু হয়ে ক্লাইমেটের ড্যাশ মেরে দিলাম আমরা। ব্যক্তি লেভেলে? তা-ই বা হলো কই? হ্যাঁ গর্ব-টর্ব হয় বৈকি—দেখো আমি কত ভাবুক; এমনকি গাছের পাতা নড়লেও আমার চিন্তার সূত্র এমনভাবে মোড় নিতে পারে যে...অথবা আকাশে একটা চাঁদ দেখলে, একটা মানুষের ঘাড়ের একটু অনাবৃত অংশ দেখে, একটা অপরিচিত সুর শুনলে-ভাবতে পারি কত কিছু, কত কাকে, কত কী! কিন্তু তাতে কী হলো এমন বালটা? এত যন্ত্রণার কেন হবে প্রায় সবটাই! বলছি না আনন্দের কোনো ভাবনা নেই, মেমোরি নেই—আছে—কিন্তু সেসবই তো যন্ত্রণা। বিলাসিতা আরকি। কত মানুষ খেতে পায় না আর আমি ভাবনার বিলাসিতা মারাচ্ছি।
* * *
কালও রাস্তায় নেমে এক লক্ষ মানুষ দেখলাম আমার পরিচিত। এটা কেমন? প্রায় সবাই মাস্ক পরা তাই দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে। সে-ও ভাবে আমাকে চেনে। তাই একটু বেশি করে তাকানো হয়। এতক্ষণ আমি অপরিচিত কারো দিকে তাকাই না। একজনের দিকে একটু বেশি তাকানো হয়ে গেল তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে। দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে বাধ্য হয়ে মুখের দিকে উঠলাম। ভয় পেয়েও। গ্রীবা পর্যন্ত উঠে আরো ভয় পেলাম। মুখটা বাঁচিয়ে দিলো। কিন্তু এতক্ষণ তাকানো ঠিক হয়নি। সে-ও দেখেছে আমি তাকিয়েছি এভাবে এবং নিশ্চয়ই অস্বস্তি বোধ করেছে। ভেবেছি গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিই—বলি যে আমি ভুল, অন্য, ইত্যাদি...বলা হলো না, তার জন্য যে শক্তি দরকার তা আমার ছিল না, থাকে না।
* * *
জাহিদ বলল কাজে ডুবে থাকেন। আর বাস্তব ফেইস করেন। ও একটা অনুবাদ-একাঙ্ক চাইছিল। বললাম শুরু তো করা আছে কিন্তু বল পাই না। আর কত। এটা নতুন কিছু নয়। বাস্তব তো ফেইস করতে-করতে ফেইসওয়াশড হয়ে যাচ্ছি।

মনে পড়েছে যখন বললাম, কোথাও চলে যাওয়া দরকার তখন ও বলেছিল বাস্তবকে ফেইস করতে পালিয়ে না গিয়ে। ভালো পরামর্শ। নতুন না অবশ্য।

...যখন বলেছিলাম জবটা যদি ছেড়ে দিতে পারতাম আর পাহাড়ে গিয়ে...। জব ছাড়ার কী দরকার? দরকার তো একটা আছেই।