কুমার চক্রবর্তীর

‘অধিবিদ্যা সিরিজ’ থেকে

nonameএকুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে কুমার চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থ ‘অধিবিদ্যা সিরিজ’ প্রকাশ করছে চৈতন্য। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। মূল্য ১৬০ টাকা।

 

নিদ্রাহীনতা


ঘুম জীবিতের
মৃতরা তো নিদ্রাহীন


তরঙ্গের
চোখ খুলি, বুঝি
দূরত্বের রয়েছে যে দায়
মরুভূমি উটের আয়না
জিরাফ তো দাঁড়িয়ে ঘুমায়

 

দ্বিত্ব

 

নদীগুলো হলো রেখা
যা রচনা করে বৃত্ত―সমুদ্রের,
পাথর জানে এই ইতিহাস,
কেননা তাদের রয়েছে স্তব্ধতা
যা একাকার করে হ্রস্ব আর দীর্ঘতার
গূঢ়ৈষা


আমরা―আসলে দুটিই:
জীবন ও মৃত্যুর।

 

অঙ্ক

আমার মধ্যে যা নেই
তা রয়েছে তোমার ভেতরে
তোমার মধ্যে যা নেই
তা রয়েছে বৃক্ষের ভেতরে


: স্তব্ধ, আর স্তবকিত

 


পরিবর্তন

যা উঁকি দেয় শরীরে তোমার
: কঙ্কাল
প্রস্তুতি নেয়
: রূপান্তরে


অনন্তের
: তৃষ্ণায়

 

মদ


ওক গাছের পিঁপের ভেতর
ছলকে ওঠা মদ
এখন
মাতলামি করতে করতে
ঘুমিয়ে পড়েছে
আমার করোটির পেয়ালায়

 

ভাষা


অব্যক্তের ভাষা নিয়ে লিখে যাই একটি কবিতা
তোমরা তা পড়ে নিয়ো, সুখীজন, ব্যক্ত মানুষেরা।

 


এই ঋতুকাল


সমুদ্রের পথগুলোকে খুঁজতে গিয়ে আমি
ডুবে গিয়েছিলাম
আকাশের পথগুলোকে ধরতে গিয়ে আমি
হারিয়ে গিয়েছিলাম,

 

এই ঋতুকাল প্রচ্ছন্নতার

 

যদি থাকে ডানা, জীবনের

 

মরফিউস

 

সকালে গাইছো তুমি বিকালের গান
দেখছো: জোছনা, চাঁদ আর কালপুরুষ।
ঘুম হলো অবশতা যে তোমাকে ছুটি দেয়
নিয়ে যায় নিদ্রাশ্রিত দেশে,
তুমি একা অনেক হাঁটার পর বিশ্রাম চেয়েছো,
দেখেছো শব্দের জন্ম―ঘুমের ভেতরে।

 

প্রতিটি মানুষ রাতের সৌন্দর্যে
স্থির। সে ভাবে গূঢ়ের কথা, ভাবে
দেহের গভীরে লুকানো অজন্তার কথা,
আর ভাবে―ঘুম এক নিদ্রাসত্য
মরফিউস করেছে প্রতিজ্ঞা
যে তোমাকে নগ্ন করে কবিতার কাছে
তারপর নিয়ে যায় দূর স্বপ্নলোকে।

 

তুমি এলে ফিরে সম্পূরিত জীবনের ঘরে
সঙ্গে করে আনলে যে মেঘবিষণ্নতা
তোমার নন্দনদেহ ঘুমঘোর, আজ খোঁজে অন্তিমতা।

 


ফোটোফোবিয়া

 

হাঁটার আগেই
তারা কেটে নিয়েছিল আমার পা-জোড়া
ঘুমানোর আগেই
ফেলেছিল উপড়ে চোখ দুটি
লেখার আগেই...
হস্তযুগল

 

জীবন ফোটোফোবিয়া

 

উঁকিবাজ অন্ধকার হাসে


 

কুমার চক্রবর্তী
কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক। জন্ম ২ চৈত্র ১৩৭১ বঙ্গাব্দ, কুমিল্লা, বাংলাদেশ। প্রকাশিত গ্রন্থ: কবিতা: লগপুস্তকের পাতা (১৯৯৮), আয়না ও প্রতিবিম্ব ( ২০০৩), সমুদ্র, বিষণ্নতা ও অলীক বাতিঘর (২০০৭), পাখিদের নির্মিত সাঁকো (২০১০), হারানো ফোনোগ্রাফের গান (২০১২), তবে এসো, হে হাওয়া হে হর্ষনাদ (২০১৪); প্রবন্ধ: ভাবনাবিন্দু (২০০২), ভাবনা ও নির্মিতি (২০০৪), মাত্রামানব ও ইচ্ছামৃত্যুর কথকতা (২০০৫/২০০৬), অস্তিত্ব ও আত্মহত্যা (২০১২), শূন্যপ্রতীক্ষার ওতপ্রোতে আছি আমি, আছে ইউলিসিস (২০০৯), মৃতদের সমান অভিজ্ঞ (২০০৯), কবিতার অন্ধনন্দন (২০১০), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৫); অনুবাদ: আমি শূন্য নই, আমি উন্মুক্ত: টোমাস ট্রান্সট্যোমারের কবিতা (১৯৯৬/২০০২/২০১২), নির্বাচিত কবিতা: ইহুদা আমিচাই (২০০৫/২০১৩), মেঘ বৃক্ষ আর নৈঃশব্দ্যের কবিতা: চেসোয়াভ মিউশ (২০১৪)।