মঞ্জু সরকারের নতুন দুটি বই

‘পথে নেমে পথ খোঁজা’ নামটিই চমকপ্রদ। প্রথাবদ্ধ আত্মজৈবনিক নয়, আবার জীবনেরই কথ্যরূপ- যা আলো-অন্ধকারের পথ মাড়িয়ে সত্যের স্বরূপ সন্ধান। এমনিতেই মঞ্জু সরকারের জীবনকর্ম বিপুল বৈচিত্র্যময়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চেয়ে তাঁর ব্যক্তিক শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার বহর বিস্তর। তিনি কথাসাহিত্যিক, খ্যাতির ঝুড়িতে সঞ্চয়ও কম নয়। এই লেখার জন্যই তিনি মা-বাবা, জ্ঞাতিকুটুম ও ভিটেমাটি ছেড়ে পথে নামেন- মঙ্গাপীড়িত রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। সম্বলহীন স্বজনবিচ্ছিন্ন তিনি সারাদিন জীবিকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে, লেখার উপকরণ খুঁজে, লেখা প্রকাশের জন্যে পত্রিকা অফিসে ধরণা দিয়ে- রাত কাটান ফুটপাথে, প্লাটফর্মে কিংবা মসজিদ প্রাঙ্গণে। প্রতুল শ্রমনিষ্ঠা ও মেধাচর্চার কারণে তিনি কাঙ্ক্ষিত পথ খুঁজে পান, সফল সাহিত্যিকদের কাতারে দাঁড়াতে সক্ষম হন।

আমি মঞ্জু সরকারের মুগ্ধ পাঠক। এ গ্রন্থের লেখা যখন ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়, প্রথম পর্ব পড়েই পরবর্তী পর্বের জন্য অস্থির হই। লেখকের সাথে ফোনে কথা হয়। সময়মতো লেখা পাই। চিরচেনা হয়েই যেন নতুন মঞ্জু সরকারকে আবিষ্কার করি। প্রান্তিক মানুষের প্রিয়জন, সাহসী কলমযোদ্ধা, নির্মল ভাষাশিল্পী নিজেকে একটুও আড়াল করেননি। সুইপার কলোনীর দেশি মদের ঝাঁজ, নিষিদ্ধ পল্লী থেকে ভদ্রপাড়ার খবর- কিছুই বাদ যায়নি। কোথাও অতিরঞ্জন নেই, আছে সত্যের শৈল্পিক প্রকাশ- যা তথ্যনির্ভর ও মনোমুগ্ধকর।

শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্টদের তো বটেই, জীবন-সমাজ-ইতিহাস-দর্শন-প্রযুক্তিকে বোঝার জন্যেও বইটি পড়া জরুরি।

‘পথে নেমে পথ খোঁজা’ এমন একটি বই অনবদ্য গ্রন্থ, যার বিষয় বা রচনাশৈলী মুখে বলে বা লিখে পূর্ণ প্রকাশ করা অসম্ভব। পাঠক কেবল নিজে পড়েই এর অমৃতস্বাদ পেতে পারেন।

‘পথে নেমে পথ খোঁজা’ প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। প্রচ্ছদ এঁকেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ

'ডিজিটাল দেশের কৃষ্ণবিবর' প্রকাশ করেছে অনুপ্রাণন প্রকাশনী।