"দ্য লাভ সঙ অফ জে. আলফ্রেড প্রুফরক" (The Love Song of J. Alfred Prufrock) টি. এস. এলিয়টের প্রথম প্রকাশিত কবিতা। এলিয়ট ১৯১০ সালে ফেব্রুয়ারিতে কবিতাটি লেখা শুরু করেন এবং এজরা পাউন্ডের উদ্যোগে ১৯১৫ সালের জুন মাসে Poetry: A Magazine of Verse প্রথম প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে ১৯১৭ সালে 'Prufrock and Other Observations' নামে ১২টি কবিতাসম্বলিত কাব্যগ্রন্থে স্থান পায়। শিরোনামে উল্লিখিত চরিত্রটির বিচিত্র চিন্তাভাবনা চৈতন্য প্রবাহ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকাশের সময় কবিতাটিকে অদ্ভুত ও ব্যতিক্রমী বলা হলেও বর্তমানে আধুনিকতাবাদী কাব্যধারার সূচনা হিসেবে দেখা হয়।
জে. আলফ্রেড প্রুফরকের প্রেমগীতি
“যদি আমি বিশ্বাস করতাম, যে আমার উত্তর
শোনার জন্য কেউ পৃথিবীতে ফিরে আসবে,
এই শিখাটি আর কাঁপতো না।
কিন্তু যেহেতু, যদি সত্যি শুনে থাকি,
এই গভীর স্থান থেকে কেউ আর ফিরে আসে না,
তবে নির্ভয়ে আমি উত্তর দিচ্ছি তোমায়।”
( দান্তে’র 'ইনফার্নো' থেকে)
চলো তবে, তুমি আর আমি,
যখন সন্ধ্যা ছড়িয়ে পড়ে আকাশে,
যেন অপারেশনের টেবিলে শুয়ে থাকা এক রোগী,
চলো হেঁটে যাই কিছু অর্ধ-নির্জন রাস্তায়,
যেখানে কণ্ঠস্বরে ফিসফাস করে রাত,
এক রাতের সস্তা হোটেল আর করাতের গুঁড়োয় ভরা রেস্তোরাঁ পেরিয়ে;
রাস্তাগুলো যেন ক্লান্তিকর তর্কের মতো এগিয়ে চলে
কোনো ছলনাময় ইঙ্গিত দিয়ে
তোমায় নিয়ে যায় এক অভিভূত প্রশ্নের মুখোমুখি...
ওহ, জিজ্ঞেস করো না, “ওটা কী?”
চলো, শুধু চলি, করি এক সফর।
ঘরের ভেতর মহিলারা আসেন আর যান,
আলাপের ভেতর মিকেলাঞ্জেলোর কথা বলেন।
হলুদ কুয়াশা জানালার কাচে পিঠ ঘষে,
হলুদ ধোঁয়া জানালার কাচে নাক ঘষে,
জিভ চালিয়ে সন্ধ্যার কোণায় ঢুকে পড়ে,
জমে থাকা ড্রেনের জলে আটকে যায়,
চিমনি থেকে পড়ে যাওয়া কালো ধুলো পিঠে মেখে,
চত্বর পেরিয়ে হঠাৎ এক লাফ দেয়,
আর চেয়ে দেখে এটা এক কোমল অক্টোবর রাত,
তখন সে বাড়িকে একবার জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
আর নিশ্চয়ই সময় থাকবে
হলুদ ধোঁয়ার জন্য, যা রাস্তায় গড়িয়ে চলে,
জানালার কাচে পিঠ ঘষে;
সময় থাকবে, থাকবে সময়
তোমার মুখের জন্য উপযুক্ত মুখ তৈরি করতে;
সময় থাকবে হত্যা করার ও সৃষ্টি করার,
আর সময় থাকবে হাতের সকল কর্মের জন্য,
যা তোমার থালায় প্রশ্ন ফেলে যায়;
তোমার জন্য সময়, আমার জন্য সময়,
আর থাকবে শত শত দ্বিধার জন্য,
আর শত শত স্বপ্ন ও সংশোধনের জন্য,
এক কাপ চা ও টোস্ট নেওয়ার আগে।
ঘরের ভেতর নারীরা আসেন আর যান,
আলাপের ভেতর মিকেলাঞ্জেলোর কথা বলেন।
আর নিশ্চয়ই সময় থাকবে
ভাববার, “আমি কী সাহস করি?” "আরে,আমি কী সাহস করি?”
সিঁড়ি বেয়ে নামার সময় ঘুরে দাঁড়ানো
মাথার মাঝখানে টাক দেখা যাচ্ছে—
(তারা বলবে: “ওর চুল তো বেশ পাতলা!”)
আমার সকালবেলার কোট, গলায় শক্তভাবে আঁটা কলার,
আমার টাই, সমৃদ্ধ অথচ বিনয়ী, এক পিন দিয়ে আটকানো—
(তারা বলবে: “কিন্তু হাত-পা কত পাতলা!”)
আমি কী সাহস করব
জগতকে ব্যতিব্যস্ত করতে?
এক মিনিটই সময় থাকে
সিদ্ধান্ত আর সেই সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেওয়ার।
কারণ আমি তাদের সবাইকে জানি ইতোমধ্যেই, আমি সবাইকে জানি:
জানি সকাল, সন্ধ্যা, দুপুর—
আমি জীবন মেপেছি কফির চামচে;
জানি সেই কণ্ঠস্বর, ধীরে ঝরে পড়া সংগীতের নিচে
যা আসে দূরের কোনো ঘর থেকে।
তবে আমি কীভাবে সাহস পাব অনুমান করতে?
আর আমি জানি সেই চোখ, জানি তাদের সবাইকে—
যে চোখ এক নির্দিষ্ট বাক্যে তোমায় আটকে দেয়,
আর যখন আমি সেই বাক্যে আটকে যাই, দেয়ালে পিন দিয়ে গাঁথা, যেমন রেখে দেয়া হয় পতঙ্গ,
তখন আমি কীভাবে শুরু করব—
জীবনের সকল দিনের ফেলে আসা টুকরোগুলো নিয়ে কথা বলতে?
আমি কীভাবে সাহস পাব অনুমান করতে?
আর আমি জানি সেই বাহু, জানি তাদের সবাইকে—
সাদা, নিটোল, চুড়ি পরা বাহু—
(কিন্তু বাতির নিচে, হালকা বাদামী লোমে ঢাকা!)
সুগন্ধি কোনো পোশাক কি
আমাকে এত বিচ্যুত করে?
বাহু যা টেবিলে পড়ে থাকে, বা শালে মোড়া থাকে।
তাহলে আমি কী অনুমান করতে পারি?
আমি কীভাবে শুরু করব?
বলব কি, আমি গোধূলিতে হেঁটেছি সরু গলিতে
আর দেখেছি ধোঁয়া উঠছে পাইপ থেকে,
অবিবাহিত লোকেরা জানালায় হেলান দিয়ে তাকিয়ে?...
আমার তো উচিত ছিল একজোড়া ছেঁড়া নখ হওয়া,
যা নীরব সমুদ্রের তলায় হামাগুড়ি দিয়ে চলে।
আর বিকেল, সন্ধ্যা ঘুমায় শান্তিতে!
লম্বা আঙুলে মসৃণ করা,
ঘুমিয়ে...ক্লান্ত...কিংবা অলস হয়ে পড়ে আছে,
মেঝেতে ছড়িয়ে—আমার আর তোমার পাশে।
চা, কেক, বরফের পরেও,
আমার কী শক্তি আছে সেই মুহূর্তকে চূড়ান্ত করতে?
তবে আমি কেঁদেছি, উপবাস করেছি, প্রার্থনা করেছি, কেঁদেছি,
আমি দেখেছি আমার মাথা (সামান্য টাক পড়ে গেছে) এক থালায় রাখা,
আমি নবী নই—এখানে কিছু মহান ব্যাপার নেই;
আমি দেখেছি আমার মহত্ত্বের মুহূর্ত ম্লান হয়ে গেছে,
আর চিরন্তন দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, আমার কোট তুলে ধরা মৃত্যুদূত, বিদ্রুপ করে হাসছে,
সংক্ষেপে বলি, আমি ভয় পেয়েছিলাম।
আর তাহলে, সবশেষে, এই সবকিছুর পরেও,
কফির কাপ, কমলালেবুর মোরব্বা, চায়ের পরেও,
চীনামাটির বাসন, আর কিছু কথার মাঝে, তুমি আর আমি,
তবু কী মূল্য ছিল,
একটা হাসি দিয়ে কথা শুরু করা,
গোল করে গুটিয়ে নেওয়া এই মহাবিশ্ব,
এক প্রশ্নের দিকে ঠেলে দেওয়া সেটিকে,
বলে ফেলা: “আমি লাজারাস, মৃতদের থেকে ফিরে এসেছি, ফিরে এসেছি সব বলতে, সব বলব”—
যদি কেউ বালিশে মাথা রেখে শুধু বলে:
“এটা তো আমি বলিনি; একদমই না, এটা না।”
তবু, সবশেষে, সত্যিই কি তা সার্থক হতো?
সব সূর্যাস্ত, দরজার সামনে পথ, ছিটিয়ে রাখা রাস্তাঘাটের পরে, সব উপন্যাস পড়া, চায়ের কাপ খাওয়া, আর মেঝেতে গড়িয়ে পড়া স্কার্টগুলোর পরে—
এই সবকিছুর পরে, আরও কত কিছু?—
আমি আসলে যা বলতে চাই, তা বলা একেবারেই অসম্ভব!
ঠিক যেন কোনও জাদুকরী লণ্ঠন স্নায়ুগুলিকে প্রজেক্টর স্ক্রিনে নকশা করে দেখাচ্ছে:
সত্যিই কি তখন তা সার্থক হতো—
যদি কেউ, বালিশটা ঠিকঠাক করে, অথবা শালটা খুলে,
জানালার দিকে ফিরে বলতো:
"ওটা তো নয় মোটেও,
আমি তো মোটেই এটা বোঝাতে চাইনা।"
না! আমি প্রিন্স হ্যামলেট নই, আমার এমন হওয়ার কথাও ছিল না;
আমি একজন সহচর, দৃশ্যের মাঝে যিনি এসে যান,
রাজপুত্রকে পরামর্শ দেন; নিঃসন্দেহে, সহজেই ব্যবহারযোগ্য কেউ,
নম্র, সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত,
রাজনৈতিক, সতর্ক এবং অতিমাত্রায় খুঁতখুঁতে;
গম্ভীর ভাষায় কথা বলি, তবে খানিক বোকাসোকা;
কখনো কখনো প্রায় বিদূষকের মতো—
প্রায়, কখনো কখনো, একেবারেই বোকা।
আমি বুড়ো হচ্ছি...আমি বুড়ো হচ্ছি...
আমি আমার প্যান্টের নিচের প্রান্ত গুটিয়ে পরবো।
আমি কি পেছন দিক থেকে চুল সিঁথি করবো? আমি কি সাহস করবো একটি পিচ খেতে?
আমি সাদা ফ্লানেলের প্যান্ট পরে সমুদ্রতীরে হাঁটবো।
আমি শুনেছি জলপরিরা গান গাইছে, একে অপরকে উদ্দেশ্য করে।
তারা আমার জন্য গাইবে বলে আমি মনে করি না।
আমি দেখেছি তারা ঢেউয়ের পিঠে সমুদ্রের দিকে ছুটে চলেছে
ঢেউয়ের সাদা চুল আঁচড়ে দিচ্ছে
যখন বাতাস পানিকে সাদা আর কালো করে তুলে।
আমরা সমুদ্রের চেম্বারে দেরি করে বসে থাকি
লাল আর বাদামি সমুদ্র শৈবালে সাজানো সমুদ্র-কন্যাদের মাঝে
যতক্ষণ না মানুষী কণ্ঠস্বর আমাদের জাগিয়ে তুলে, আর আমরা ডুবে যাই।