মুমূর্ষু সময়ের পথিক

জনান্তিক

আমি জানি, আপনারা অনেকেই আমাকে ভালোবাসেন,
আর যারা বাসেন না, আমি জানি
মৃত্যুর পর তারাও এসে যোগ দেবেন এ দলে।
দলে দলে আরও মানুষ আসবে
ঢল সমুদ্দুর থেকে ঘোষিত হবে
ভালোবাসার স্লোগান।
ফিরিস্তি ছুটবে ভালো মন্দের,
আপনারা কেউ আশাহত হবেন না।
আমি আপনাদের জন্য রেখে যাব
যথেষ্ট পরিমাণ রশদ,
জাবর কাটতে কাটতে আপনারা আলাপ দেবেন৷
কে কত বেশি ভালোবাসতেন আমাকে,
আজ তার একটা হিল্লে হওয়া চাই।
আর যারা বাসতেন না,
কেন তারা বাসতেন না তারও জবাব দিতে হবে।

দুর্বৃত্ত নদী হরিৎ মাটির বুক চিরে ধেয়ে চলে,
তেমনি আমার বুক চিরে গেছে বেদনার জল
ভালোবাসা হারাইনি তবু,
হারিয়েছে মানুষ।
চলে গেছে সকলে একে একে
আমার প্রাণের 'পর দিয়ে।
আমি তাদের জন্যও রেখে যাব ভালোবাসা,
কোনো কৈফিয়ত ছাড়া।


নিঃসঙ্গতার পণ

আমার ব্যক্তিগত ঘরে
স্যুটকেস হাতে ঢুকে পড়ে নিঃসঙ্গতা।
সে থাকবে তিনপুরুষ—
এই পণ করে আমাকে প্রতিনিয়ত সঙ্গ দেয় নিঃসঙ্গতা।
ভোরে উঠে হাঁটতে বের হয়,
নাস্তার টেবিলে রুটিটা আরেকটু পুরু হয়নি কেন
এই নিয়ে চিৎকার করে বাবুর্চির সাথে।
তারপর বাজারের থলে হাতে বেরিয়ে পরে।
এদিকে আমি সারারাত এপাশ-ওপাশ করে
ভোরবেলা ঘুমুতে যাই বলে
হাঁটতে বের হতে পারি না, সকালের নাস্তা
সেই কবে শেষ করেছিলাম মনে পড়ে না।
আমার আলস্যদোষে বেশিরভাগ দিনেই বাজার করা হয় না।
মাঝে মাঝে মনে হয় এমন,
যাদের পাশে নিঃসঙ্গতা আছে
কেন তাদের কাছে ক্ষুধা ও যৌনতা ঘেঁষে।
কেন দুপুর বেলা রিকশার প্যাডেলের শব্দে
ঘুম ভেঙে গিয়ে মনে হয় এই বুঝি কেউ এলো
এখনি টোকা পড়বে হৃদয় দরজায়।
কিন্তু ক্রমশ প্যাডেল মেরে রিকশা গলিপথ ধরে
সামনে এগিয়ে যায় আমার মতোই
মুমূর্ষু সময়ের পথিক হয়ে আমার বদলে
ভোরবেলা হাঁটতে বের হয় নিঃসঙ্গতা।
আমি তখনো ঠায় বিছানায় শুয়ে,
পাশ ফিরে জানলা দিয়ে দেখি
দুটি পাখি ডাকছে, ভোরের রোদ হাসছে
দিন চলে যাবে রিকশার প্যাডেলের মতো করে।


আশ্চর্য গোলাপেরা

পৃথিবীর আশ্চর্য গোলাপেরা সেদিনই প্রথম ফুটেছে যেদিন আমাকে দেখে তোমার ঠোঁটের ডগায় কাঁপুনি উঠেছে। ফলন ভালো হলে কৃষকের মুখে যেমন হাসি ফোটে, ঠিক তেমনি হাসির ফলক নিয়ে ফাগুন এসেছে ধরায় এই বর্ষার মরশুমে বিপুল ঐশ্বর্য নিয়ে। রাত্রি তখনও দ্বিপ্রহর হয়নি, বাতাসে দুধারে মাথা দোলানো গভীর ধানের ক্ষেতের পাশে শোনা যায় শ্যালো মেশিনের অবিরাম ঝংকার, যেন তারা চিৎকার দিয়ে বলছে ফসল ফলানো হরিৎ মাটির বোবা কান্নার কথা। পাহাড়ি খরস্রোতা নদীর পাশে একটি গাছে বসে একটি নামহীন পাখি চুপচাপ আঁকছে তোমার প্রিয় কবিতার কথা। জলের তোড়ের সাথে মিল রেখে তোমার প্রিয় অভিমান যেন এই কোলাহলে ভরা শহরের মাঝে ফোটে আছে সোনালু ফুলের মতো ঝকোমকো আমি হয়ে—তুমি বুকে জড়িয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছো অম্লান বদনে।