নোবেলজ্বরের পর ২৫ অক্টোবর ঘোষণা হতে যাচ্ছে ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম পুরস্কার ‘ম্যান বুকার প্রাইজ।’ লেখকদের কাছে এটা হেভিওয়েট পুরস্কারই বটে। নোবেল তো আর সবার দুঃস্বপ্নের দুয়ারে কড়াঘাত করে না, অন্তত ম্যান বুকারের দেখা তো পাওয়া যায়। লং বা শর্টলিস্টে থাকলেও বইয়ের বেচাবিক্রি বাড়ে। আবার এরমধ্যে ব্রিটিশ আভিজাত্যের ভাব-গাম্ভীর্যও আছে! পড়ুন শর্টলিস্টে আসা ছয়টি উপন্যাস নিয়ে ইয়াসমিন ইতি’র সম্ভাব্যতা বিচার।
অক্টোবর ২০১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৬ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে প্রকাশিত মোট ১৫৫টি উপন্যাসের মধ্য থেকে প্রথমে ১৩টি বই স্থান পায় দীর্ঘ তালিকায়। পরে সেখান থেকে শর্টলিস্টে আসে ছয়টি। এই তালিকা প্রকাশের পর পরই লেখক-পাঠকদের মনে পূর্বানুমানের নিক্তি দুলে ওঠে। বই উল্টে-পাল্টে দেখার আগ্রহ জাগে- এবার কে পেতে পারেন ম্যান বুকার পুরস্কার?
শর্টলিস্টে আসা বইগুলো হলো- পল বেটির “দ্যা সেলআউট”, দেবরাহ লেভির “হট মিল্ক”, গ্রেইম ম্যাক্রের “হিজ ব্লাডি প্রজেক্ট”, ওত্তেশা মশফেগের “এইলিন”, ডেভিড সালেইর “অল দ্যাট ম্যান ইজ” এবং ম্যাডেলীন থিন এর “ডু নট সে উই হ্যাভ নাথিং”।
মজার ব্যাপার হলো, এই লিস্টের মধ্যদিয়ে এবার জেন্ডার সমতাও রক্ষা পেলো। এটা কাকতালীয় হলেও পাঠকদের বেশ কৌতুহলী করেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন দুজন ব্রিটিশ, দুজন অ্যামেরিকান, দুজন ক্যানাডিয়ান ঔপন্যাসিক। এই লেখকদের মধ্যে আছে জাতিগত বৈচিত্র্যও। কেউ ক্রোয়েশিয়ো, কেউ ইরানী, কেউ সাউথ আফ্রিকান আবার কেউ চায়নার বংশোদ্ভূত। লেখালেখির অভিজ্ঞতারও দারুণ সংমিশ্রণ দেখা যায় এই লেখকদের মধ্যে- পয়ত্রিশ বছরের তরুণও আছেন, আছেন সাতান্নর বয়োজ্যেষ্ঠও। তিনটি উপন্যাস ঐতিহাসিক পটভূমির আর তিনটির গল্প সাম্প্রতিক কালের। দুটি উপন্যাসের মূল চরিত্র নারী, তিনটির পুরুষ, আরেকটির কেন্দ্র একটা গোটা পরিবার। গল্পের স্থানেও আছে ভিন্নতা- স্পেন, নিউ ইংল্যান্ড, স্কটিশ দ্বীপ, চায়না, বর্তমান ইউরোপ ও লস আঞ্জেলেস।
কানাডা প্রবাসী চাইনিজ লেখিকা ম্যাডেলীন থিন-এর “ডু নট সে উই হ্যাভ নাথিং” চায়নার এক যৌথ পরিবারের দুই প্রজন্মকে তুলে ধরেছে- প্রথম প্রজন্ম দেখেছে মাও-এর সাংস্কৃতিক আন্দোলন আর পরের প্রজন্ম সরাসরি অংশ নেয় ১৯৮৯-এর
এবার কথা হলো কোন উপন্যাসটি হতে চলেছে চূড়ান্ত বিজয়ী। ম্যান বুকারের আগের নির্বাচনগুলো লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০১৫-তে নির্বাচিত মার্লন জেমস-এর “অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অভ সেভেন কিলিংস” মূলত তুলে ধরে সত্তর-আশির দশকের জ্যামাইকার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ২০১৪-এর রিচার্ড ফ্ল্যানাগান-এর “দ্যা ন্যারো রোড টু দ্যা ডিপ নর্থ”-এর বিষয়বস্তু ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানিজ যুদ্ধবন্দি ক্যাম্পগুলোর নৃশংসতা। ব্যক্তিচরিত্রের চেয়ে যুদ্ধ, রাজনৈতিক সংঘর্ষ, ধ্বংস, বিবাদ- এসব কিভাবে প্রভাবিত করে একটা সমাজ আর মানবতাকে। এসব প্রতিফলিত হয় যে সাহিত্যে সেগুলোই বেশি গুরুত্ব পেয়ে এসেছে ম্যানবুকার নির্বাচকদের কাছে। সেদিক থেকে দেখলে বেটির “দ্যা সেলআউট” আর ম্যাডেলীন-এর “ডু নট সে উই হ্যাভ নাথিং” এর সম্ভাবনা প্রচুর। আর এই দুটির মধ্যে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার সম্ভাবনা “ডু নট সে উই হ্যাভ নাথিং” এর যেখানে ম্যাডেলীন তুলনামুলকভাবে উপস্থাপন করেছেন সামাজিক অশান্তির সবচেয়ে বড় কারণ যুদ্ধ আর শান্তির বাহক সঙ্গীতকে।
সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বইপ্রেমিদের আলোচনা দেখেও এমনটাই মনে হয়। ম্যানবুকারের ফেসবুক পেজে শর্টলিস্ট প্রকাশের সাথে সাথেই শ’খানেক মন্তব্য জমা পড়ে যায় “ডু নট সে উই হ্যাভ নাথিং” -এর পক্ষে। আর দুদিন আগেতো এক প্রথম সারির ব্রিটিশ ম্যাগাজিন সরাসরি বলেই দিল যে, “ডু নট সে উই হ্যাভ নাথিং” শুড উইন দ্যা ম্যান বুকার!
এজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে ২৫ তারিখ পর্যন্ত। দেখা যাক কার ভাগ্যে ছেঁড়ে এই সম্মানজনক শিকা!