সুরুজনগরের হাসি

গ্রামের নাম সুরুজনগর। গ্রামটির পশ্চিমপ্রান্তে একটি পাকা সড়ক এসে থেমেছে। যার নাম বটতলা স্টেশন। সড়কের দুধারে ফসলের মাঠ। মৃদু হাওয়ায় দুলছে। সড়কটি উপজেলা সদর থেকে এঁকেবেঁকে এসে সুরুজনগরে মিশেছে।

স্টেশনের পাশেই একটি বটগাছ। চারদিক খাঁ খাঁ করছে। জনমানবের অস্তিত্ব নেই। এই স্টেশনে শহর থেকে দিনে তিনবার বাস আসে। সকালে, দুপুরে আর সন্ধ্যায়। দু'দশজন যাত্রী শহর থেকে আসে। কেউ এখানে নেমে বেশিক্ষণ দাঁড়ায় না। দ্রুত গন্তব্যে চলে যায়।

দুপুরের বাস থেকে বটতলা স্টেশনে নামলো এক তরুণী। এলাকায় নতুন। তা দেখেই বোঝা যায়। এদিক-ওদিক তাকায়। ব্যাগের পকেট থেকে একটা চিরকুট বের করে। মনে মনে কাউকে খোঁজে।

স্টেশনে কেউ নেই। বিরক্ত হয়। এটা কোনো কথা? দোকান নেই। অটোরিকশা নেই। বাধ্য হয়েই একটু আগায় গ্রামের প্রথম বাড়ির দিকে। সেখানে যদি কাউকে পাওয়া যায়। 

দুপুর বলে হয়ত থমথমে পরিবেশ। একটা পাখিও ডাকে না কোথাও। কৃষি জমিতে কাজ করছিল একজন। ‘এই যে শুনছেন?’ ডাকে লোকটা ঘাড় ঘুরে তাকায়।

'হ্যাঁ, বলেন। কী দরকার?’
'আমি অঞ্জলি। অঞ্জলি মজুমদার। আমি আসলে হরিনাথ মজুমদারের বাড়ি যাব।'
'আচ্ছা, সোজা গিয়ে ডানে দুটা বাড়ির পর।'
'ধন্যবাদ।'

লোকটি আর কোনো কথা বলল না। মুখেও হাসি নেই। কেমন খসখসে মেজাজ। দুপুরের রোদে কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ত।

অঞ্জলি মজুমদার কৃষকের দেখানো পথে আগায়। রাস্তা ধরেই সাইকেল চালিয়ে হয়ত শহরে যাচ্ছিল এক তরুণ।
'একটু শুনবেন?’
সাইকেল থামায় ছেলেটি। সাইকেল থেকে নেমে বলে, ‘জি বলুন।'
'আচ্ছা মিস্টার...'
'অনিরুদ্ধ। অনিরুদ্ধ আচার্য আমার নাম।'
'ধন্যবাদ। অনিরুদ্ধ বাবু, আমি হরিনাথ মজুমদারের বাড়ি যাব।'
'ঠিক পথেই হাঁটছেন। আমি জরুরি কাজে শহরে যাচ্ছি। না হলে পৌঁছে দিতাম।'
'না, থাক। তার আর দরকার হবে না। আমি খুঁজে নিতে পারব।'

অঞ্জলি এবারও লক্ষ্য করে, ছেলেটির মুখে হাসি নেই। এমন একটা শহুরে তরুণী দেখেও আহ্লাদে গদগদ হয়নি। কেমন রুক্ষ চাহনি। যেন হাসতে ভুলে গেছে জন্মের পর থেকেই। একটা মানুষকেও হাসতে দেখেনি স্টেশনে নামার পর থেকে।

বটতলা স্টেশন থেকে মজুমদার বাড়ি পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে আসতে হলো। কোনো বাহন নেই। বেশিরভাগ মানুষ ব্যক্তিগত সাইকেল নিয়ে চলাচল করে। সাইকেলটা সহজলভ্য এখানে। গ্রামে বিদ্যুৎ আছে। রাস্তাঘাটও পাকা। আভিজাত্যের ছোঁয়াও আছে। সবাই বিত্তশালী না হলেও কৃষিকাজ করে স্বাচ্ছন্দ্যেই চলে তাদের।

মজুমদার বাড়ির সবাই আগন্তুককে দেখে অবাক। সবাই ভাবে, কে এই আগন্তুক। হরিনাথ মজুমদার বেঁচে নেই। আছে তার স্ত্রী এবং দু-চারজন গৃহকর্মী। ছেলেরা সব শহরে থাকে অনেক আগে থেকেই।
'নাম কী তোমার?' জানতে চায় বৃদ্ধা ধরনের একজন।
'আমি সুরনাথ মজুমদারের মেয়ে অঞ্জলি মজুমদার।'
বৃদ্ধা অবাক হলেন। চোখ ছল ছল করে ওঠে। কিন্তু মুখে কাঠিন্য বজায় থাকে। গম্ভীর স্বরেই বৃদ্ধা বলল, 'আমি তোমার ঠাম্মা।'
অঞ্জলি পা ছুঁয়ে প্রণাম করে।

অঞ্জলির ঠাকুরমা মনে মনে ভাবে, এত বছর পর কেন এলো? সে তো ত্রিশ বছর আগের কথা। ভাবতে ভাবতে কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়। অঞ্জলির মা বউ হয়ে এলো এ বাড়িতে। বিয়ের পর প্রথম যেদিন হেসে উঠেছিল; সেদিন তাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়া হলো। সেই ক্ষোভে অঞ্জলির বাবাও স্ত্রীর সঙ্গে চলে গেল। অঞ্জলি কি তাহলে সব জেনেই এসেছে? সম্বিত ফিরে পেয়ে পাচুর মাকে ডেকে বলল, 'ওকে থাকার ঘরটা দেখিয়ে দাও।'

অঞ্জলি অবাক হয়। ঠাকুরমা অঞ্জলিকে পেয়েও খুশি হলো না। জড়িয়ে ধরলো না। প্রণাম নিয়ে সামনে থেকে চলে গেল। কেমন অদ্ভুত সবার আচরণ। সবাই আড়চোখে তাকায়। স্টেশনে নামার পর থেকে এখন পর্যন্ত কাউকে হাসতে দেখেনি। অঞ্জলি বোঝার চেষ্টা করছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, এখানকার শিশুরাও হাসে না। একটু-আধটু কাঁদে। কাঁদতে কাঁদতে চুপ হয়ে যায়। হাসতে দেখা যায় না। কেমন ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে।

অঞ্জলির কৌতূহল বাড়তে থাকে। রাতে খাওয়ার পর গেল ঠাকুরমার কাছে। গিয়ে পাশে বসলো। ঠাকুরমা তখন পান ছেঁচে নিচ্ছেন। পিতলের তৈরি বলে টুংটাং শব্দ হচ্ছে।
'আচ্ছা ঠাম্মা।'
'তুমি কী বলতে চাও আমি জানি।'
'কী জানো?'
'সুরুজনগরের মানুষ হাসে না কেন? এইতো।'
'এক্সাক্টলি এটাই।''
ইংরেজিতে কী বললে?'
'না মানে বলেছি, আসলে এটাই জানতে চাচ্ছি।'
'ঠাকুরমা ছেঁচা পান মুখে দিতে দিতে বললেন, ‘তোমার মা কিছু বলেনি?'
'না তো। তবে যতবার আসতে চেয়েছি, বলেছে গিয়ে কাজ নেই। তোমার ভালো লাগবে না।'
'কেন ভালো লাগবে না—এটা জানতে চলে এসেছো, তাই না?'
'জ্বি, সেটাই।'
'তাহলে শোনো। তোমার মা একদিন হেসে উঠেছিলেন। তার জন্য গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল। তখন তুমি মাত্র পেটে এসেছো।'
'একটু হাসির জন্য গ্রাম ছাড়তে হলো?'
'হ্যাঁ। এই গ্রামে কেউ হাসে না। হাসিটাকে অলক্ষণে মনে করা হয়।'
'এটা মনে করার কারণ?'
'সেটা আমি জানি না। তুমি চাইলে এই গ্রামের শতবর্ষী বুড়ির কাছ থেকে জেনে নিতে পারো। তিনি অবশ্য কাউকে বলেন না। লাঠি নিয়ে তাড়িয়ে বেড়ান।'

অঞ্জলির কৌতূহল বাড়তে থাকে। রাতটা কোনো রকমে কাটাতে পারলেই হলো। কিন্তু সময় যেন কাটেই না। সকালেই যেতে হবে শতবর্ষী বুড়ির কাছে। ঠাকুরমার কাছ থেকে এটুকু শুনেই আগ্রহ বাড়তে থাকে।
সকালে জলখাবার খেয়েই বেরিয়ে পড়ে অঞ্জলি।
শতবর্ষী বুড়িকে খুঁজে পাওয়া যায় একটা পুরোনো বাড়ির বারান্দায়। জমিদারি স্থাপত্যশৈলী বাড়িটার। এটা কি তবে কোনো জমিদারের বাড়ি?
গুটিশুটি মেরে বসে আছে বুড়িটা।
'এই যে শুনছেন?'
কয়েকবার বলার পর চোখ তুলে তাকায় বুড়ি। তাকিয়েই থাকে। হাতের ইশারায় কাছে ডাকে। অঞ্জলি ভয় পায়। হাতের কাছেই তার লাঠিটা। সেটার দিকে তাকায়।
'ভয় নেই, তোমায় আমি মারব না নীলু।'
'আমি নীলু নই। অঞ্জলি।'
'অঞ্জলি? নাহ। আমি দেখছি তুমি নীলু। আমাদের নীলবালা। ওই তো সেই হরিণী চোখ। ধনুকের মতো বাঁকানো ভ্রুযুগল। গোলাপ রাঙা ঠোঁট। মুক্তা দানার মতো দাঁত। আর তুমি কি না বলছো, তুমি অঞ্জলি?’
'সত্যি আমি অঞ্জলি।'
'সে যা-ই বল না কেন? কাছে এসো। তোমাকে একটু ছুঁয়ে দেখি। তোমাকে আমি মারব কেন?’
বলেই লাঠিটা ছুড়ে ফেললো দূরে। বুড়ির আশ্বাস পেয়ে অঞ্জলি এগিয়ে যায়।
'তুমি দেখতে তো জমিদার কন্যা নীলবালা চৌধুরীর মতোই। তুমি কোথা থেকে এলে?'
'বিধাননগর থেকে এসেছি। আমার বাবা এই গ্রামেরই সন্তান। পিতৃপুরুষের ভিটা দেখতে এসেছি।'
'তা কেমন দেখলে?'
'দেখলাম। তবে অবাক হচ্ছি একটি কারণে।'
'এ গ্রামের কেউ হাসে না, তাই তো?'
'জি। ঠিক ধরেছেন।'
'তাই আমার কাছে শুনতে এসেছো?'
'ঠিক বলেছেন।'
'তাহলে ওই চেয়ারটা টেনে বসো। তোমাকে যে এক কাপ চা দেবো, মেয়েটা একটু আগেই আমাকে খাইয়ে চলে গেল।'
'না না, কিছু লাগবে না।'
'তা তোমার মাকেও তো গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।'
'শুনলাম ঠাম্মার কাছে।'
'হ্যাঁ, এখানে কেউ হাসে না। হাসাটা অপরাধ। সেই অপরাধে প্রাণ পর্যন্ত যেতে পারে।'
'তাই নাকি?'
'হ্যাঁ। তেমন ঘটনাই ঘটেছিল। সেদিন থেকে এই গ্রামে হাসি-ঠাট্টা একদম বন্ধ।'
'কারণটি কি জানতে পারি?'
'শোন তাহলে, তোমাকেই বলছি। আর কেউ জানে না। কেউ কখনো এ বিষয়ে মুখ খোলেনি। আজ তোমার মাঝে নীলুকে খুঁজে পেয়েছি। আপন ভেবেই বলছি। শোনো, একশ বছর আগে এখানে সুরুজ নারায়ণ চৌধুরী নামে এক জমিদার ছিলেন। যার নামে এই গ্রামের নাম হয় সুরুজনগর। তার রূপবতী এক মেয়ে ছিল। মেয়ের নাম ছিল নীলবালা চৌধুরী। সবাই 'নীলু' বলে ডাকতো।'
'আপনি কি আমাকে রূপকথার গল্প শোনাবেন?'
'আরে না, রূপকথার গল্প হবে কেন?'
'তাহলে?'
'সেই নীলবালার জন্য জীবন দিলো সুজয় কুমার।'
'কী, বলছেন কী? ভালোবাসতো?'
'আরে নাহ। তুমি যে স্টেশনে নামলে; সেখানে একটি বটগাছ দেখেছো?'
'জি।'
'ওই বটগাছের নিচেই ঘটনার সূত্রপাত। সেখানে বাহারি খাবারের একটা দোকান ছিল। সেদিন ওই দোকানে বসে সিঙ্গাড়া খাচ্ছিল সুজয় কুমার। খেতে খেতে মনে মনে কিছু একটা ভাবছিল। হঠাৎ পথের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল সুজয়। সেসময় ওই পথ দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিল জমিদারকন্যা নীলবালা। সে ভাবলো সুজয় তাকে দেখে হেসেছে।'
'হাসলে কী ক্ষতি?'
'নীলবালার জন্মের সময় তার মা মারা যায়। যে কারণে তার সামনে কেউ কখনো হাসেনি। হাসির মর্ম তিনি জানতেন না। ফলে তার মনে হলো, এতে তাকে অপমানিত করা হয়েছে।'
'আচ্ছা। তারপর?'
'জমিদারের কাছে নালিশ করা হলো। জমিদার সুরুজ নারায়ণ পাইক-পেয়াদা পাঠালেন। সুজয়কে মারতে মারতে নিয়ে আসা হলো। বেঁধে রাখা হলো শিকল দিয়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে গভীর রাতেই ছেলেটা মারা গেল।'
'তারপর কী হলো?'
'গভীর রাতে জমিদারের হুকুমে তাকে অনেক দূরে ফেলে দিয়ে আসা হলো। সকালে ঘোষণা করা হলো, অপরাধী সাজা খাটার ভয়ে শিকল ভেঙে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সেই থেকে দুঃখে-ভয়ে গ্রামের মানুষ হাসতে ভুলে গেছে। পাখিরাও ডাকতে ভুলে গেছে।'
'একটু হাসির কারণে খুন হতে হলো? বড় আজব কাহিনি শোনালেন তো।'

এমন মর্মান্তিক কাহিনি শুনে একদিকে যেমন কষ্ট হলো অঞ্জলির; অন্যদিকে মনে মনে জেদ চেপে বসলো। প্রতিজ্ঞা করলো, এই গ্রামের মানুষকে হাসানোর চেষ্টা করবে। যেকোনো উপায়েই হোক না কেন। হাসাতেই হবে।

অঞ্জলি বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে বোঝাতে শুরু করল। হাসি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। হৃদযন্ত্র ভালো থাকে। এই আধুনিক সময়েও আমরা কেন কুসংস্কার আঁকড়ে পড়ে থাকব? আমরা কেন হাসব না? তখন না হয় মানুষ কাপুরুষ ছিল। প্রতিবাদ করতে ভয় পেত। এখন আমরা প্রতিবাদ করতে শিখেছি। আমরা হাসতেও শিখবো।

অঞ্জলির এসব কথায় কাজ হচ্ছে না। তাই সে শতবর্ষী বুড়ির সাহায্য চায়। বুড়ি একটা পরামর্শ দেয়। চুপিচুপি বলে, 'জমিদারের বাড়িটা রাতের আঁধারে পুড়িয়ে দাও।'
অঞ্জলি অবাক হয়।
'কী বলেন? এত সুন্দর নিদর্শন পুড়ে যাবে?'
'যাক, পুড়ে যাক। মানুষের চেয়ে তো বড় কিছু নেই।'
'আপনি তাহলে কোথায় থাকবেন?'
'সে এক ব্যবস্থা হবে। বটতলা তো আছেই। যদি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, মরেও শান্তি পাব।'
'আচ্ছা, সেই কাজটা তো তাহলে আপনিই করতে পারেন।'
'সে না হয় করলাম। কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত যদি হয়।'

মাঝরাতে দাউ দাউ করে জ্বলছে চৌধুরী বাড়ি। আঙিনায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করছে শতবর্ষী বুড়ি। মনে মনে হাসছে। কেউ এগিয়ে আসছে না। মানুষ যেন চাইছিল, বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। ভেতরে ভেতরে খুশি হলেও মুখে হাসি নেই। আর এই হাসির জন্যই প্রাণান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অঞ্জলি।

সকাল থেকে গ্রামটা থমথমে। জমিদার বাড়ির আগুন নিভে গেছে। তবুও স্বস্তি মিলছে না। অঞ্জলি এবার হতাশ হয়ে যায়। এবার তাকে ব্যর্থ মনোরথেই ফিরতে হবে। হঠাৎ ভরদুপুরে অট্টহাসি ভেসে আসে থাকে সুরুজনগর গ্রামে। হাসির আওয়াজ আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। হাসির দমকে সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। অবাক হলো অঞ্জলি। কে হাসছে এই ভরদুপুরে?

খুঁজতে খুঁজতে হাসির উৎস পাওয়া গেল। স্টেশনের বটতলায়। এক পাগলের অট্টহাসি এটি। উসকোখুসকো চুল। বুক সমান শ্মশ্রু। হাতে আধখাওয়া সিঙ্গাড়া। পাশেই বসে আছে শতবর্ষী বুড়ি। সে-ও হাসছে। সবাইকে বলছে, ‘এই আমাদের সুজয়। অবিকল সুজয় কুমার। দেখো সিঙ্গাড়া খেতে খেতে হাসছে। তোমরাও হাসো।’

হঠাৎ সবাই হো হো শব্দে হেসে উঠলো। ডেকে উঠলো একঝাঁক পাখি। বটগাছ থেকে উড়ে গেল অসংখ্য বাঁদুড়। আর সেই সঙ্গে হাসির আওয়াজ ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে।

সুরুজনগরের সেই হাসির খবর পৌঁছে গেল বিধাননগরেও। সুরনাথ মজুমদার খবরটি শুনে সস্ত্রীক নিজের গ্রামে আসে। বটতলা স্টেশনে নেমেই টের পেলো সব। ছুটে আসে পরিচিতজনরা। জড়িয়ে ধরে সুরনাথকে। বলে ওঠে, ‘তোমার মেয়ে অঞ্জলির জন্যই হলো এসব। কোথায় সে? তোমাদের সঙ্গে আসেনি?’

অবাক হয় সুরনাথ। স্ত্রীর মুখের দিকে তাকায়। সুরনাথের মেয়ে অঞ্জলি এলো কোথা থেকে? বিস্ময়মাখা চোখে সুরনাথ বলল, ‘অঞ্জলি আসবে কোথা থেকে? সে তো মারা গেছে জন্মের একবছর পরই।’