অবরুদ্ধ সময়ের কবিতা

আত্মঘাতী বসন্তের (করোনা) দিনে

noname

বন্ধু, সবকিছু অচেনা লাগছে আজ

উত্তরে বললে বন্ধু কামাল

মাঘ মাসে টানা বৃষ্টি দেখেছিস কোনোদিন?

বললাম, বাবা দেখেছেন বোধহয় একবার

যেবারে কাকের মাংস পানি দিয়ে রেধে দাদী লালমতি বিবি বাবাকে বলেছিলেন,

পাখির মাংস তো সবাই খাইছে তুইও খেয়ে দেখ এবার! এসব তেতাল্লিশের জানা ঘটনা সবার

যেবার মহামারীর সৃষ্টি করেছিল ইংরাজ

আর তাদের ভারতীয় দালাল নেইবার।

 

ব্ল্যাক ডেথ, প্লেগ, স্পানিশ ফ্লু, আর এবারের

করোনাকে কী বলবে তুমি আহমাদ মোস্তফা কামাল?

গলা নামিয়ে বললে, জানিস তো

ঈসা নবীর জন্মের বারোশ বছর আগে

মিশরের মমিতে মিলেছে গুটিবসন্তের আভাস!

বৈশ্বিক মহামারী শতকে শতকে ঘটে

এ নতুন কিছু নয় বটে

কতকটা মানুষ সৃষ্ট কতকটা প্রাকৃতিক বমন

দেখেছিস তো অসৎ রাজনৈতিক নেতাদের মতো

বারবার সিকুয়েন্স চেঞ্জ করছে তার জিনোম।

 

কিন্তু ধর্মীয় নেতারা গজব গজব বলে সুযোগ নিচ্ছেন লুটে

আহা বধির হয়ে জন্মেছে যারা তাদের কাছে

পাখির গান আর শিশুর কান্না

সবই তো একই মগজে ফোটে।

 

প্রশ্নটা থেকে যায় ভ্যাকসিনের আশা তারাই বেশি করছে বটে

পূজা-অর্চনা দোয়া-দুরুদ দিয়েই তো গজব থামাতে পারো?

 

এসব কথায় তুমি হেসে বললে,

আত্মঘাতী বসন্তের এমন দিনে

সত্যি সবকিছু অচেনা লাগছে মনে

আমাদের হাসিতেও যেনো দোলপূর্ণি রাতে

গ্রহণ লেগেছে চাঁদে

দেখো হৃদয় পড়ে আছে ভালোবাসার খাদে।

 

উদ্বিগ্ন কণ্ঠ তোর, আমাদের একান্নবর্তী পরিবার

সম্পর্কহীনতা নির্মমতার নামান্তর।

 

মৃত্যুর মুখোমুখি যত দৌড়াই

আমার ছায়াও কখনো সামনে

কখনো পিছনে দৌড়ায়

যেন গুপ্তধন পাহারারত স্বর্গীয় এক সাপ

ছায়ার মাঝে নেই তার কোনো অনুতাপ।

 

তার কাছেই জানা যাবে বছর কয়েক পরে

ততদিনে আমাদের অবস্থা হবে

ইনুইট উপজাতির ধ্বংসের মতন

বাহিরে ভিতরে ।

 

মৃত্যুর পর ইনুইট উপজাতির এক তরুণীর

ফুসফুসের টিস্যুর ভিতর

জিনোম সিকোয়েন্স আবিষ্কারের সাফল্য

পাল্টে দিয়েছে সমস্ত বিশ্ব অন্তর ।

 

দুনিয়া পাল্টে যাবে আরও একবার

যেমন পাল্টে ছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর।

 

বিশ্বাস করবি এটা সত্যি,

সম্প্রতি কাশ্মীর কিংবা দিল্লির দাঙ্গায়

এত লোক মরেনি;

কামাল তুই প্রশ্ন করলি আবার

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে বেশি মরেছে

স্পানিশ ফ্লুতে সেবার

 

জানো প্রিয়তম বন্ধু আমার।

উত্তরে বললাম, শোনো,

চীনের উহান থেকে আসতে হবে না গুপ্তঘাতক কোনো

অযাচিত এই ভাইরাস চারদিকে ছড়াচ্ছে এখনো

আমার দারিদ্র্যপীড়িত এই জনপদ

কিছুদিন মাঠে কারখানায় কাজে না গেলে

কে বাঁচাবে আমার মায়ের ক্ষুধার্ত জীবনরথ।