কারমা

করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্যnonameমোবাইলে ম্যাডামের নম্বর দেখে রুমার মার চোখ জ্বলজ্বল করে। তাড়াহুড়া করে ধরতে গিয়ে ভাবে ক্রস বাটনে না আবার চাপ পড়ে। উত্তেজনায় প্রায় কাঁদো কাঁদো—
—হেলু।
—রুমার মা! ভালো আছ?
—বালা। আমনি কেমুন আছোইন?
—আল্লাহ এখনও বাঁচিয়ে রেখেছে। তোমাদের ওখানকার খবর কী?

রুমার মার কণ্ঠ রোধ হয়ে আসে। কী বলবে। কীভাবে তার দুরবস্থার কথা ব্যাখ্যা করবে। শুধু বলে,—কীয়ের কথা কমু।
—সবকিছু। তোমার পরিবার, তোমার এলাকার খবর।

রুমার মার বিসুভিয়াস ফেটে কান্নার লাভা বেরিয়ে আসে। শাড়ির আঁচল দিয়ে নাক মোছে আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে বুক কাঁপে।

—ম্যাডাম গো দুক্কের কতা কী কইবাম। ডাহা থেইক্কা আইয়া ভুলই করছি। ডাহায় বেবাকতে মিল্লাঝুইল্লা বালাই আছিলাম। আমনি তো বেবাক জানুন। রুমার বাপে ময়লা গাড়ি টানত। বড়পোলার বাঙ্গারির দুকান আছিল, বড়মাইয়া রুমার গার্মেন্টস, টুলু আছিল রেস্টুরেন্টের ওয়েটার,ছোডপোলা কাজ করত কাপড়ের দোহানে আর আপনার ওনো আমার বালাই চলতাছিল। দ্যাশে কী এক করুনা আইল আমার সংসারডা আউলাঝাউলা হইয়া গেল। লগডাউন না কীতা কয় হের পরে রুমার বাপে আমারে আর টুলুরে বারিত পাডাই দিল। কইল, ‘বাইত বালা থাকবা।’কাইলকা পোলার বাপ ফুন কইরা জানাইল ডাহা শহরে হেগো অবস্থা আরও খারাপ। দুকান খুললে পুলিশ আইয়া লাডি দিয়া পিটাইয়া কিছু রাখে না। বড়মাইয়া রুমা বেতনের দাবিতে প্রত্তিদিন রাস্তায় নামে। হেগো কতাও মালিকরা হুনে না। চাইর মাস বেতন নাই, কাম নাই, ঘরে চাইল নাই। কাউন্সিলারের কাছে রুমার বাপ বুডার আইডি কার্ড জমা দিলে কী হইব অহন কুনু সাহায্য পাইছে না। গেরামে আইয়া আমরাও না খাইয়া মরতাছি। কাত্তিক মাসে ফসল যা উঠছিল বেবাক বেইচ্যা কিন্যা ডাহা গেছিলাম।গেরামে আইয়া বেতনের ট্যাহা দিয়া চাইল ডাইল যা কিনছিলাম দুইদিন হইল ফুরায় গ্যাছে। অহন আপনিই কন ক্যামনে বাঁচুম।

—বলোকী? সরকার তো ত্রাণ দিচ্ছে।
—ম্যাডাম গো আল্লাহর কসম দিয়া কই,তেরান কী হারামও চোকে দ্যাহি নাই। টুলুরে লইয়া চেয়ারমেনের ধারে গেছিলাম। দেহি হের লোকেরা বস্তায় বস্তায় চাইল, ডাইল,ত্যাল হের গুদামে উডাইতেছে।আমগোরে দেইহা কইল, ‘কী চাই?’

আমি কইলাম, তেরান।

হের লোকরা কইল, ‘তোমগো বুডার আইডি কার্ড কই?’কইলাম, আমরা তো ডাহার বুডার।
ডাহার বুডার হুইনা আমগোরে ফেরত দিল। কইল, ‘বুড দেও ডাহায় আর তেরান নিতে আইছ এনো?’কী মনে কইরা আবার ডাইকা কইল, ‘রেশন কার্ড আছে?’
তিন হাজার ট্যাহা দিয়া রেশন কার্ডও করি নাই। কুনুদিন এমন অবস্থা হইব কেডায় ভাবছে। কইলাম, না কার্ডও নাই।

‘যাও যাও, হুদাই সময় নষ্ট।’
—আচ্ছা চিন্তা করো না। তোমার এই মাসের বেতন বিকাশ করে দিচ্ছি।

(পরদিন সবাইকে কৌতূহলী হয়ে বাজারের দিকে যেতে দেখলে রুমার মা বাড়ি থেকে বের হয়ে শোনে, বেইন্যা রাইতে শর্টসার্কিট হইয়া গুদামে আগুন লাগলে চাইল ডাইল ত্যালের লগে চেয়ারমেনের মাইয়া আর মেম্বরের পোলা পুইরা ছাই।)