করোনায় আমরা ভীত নই। বরং মোকাবেলা করছি গৃহে অন্তরীণ থেকে। এতে হয়ত কিছুটা বাড়তেও পারে মানসিক চাপ। তাই আসুন, খুলে দেই মনঘরের জানালা। নিজেকে চালিত করি সৃজনশীলতায়। আপনি নিয়মিত লিখছেন, বা এটাই হতে পারে আপনার প্রথম গল্প। লিখুন ফেসবুকে। চটজলদি ৫০০ শব্দের গল্প, বাংলা ট্রিবিউনের জন্য। একইসঙ্গে নমিনেট করুন আপনার পছন্দের আরও ১০ জন লেখককে। সেরা ১০ জন লেখক পাচ্ছেন কাগজ প্রকাশনের বই। আর অবশ্যই হ্যাশট্যাগ দিন #বাংলাট্রিবিউনসাহিত্য
আজ রাজা মশাইয়ের মনটা খুবই ভালো, দিনটাও চমৎকার। মাত্রই সূর্যটা উঠছে, শীত সকালের এই রোদটুকু তাঁর মুখে নয়, যেন হৃদয়ে লাগছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন আজ প্রাসাদের বাইরে যাবেন। আশপাশে থাকা পাইক পেয়াদা সৈন্য সামন্ত কিছুতেই তাঁর এই বাইরে যাওয়াকে সমর্থন করছেন না, করছেন না এই জন্য যে, প্রধানমন্ত্রী, তন্ত্রীমন্ত্রী, যন্ত্রীমন্ত্রী, পেটমন্ত্রী, অসুখমন্ত্রী, কয়েনমন্ত্রী, হুজুরমন্ত্রী, বন্যামন্ত্রী, পথমন্ত্রী, সমুদ্রমন্ত্রী, পশুমন্ত্রী প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে বিশেষ নিরাপত্তা পাইক পেয়াদাদের নিষেধ করে রেখেছেন, যাতে রাজামশাই কোনোভাবেই বাইরে যেতে না পারেন। কী না কী ঝঞ্ঝাট বাঁধে।
রাজামশাই আজ কারো কথা শুনবেন না। তিনি বাইরে যাবেনই যাবেন। কতদিন প্রজাদের সাথে দেখা হয় না। কেউ প্রাসাদে কোনো অভিযোগ নিয়েও আসে না। আসবেই বা কেন? কোনোকিছুর অভাব তাঁর পারিষদরা রাখেননি, কারো কোনো অভিযোগ না থাকলে অহেতুক কেন প্রজারা আসবে।
শত নিষেধ সত্ত্বেও রাজামশাই শুনতে চাইলেন না কারো কথা। আর তাঁর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পাইক পেয়াদার আর কতইবা সাহস, তারা তো আর রাজা মশায়ের সাথে তর্ক জুড়ে দিতে পারে না। তাই রাজ-দরোজা খুলে দিয়ে রাজামশায়ের পিছুপিছু হাঁটতে থাকে তারা। রাজামশাই ধীরে ধীরে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে এগিয়ে যান, যতই এগোন অবাক হন, খুবই অবাক হন। আরো কিছুদূর গিয়ে সিদ্ধান্তটা নেন। সঙ্গে সঙ্গে সকল পারিষদদের ডেকে পাঠান তিনি।
এত্তো সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস রাজ্যের কোনো উজির নাজিরের নেই। কিন্তু মহারাজ ডেকেছেন, পড়িমরি করে সকলেই দৌড়াতে দৌড়াতে হাজির।
সকলের একই প্রশ্ন কী এমন হলো? আর কেনইবা রাজামশাই এতোদিন পর রাজপ্রাসাদের বাইরে এলেন। সকলেই রাজামশাইয়ের দিকে একচোখে তাকিয়ে। বুঝতে পারছে সবাই, রাজামশাই রেগে আছেন। তাই চুপ থাকাকেই সকলে শ্রেয় মনে করলেন।
রাজামশাই একধাপ এগোলে তারাও এগোয়, এক ধাপ পেছালে তারাও পেছায়। ডানে তাকালে ডানে তাকায়, বামে তাকালে বামে, উপরে তাকালে উপরে নিচে তাকালে নিচে, থেমে গেলে তারাও থামে। সবাই একটা অস্বস্তিতে পড়েছে।
‘এসব কী দেখি, ছি ছি...’ কেউ কথা বলে না। কথা বলে আগুনে ঘি ঢালার কোনো মানেই হয় না।
‘কেউ কথা বলছ না যে? মানুষ মাথা দিয়ে হাঁটে, পা দুটো উপরে, সবাই লুঙি দিয়ে মুখ ঢাকে, ছি ছি! একি দেখি হায়, এখনো চুপ থাকলে এবার গর্দান নেব সবার।’ তবু সবাই চুপ।
‘সেনাপতি তলোয়ার কোথায়?’
রাজামশাই তলোয়ার হাতে নিলে মুখে খোলে মুখ্যউজির, ‘হুজুর আপনি যা দেখেন আমরাও তাই দেখি, ছি ছি। মানুষ মাথা দিয়ে হাঁটে, পা দুটো উপরে, সবাই লুঙ্গি দিয়া মুখ ঢাকে। হুজুর আপনিও মাথা দিয়া হাঁটেন, পা দুটো উপরে, আপনিও লুঙ্গি দিয়া মুখ ঢাকেন, হুজুর আপনারটাও যে দেখা যায়, ছি ছি!’