ঈদসংখ্যা ২০২৩

নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য

নিয়ন্ত্রণ ।। রবার্ট হিল লঙ্

বাস্তবিকই মেয়েটির ক্ষুধার কিছু মূল্য ছিল যখন সে অনেক ছোট। ক্ষুধাই তাকে নাচতে শিখিয়েছিলো যেটা তার বাবার চোখ এড়ায়নি। লোকটির যখন যথেষ্ট তৃষ্ণা অনুভূত হতো তখন সে যেকোনো পানীয় পরিবেশককে সহজেই রাজি করিয়ে ফেলতো সংকীর্ণ শুঁড়িখানায় শুধুমাত্র একটা নাচের জন্য জায়গা করে দিতে —দেখো, একটা বাচ্চা মেয়ে, আর ওর পা কত ছোট।

খদ্দেররা এরপর চেঁচিয়ে দ্বিতীয় নাচের আবদার করতো যখন তারা দেখতো কীভাবে ড্রামবিটের ছন্দে মেয়েটির খালি পা তাকের সাজিয়ে রাখা বোতলগুলোর মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয় বা চতুর্থ নাচ হতেই সেই কম্পন গিয়ে পৌঁছাতো তাদের হাতে ধরে রাখা গ্লাসে : তারা মেয়েটির দিকে কয়েন এবং টাকা ছুড়ে মারতো তাকে থামাতে। তারপর মেয়েটির বাবা তাকে নেমে পড়ার অনুমতি দিলে সে আবার তার ছোট্ট মেয়ের ভূমিকায় ফিরে যেতো। তার বাবা মিনমিন করে অস্পষ্ট ইংরেজিতে ধন্যবাদ জানাতো মদ্যপ রাজমিস্ত্রি এবং জাহাজঘাটার কুলিদের যারা তার মেয়ের জন্য চেয়ার, চামচ এবং স্যুপ ভর্তি বাটি নিয়ে আসতো।

তারপর কোনো না কোনো ছায়াপথের তারকাপুঞ্জের নিচে যখন তারা ঘুমিয়ে পড়তো, মেয়েটি একই স্বপ্ন দেখতো বারবার : ছোট ছোট গোল ছাপ ওয়ালা কাপড়ের তৈরি কুঁচি দেয়া জামা পরে সে নাচছে। কোনো কোনো রাতে, আধো ঘুম আধো জাগরণে, সে উঠে পড়তো আর ঘুরে বেড়াতো। একবার সে একটা ধূলিময় রাস্তার মধ্যখানে জেগে উঠে দেখে একটা আর্মাডিলো তাকে শুঁকছে, একটু দূরে একটা ট্রেন বাঁশি বাজাচ্ছে। আরেকবার সে জেগে উঠেছিল এক বৃদ্ধ শ্বেতাঙ্গ দম্পতির বারান্দায়। তার ইংরেজি এতটাই জঘন্য ছিল যে তারা ভেবেছিলো মেয়েটি বুঝি মূক-বধির। তারা তাকে স্নান করিয়ে খাবার খেতে দিলো, তারা মেয়েটিকে দত্তক নিতে চাচ্ছিলো। মেয়েটি সেই দম্পতির বাড়ির রেডিওটার সামনে দাঁড়িয়ে পরখ করছিলো নীল বিন্দুর ছাপওয়ালা একটা জামায় তাকে কেমন মানাচ্ছে। তাদের রেডিওটায় সমানে বিং ক্রসবি বেজেই যাচ্ছিলো, আর ঠিক তখনি তার বাবা এসে সেই দম্পতির বাড়ির স্বচ্ছ সদর দরজায় টোকা দিলো।

বাবা তার মেয়েকে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করলো যে সে জামাটি চায় নাকি চায় তার বাবাকে। এই ঘটনার পর থেকে তার জীবিকা রক্ষা করার জন্য সে তার ও তার মেয়ের পায়ের গোড়ালির কাছে একটা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখতো রাতের বেলায়। যদি তার মেয়ে কোথাও যেতে উঠে দাঁড়ায়, তাহলে সে পড়ে যাবে।

অনেক নাচের পরে, এখন বর্তমান, অনেক পোশাক, অনেক পুরুষের পরে। যে-সব সেবিকারা এখন মেয়েটি প্রতি সদয়, তারা তার বৃদ্ধ হাতের কবজি বেঁধে রাখে যেন সে আবার তার ওষুধের আইভি লাইন খুলে বা ছিঁড়ে ফেলতে না পারে। কোনো কোনো রাতে তার পা দু'টো পাদানিতে ড্রাম বিটের তালে দুর্বলভাবে দুলে ওঠ। কিন্তু যখন সে তার বাধাগুলোকে ভুলে যেতে পারে, তখন সে তার পুরোনো স্মৃতিগুলো ধাপে ধাপে মনে করে চলে : সেই সময়টা, যখন তার বয়স সবে মাত্র দশ বছর, সে একটা শুঁড়িখানায় নাচার অপরাধে ধরা পড়ে হাজতবাস করেছিলো তিন দিন। ছাড়া পেয়ে বাইরে এসে সে দেখেছিলো তার বাবা নিজের টুপিটা হাতে ধরে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে, সেটা প্রমাণ করে যে সে নিজেকে নিয়ে লজ্জিত। বাবা তার জ্যাকেটের পকেট থেকে খুব চমৎকার একটা রুটি বের করতেই মেয়েটি সেটি নিয়ে খেতে শুরু করে দিলো তাকে আদর করার কোনো অবকাশ না দিয়ে। তার মনে পড়লো সেই রাতের কথা যে রাতে তার হাঁটুতে করা সেলাই খুলে গিয়েছিলো স্টেজে নাচার সময়, শিকাগোতে। প্রতিটি ঘূর্ণনে তার হাঁটুর ক্ষত থেকে রক্ত ছিটকে বের হয়ে পড়ছিলো সামনের সারিতে বসে থাকা নারী ও পুরুষের পোশাকে। ততদিনে তার রক্তও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

কিন্তু কখনো কখনো, যখন তার বয়স ছিল বছর দশেক কিংবা বারো, শুঁড়িখানাগুলোয় নাচ করার সময়, সে থামতে চাইতো না। তার বাবার গিটারের সুর থেমে গেলেও নয়। সে তার পায়ের কাছে পড়ে থাকা কয়েনগুলোর মধ্যে কম্পন এবং ঘূর্ণন তৈরি করতো, লাথি মেরে চেঁচাতে থাকা মদ্যপ লোকেদের ফিরিয়ে দিতো তাদের ঘামে ভেজা টাকার নোট। সেই সময়টুকুর আনন্দ সবকিছু পেয়ে যাওয়ার সমান আনন্দের চেয়েও বেশি উপভোগ্য বলে মনে হত তার। এখন যখন সে চোখ বন্ধ করে, সে জানে তার পরিচয়, যে তারই সাথে বাঁধা আছে তারই অপ্রশস্ত বিছানায়।


ব্ল্যাকবেরি ।। এলেন হানিকাট

দুপুরের ঠিক আগেই তার স্বামী পাহাড়ের নিচের দিকের ঢালে তার টুপি ভর্তি করে ব্ল্যাকবেরি নিয়ে এসে দাঁড়ালো। "এগুলো এখন পেকে গেছে। এই সপ্তাহে," সে তার স্ত্রীকে বললো। "আমরা ঠিক সপ্তাহটাই বেছে নিয়েছি এখানে আসার জন্য।" সে একজন দীর্ঘকায়, পাতলা গড়নের পুরুষ কিন্তু তার দেহের মধ্যভাগ স্ফীত হতে শুরু করেছে। সে তাঁবুর চারপাশে ঘুরে পানি রাখার ক্যানভাস ব্যাগটি যেখানে ঝোলানো, সেদিকে এগিয়ে গেলো, একটা অ্যাল্যুমিনিয়ামের পাত্রে ব্ল্যাকবেরিগুলো ছড়িয়ে দিলো এবং ধীরেসুস্থে সেগুলো ধোওয়া শুরু করলো।

"দুধ ফুরিয়ে গেছে," তার স্ত্রী বললো। সে ছিল স্বর্ণকেশী এবং রোগা গড়নের, নিজেকে পরিপাটি করে রাখলে এবং কিছু নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তাকে এখনো যথেষ্ট সুন্দরী বলা যায়। "আমরা দুধ শেষ করে ফেলেছি।" সে মাটিতে বিছিয়ে রাখা কম্বলের ওপর উঠে বসলো এবং হাতের থেকে বইটা নামিয়ে তার পাশে রাখলো যেটা সে পড়ছিলো। "অ্যালবার্ট এবং মে নিউইয়র্ক গেছে," সে বললো।

"একটা সফরে গেছে। নাটক দেখার সফরে।"

"হ্যাঁ, তুমি বলেছো আমাকে," তার স্বামী উত্তর দিলো। "আমরা এগুলো এই কাপগুলোতে রাখতে পারি। কাপগুলো বেরি রাখার বাটি হিসেবে দারুণ কাজ করবে।"

"দুধ শেষ হয়ে গেছে।"

"আমি এখানে ক্যাটটেইল দেখেছি," তার স্বামী বললো।

"তুমি হয়ত ভাবতে পারো এতো গাছের ভিড়ে ক্যাটটেইল গজালো কী করে। ওগুলোর জন্য যথেষ্ট সূর্যের আলো দরকার, কিন্তু দেখো ওগুলো ঠিকই গজিয়েছে। ক্যাটটেইল এর মূল পাতলা করে কেটে ভাজা যায়। মাখন দিয়ে। আমাদের মাখন আছে। এটা করলে ভালোই হবে।" সে বেরিগুলোকে দু'টো কাপে ভাগ করে একটা কাপ তার স্ত্রীর পাশে কম্বলের ওপর রেখে দিলো। সে রান্নার জিনিসের বাক্স ওলটপালট করে খুঁজে একটা চামচ পেলো, তারপর তার বেরিগুলোকে ধীরে ধীরে সতর্কভাবে খেতে শুরু করলো, যেন সেগুলো জলদি শেষ হয়ে না যায়।

"সফরটাতে সবকিছু অন্তর্ভুক্ত আছে," তার স্ত্রী বললো।

"মাত্র একবার টাকা দিতে হবে। একই পরিমাণ টাকা দিতে হবে।"

"এখানে কোনো ভালুক নেই," তার স্বামী বললো। "কোনো ভয়ংকর সাপও নেই। ব্যাপারটা একদম অন্যরকম হতো যদি আমরা কোনো বিপজ্জনক জায়গায় তাঁবু খাটাতাম। এখানে সেরকম কিছুই নেই।"

মহিলাটি যেই কম্বলের ওপর বসেছিলো সেটিকে খুবই ছোট ছোট, সাবধানি গতির সাথে মসৃণ করতে লাগলো এমনভাবে যেন সে বিছানা গোছাচ্ছে। "অনেক গরম পড়বে," সে বললো। "কোনো মেঘ নেই, ছোট্ট একটা মেঘও নেই।"

"আমরা সাঁতার কাটতে পারি," পুরুষটি প্রস্তাব দিলো, বেরিগুলোর স্বাদ আস্বাদন করতে করতে।

"তুমি সাঁতার কাটতে ভালোবাসো। তুমি যথেষ্ট ভালো সাঁতার কাটতে জানো।"

"না, আমি সাঁতারে পারদর্শী নই," মহিলাটি উত্তর দিলো।

"আমি একদমই ভালো সাঁতার কাটতে পারি না।"

"তোমাকে সাঁতারের পোশাকে দারুণ মানায়। বরাবরই মানায়। আমাদের কাছে গুঁড়োদুধ আছে।"

"ওটার একটা অদ্ভুত স্বাদ আছে।"

"সাঁতার কাটার জন্য ওই সবুজ মসৃণ পোশাকটাই আমি প্রথম তোমাকে পরতে দেখেছিলাম।"

"আমরা যদি দুধ আনতে যাই তাহলে আমরা সিনেমাও দেখে আসতে পারি ওই গ্রামটা থেকে। ওটা একটা গীতিনাট্য। আমি বিজ্ঞাপনটা দেখেছি যখন আমরা গাড়ি চালিয়ে আসছিলাম।"

"ওরা খুব সম্ভবত শুধুমাত্র সপ্তাহান্তেই খোলা থাকে," তার স্বামী উত্তর দিলো। "তুমি কি চাও আমি ক্যাটটেইল এর মূল আনতে যাই?"

"ওটা মার্জারিন," তার স্ত্রী বললো। "আমাদের কাছে মার্জারিন আছে, মাখন নেই।"

"আমি ওগুলো ভেজে ফেলবো।"

"ওগুলো মনে হয় সংরক্ষিত, ট্রিলিয়ামের মতই।"

"ক্যাটটেইল তোলা যায়," তার স্বামী বললো। "কেই ক্যাটটেইল নিয়ে অত মাথা ঘামায় না।"

সে আগুন ধরানোর জন্য স্তূপ করে রাখা গাছের গুঁড়িগুলোর কাছে গেলো এবং সামনে ঝুঁকে, কুঠার দিয়ে সমান শক্তির ঘা দিয়ে সেগুলোকে দু'ভাগ করতে শুরু করলো।

তার স্ত্রী তাকে দেখছিলো। সে খুব ভালো কাঠ চেরাই করতে পারতো। তার হাত ও কাঁধের পেশির চাপ মসৃণভাবে কাজ করছিলো কুঠারের আঘাতে প্রতিটি লক্ষ্য ভেদ করতে।"গ্রীষ্ম প্রায় শেষ হয়ে এলো," একটা বেরি মুখে নিয়ে সে বললো। সে তার জিভ দিয়ে ফলটাকে চ্যাপ্টা করে চিবিয়ে নিলো এবং গিলে ফেললো। সূর্য মধ্যগগন থেকে সরে গিয়েছিলো এবং সে দেখতে পেলো তার স্বামীর পাশে একটা ফিতার মতন ছায়ার আবির্ভাব ঘটেছে, একটি ছায়ামূর্তি যেটি কিনা একটি বাচ্চা ছেলের মতো পাতলা, স্মৃতির মতো স্নিগ্ধ। সে দু'টো তিনটা করে বেরি একবারে খেতে লাগলো তার আঙুল দিয়ে তুলে, চামচের ব্যবহার না করেই। "সেপ্টেম্বর চলেই এসেছে।" তার স্বামী ঘুরে দাঁড়ালো তার দিকে তাকাবে বলে। "না, আসেনি," সে বললো। "আসেনি এবং দুপুরও গড়ায়নি। আমাদের হাতে অনেক সময় আছে।"


কী ঘটেছিলো তুষার ঝড়ের সময় ।। জিম হেইনেন

এক শীতে জমে যাওয়ার মতো বৃষ্টি হলো। কি সুন্দর! বলেছিলো সবাই যখন বাইরের সবকিছুর ওপর বরফের স্তর পড়ে চকচক করছিলো। কিন্তু সেই কনকনে ঠান্ডা বৃষ্টি বারবার হতে লাগলো। গাছের ডালগুলো কাঁচের মতো ঝলমল করছিলো। আর তারপর কাঁচের মতই ভেঙে পড়ছিলো। জানালাগুলোর ওপর বরফের পুরু আস্তরণ পড়ায় বাইরের সব দৃশ্য ঝাপসা হয়ে এলো। কৃষকেরা তাদের গবাদিপশু সরিয়ে নিলো তাদের শস্যাগারের ভেতর, বেশিরভাগ গবাদিপশু নিরাপদেই ছিল। কিন্তু বুনো তিতির পাখিগুলোর হলো বিপদ। ঠাণ্ডায় ওদের চোখ জমে গিয়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিছু কৃষক নুড়ি বিছানো পথ ধরে জমে যাওয়া বরফের ওপর স্কেটিং করতে যেতো, আর তাদের সাথে করে নিতো বর্শার মতো দেখতে একটা জিনিস যার নাম —ক্লাব, তাদের উদ্দেশ্য ছিল রাস্তার ধারের ড্রেনের উপর অসহায়ভাবে বসে থাকা বুনো তিতির পাখি শিকার করা। কমবয়সী ছেলেরাও হাড়হিম করা বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে পড়তো তিতির পাখির খোঁজে। তারা একটা বেড়ার ধারে কিছু কালো বিন্দু দেখতে পেয়েছিলো। ওগুলোই তিতির পাখি। পাঁচ অথবা ছয়টা আছে ওখানে। ছেলেরা ধীরে ধীরে পা পিছলে এগোতে থাকলো যেন তুষারের ওপর পড়া পাতলা বরফের স্তর ভেঙে না যায়। এভাবে পিছলে তারা তিতিরগুলো খুব কাছে পৌঁছে গেলো। তিতিরগুলো ওদের মাথা নামিয়ে ডানার মধ্যে গুঁজে নিলো তারা বুঝতেও পারেনি ওভাবে গাদাগাদি করে বসে থাকায় কতোকত ছেলেগুলো বরফের বৃষ্টির মধ্যে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। তারা হাঁপিয়ে শ্বাস ফেলছিলো আর সেগুলো বাষ্পে রূপ নিচ্ছিলো। তিতিরগুলো দ্রুত শ্বাস নিচ্ছিলো আর সাদা বাষ্প তৈরি করছিল।কতোগুলো তিতির মাথা তুলে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করলো, কিন্তু ঠাণ্ডায় ওদের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেয়েছিলো তাই ভয় পেয়ে চমকে উঠলো না। ছেলেরা ক্লাব বা থলে কিছুই হয়ে বেরোয়নি। তারা তিতিরগুলোর ওপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইলো, নিজেদের মাথা ঘুরিয়ে একে অন্যের মুখের দিকে তাকাতে লাগলো, তারা প্রত্যেকেই চাইছিলো তাদের মধ্যে কেউ একজন প্রথমে কিছু করুক। চাইছিলো কেউ তিতিরগুলোকে ছোঁ মেরে ধরে ফেলুক অথবা চেঁচিয়ে ভয় পাইয়ে দিক! তাদের চারপাশের সবকিছু জ্বলজ্বল করছিলো। আর ঠান্ডা বৃষ্টিতে গলে পড়ছিলো। কাঁটাতারের বেড়া। বেড়ার থামগুলো। ঘাসের পাতার ভেঙে যাওয়া অংশ। এমনকি ঘাসের বীজগুলো। ঘাসের বীজগুলোকে জেলাটিনের স্বচ্ছ অংশের ভেতর বসানো ছোট ছোট ডিমের কুসুমের মতো দেখতে লাগছিলো। আর তিতিরগুলোকে দেখে ডিমের সাদা অংশে নিমজ্জিত অনাগত পাখির ছানার মতো মনে হচ্ছিলো। বরফ ছেলেদের টুপি আর কোটের ওপর শক্ত হয়ে জমতে শুরু করলো। খুব শিগগির তারাও বরফে ঢেকে যাবে।

তখন একটা ছেলে বলে উঠলো, শসসস্। সে তার কোট খুলে ফেলতে লাগলো, বরফের পাতলা স্তর টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়তে লাগলো যখন সে কোটের হাতা টেনে খুললো। কিন্তু কোটের ভেতরটা ছিল শুকনো এবং গরম। সে দু'টো ঘেঁষে থাকা তিতির পাখিদের তার কোট দিয়ে ঢেকে দিলো, কোটের পেছন দিকটা গোল করে একটা খোলকের মতো করে গুঁজে দিলো। অন্য ছেলেরা তার দেখাদেখি একই কাজ করলো। তারা সবগুলো অসহায় তিতির পাখিকে ঢেকে দিলো। ধূসর ছোট পক্ষিণী আর বড় বাদামি পুরুষ পাখি, সবগুলোকে। এখন ছেলেরা বুঝতে পারলো বৃষ্টি তাদের জামা কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছে, তাদের কাঁপুনি শুরু হলো।

তারা পিচ্ছিল মাঠ দৌড়ে পার হয়ে গেলো, কোথায় পা ফেলছে সেটাও খেয়াল করলো না, বরফ তাদের গায়ে আটকে ছিল যখন তারা তাদের বাড়ির আবছা আলোগুলোর দিকে এগিয়ে চললো।


টেডির হলুদ পাখি ।। কে. সি. ফ্রেডেরিক

"এবং লুইস তাকে নিচে আসতে বললো —সে খুব জোরে চিৎকার করছিলো কারণ সিঙ্কের নিচের পাইপটা ফেটে গিয়ে পানি ছড়িয়ে পড়ছিলো এবং বার্নির ভীষণভাবে মনে হচ্ছিলো যে লুইস কোনো পাইপ নয় বরং কোনো ধমনি ফুটো করে ফেলেছে বা কিছু। সে বাথটাব থেকে একটা ভেজা হাঁসঠোঁট তিমির মতো বের হয়ে এলো।"

টেডির আড্ডাখানায় টেবিলের চারপাশে বসা সবাই একে অন্যের মুখের দিকে তাকানো শেষে ঘটনাটা মনে মনে কল্পনা করতে লাগলো। "আমি ওকে দেখতে পাচ্ছি," আমি বললাম, "চুপচুপে ভেজা, সিঁড়ির ধাপের ওপর দিয়ে পানির চিহ্ন রাখতে রাখতে সে এগিয়ে যাচ্ছে আর তোমরা তো বার্নিকে চেনোই, তার বিয়ার গেলা বিশাল ভুঁড়িটাকে নিয়ে হাঁটার সময় তাকে নির্ঘাত জেলো-মনস্টারের মতোই দেখতে লাগছিলো। সেখানে গিয়ে সে দেখতে পেলো লুইস ফাটা পাইপের দিকে আঙুল তাক করে রয়েছে আর বার্নি তর্জন গর্জন করে হাঁফাতে হাঁফাতে লুইসের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে তাকে হুকুম দিলো বেসমেন্টে গিয়ে পানির লাইন বন্ধ করে দিতে। এবং তোমরা আরও কল্পনা করতে পারো বার্নি তার প্রশস্ত পশ্চাতদেশ নিয়ে কী করে হিমশিম খাচ্ছিলো সিঙ্কের নিচে ঢুকে তার তোয়ালে দিয়ে ছিটিয়ে পড়া পানি আটকাতে।"

আমরা সবাই তাকে দেখছি, আমরা সবাই এক ডজনবার শুনে ফেলা এই গল্পটা আবার শুনে আবার হাসছি। আমি গল্পটা সেভাবেই বলতে চাইছি ঠিক যেভাবে টেডি গল্পটা বলতো। আমরা জানি সে আরও রসিয়ে গল্পটা বলতে পারতো, কিন্তু সেটা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, আমরা চাই গত বসন্তের মতো কিছু হোক। এবং এটা সত্যিই দারুণ ব্যাপার যে রিটা আমাদের আমন্ত্রণ করেছে।

স্পাইডার ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে, সে তার ঘোড়ার মতন বিশাল মাথাটা উপরে নিচে দোলাচ্ছে এবং পিটি কোনো গেম শো-তে অংশগ্রহণ করা প্রতিযোগীর মতো চেহারা বানিয়ে রেখেছে, মনে হচ্ছে যেন সে পরবর্তী প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করছে এবং সে নিশ্চিত সে উত্তর দিতে পারবে। বিলি আর স্কুইরেল তাদের হাতে বিয়ারের বোতল ধরে রেখেছে এবং তাদের চোখের দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে, আনন্দ নয় বা কিছু মনে করার চেষ্টাও নয়, কিন্তু এমন একটা চাহনি যেটা দেখে মনে হচ্ছে তারা কোনো একটা গান শুনছে যেটা তারা আগেও শুনেছে কিন্তু সেটার নাম মনে করতে পারছে না। আর আমি বলতে থাকলাম কীভাবে সেই কুকুরটা রান্নাঘরে এসে ঢুকলো যখন বার্নি সিঙ্কের নিচে মাথা ঢুকিয়ে ফুটো সারাইয়ের চেষ্টা করছিলো।

"ছোট্ট পেপার ঠিক তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো এবং হঠাৎ করেই ঘেউ ঘেউ করতে শুরু করলো। বার্নি চমকে উঠে দ্রুত একটা লাফ দিতে গিয়ে কেবিনেটের সাথে জোরে একটা বাড়ি খেলো, আর ব্যাস! সে জ্ঞান হারালো। ঠিক সেই মুহূর্তে লুইস পানির লাইন বন্ধ করে চেঁচিয়ে 'বার্নি, বার্নি, পানি কি বন্ধ হয়েছে?' বলতে বলতে ওপরে উঠে এলো এবং এসেই দেখতে পেলো বার্নি নগ্ন অবস্থায় মেঝেতে পড়ে রয়েছে, তার পা সিঙ্কের নিচে। এই দৃশ্য দেখে লুইস বিলাপ করে বলতে শুরু করলো 'ও মাই গড। ও মাই গড।'"

স্পাইডার এখনো মাথা নেড়েই চলেছে, তার চোখ দু'টো ভেজা, এবং কোনো পাগলাটে খেয়ালে তাকে হাসতে দেখে আমারও খুব মজা লাগতে শুরু করলো। এক মুহূর্তের জন্য আমার মনে হলো টেডিই বুঝি গল্পটা বলছে। "আর তারপর", আমি বললাম, "সেই যে হলুদ পাখিটা, যেটা তারা পুষতো, সেটার খাঁচা লুইস পরিষ্কার করছিলো যখন এইসব ঘটনা ঘটলো, ওটা রান্নাঘরময় উড়ে বেড়াতে লাগলো, পাখা ঝাপটাতে থাকলো, আর উন্মত্ত সুরে গান গেয়েই চললো।" আমি বরাবরই অবাক বনে যাই, যে তাদের একজন যখন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো আর অন্যজন হিস্টিরিয়াগ্রস্থ মানুষের মতো আচরণ করছিলো, তখন পাখিটার দিকে কে নজর রাখছিলো। কিন্তু টেডি গল্পটা এভাবেই বলতো। "এবং কুকুরটা একদম নীরব হয়ে গেলো, ওটা নির্ঘাত ভেবেছিলো যে ওর মনিব মারা গেছে। লুইস বেসমেন্টের ওপরের সিঁড়ি দিয়ে আসতে আসতে যখন বলেছিলো, 'পুণ্যাত্মা মেরি, ঈশ্বরের মাতা,' এবং সে যখন রান্নাঘরের কর্দমাক্ত মেঝেতে অতবড় নগ্ন দেহটাকে মড়ার মতো পড়ে থাকতে দেখলো, সে ভাবলো, সে তখনো বিধবা হওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়।"

আমি ক্ষণিকের জন্য জানালা দিয়ে সবেমাত্র নেমে আসা অন্ধকারের মাঝে মানুষ-গাড়িঘোড়ার চলাচল দেখলাম এবং এটা ভেবে খুশি হলাম যে আমি একটা বেশ গরম জায়গায় আছি। এত তাড়াতাড়ি শরৎকাল চলে এলো কীভাবে, আমি আশ্চর্য বনে যাই, শীতের আগমনি বার্তা এখন থেকেই পাওয়া যাচ্ছে কি? বড়োদিন আসার আগেই রিটা এই বাড়িটা থেকে বেরোতে চায়, সে তার ছোট্ট শহরে তার মানুষদের কাছে ফিরতে চায়। আর আমার মনে হতে থাকে অন্য কেউ অন্য কোনো গল্প বলবে টেডির এই আড্ডাখানায়।

টেবিলের চারপাশে বসে থাকা সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে যেন ওরা ভয় পাচ্ছে যে আমি আর গল্প বলবো না। আমি জানি টেডি হয়ত লুইসকে নিয়ে আরও ভালো বর্ণনা দিতো, যেমন —লুইস হয়ত ঈশ্বরের কাছে শপথ করতো যে সে বার্নিকে গীর্জায় যেতে রাজি করাবে, যদি অলৌকিকভাবে সে বেঁচে ওঠে। কিন্তু আমি শুধুমাত্র বলেছি কীভাবে সে ফোনে পুলিশদের সাথে চেঁচিয়ে কথা বলে যাচ্ছিলো তাড়াতাড়ি সেখানে আসার জন্য, সে ভেবেছিলো তার স্বামীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। আমার গলার স্বরের গতি এই বর্ণনাটা দেওয়ার সময় একটু দ্রুত হয়ে যাচ্ছিলো এবং টেবিলের চারদিকে বসে থাকা সকলের চোখ একটু ঝিকমিক করে উঠলো যেনো কেউ একজন ঘরটায় এসে দেয়ালে লাগিয়ে রাখা কোনো পুরোনো সফটবল দলের অনেকগুলো ছবির মধ্যে থেকে একটা খুলে নিয়ে চলে গেলো কিন্তু কেউ সে ব্যাপারে কিছুই বললো না। তারপর আমি বলতে থাকলাম কি করে কুকুরটা বার্নির মুখ চেটে দিচ্ছিলো আর হঠাৎ করেই সে চিৎকার করে উঠলো "এই হতচ্ছাড়া জানোয়ারটাকে আমার ওপর থেকে সরাও, আমি এখানে কি করছি?" এবং লুইস রান্নাঘরের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে বলতে লাগলো, "ধন্যবাদ ঈশ্বর, অনেক ধন্যবাদ"। আর পাখিটা রেফ্রিজারেটরের ওপর থেকে তখনো ডেকেই যাচ্ছিলো।

এখন সবাই হাসছিলো এবং কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো কিচ্ছু বদলায়নি, যেন আমরা আগামীকালই মাঠে গিয়ে সফ্টবল খেলার জন্য তৈরি : যেন মনে হলো বিয়ার, সিগারেট আর পিৎজার একটা মিশ্র গন্ধ নাকে এসে লাগছে; এবং আমরা সবাই খুশি। আমি আমার পানীয়ের কিছুটা গলাধঃকরণ করলাম। এটা গলা দিয়ে নামতে নামতে ভেতরটা শীতল করে দিলো। আমি আমার গ্লাস এর ভেতর দিয়ে সবাইকে দেখলাম। আমার ভীষণ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হলো যে আমরা সবাই এখানে আরও বহুদিন আসবো।


জগতের সবচেয়ে ভালো বাচ্চা ।। চাক রোসেনথ্যাল

ফ্রাঙ্কি গোর্কি ছিল জগতের সবচেয়ে ভালো বাচ্চা। সে সবসময় তার মা-বাবার কথা শুনতো। সে তার খেলনা এবং চকোলেটের ভাগ অন্য বাচ্চাদের দিতো। পাখিরা তার শোবার ঘরের জানালায় বসে তার জেগে ওঠার অপেক্ষা করতো এবং সে জেগে উঠলে তবেই তারা গান ধরতো। বনের পশুরা ফ্রাঙ্কি গোর্কির কাছে এসে তার হাত থেকেই খাবার নিয়ে খেতো। ২৪ নম্বর রাস্তার বাড়িগুলোতে থাকা প্রতিটি বাচ্চা ফ্রাঙ্কি গোর্কির কথা জানতো কারণ তার মতো ভালো বাচ্চা আর একটিও ছিল না।

কিন্তু সে সবচেয়ে বুদ্ধিমান বাচ্চা ছিল না।

যেমন, সে কখনো খেয়াল করে চাঁদ দেখেনি।

ফ্রাঙ্কি গোর্কি এর আগে কখনো চাঁদটাকে খেয়ালি করেনি সেদিন পর্যন্ত যেদিন এক ডিসেম্বরের ঠান্ডা রাতে তুষার ঝড় বয়ে যাওয়ার পর তার মা-বাবা তাকে বাইরে নিয়ে এসেছিল, পবিত্র গর্ভধারণের ভোজন উৎসব এবং পার্ল হারবারের বার্ষিকীর ঠিক পরেই। সেই রাতে গ্রেটা এবং গ্যারি গোর্কি তাকে বাইরে নিয়ে এলো এবং অর্ধচন্দ্রাকার চাঁদের দিকে আঙুল তাক করে তাকে দেখালো।

ফ্রাঙ্কি গোর্কি বলেছিল ওটা একটা অদ্ভুত রাস্তার বাতি। "না," তার বাবা, গ্যারি গোর্কি বললো, "ওটা চাঁদ।"

আসলে ফ্রাঙ্কি গোর্কি জানতো না যে চাঁদকে নিয়ে কীই বা ভাবা যেতে পারে, যদিও তার মনে হচ্ছিলো জিনিসটা গোলাকার হলে বেশ হতো। প্রতি রাতে তাকে বিছানায় শুইয়ে দেয়ার পর সে উঠে তার শোবার ঘরের জানালার কাছে যেতো, যেখানে পাখিরা তার জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতো, এবং বের হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকতো। সে খেয়াল করতে শুরু করলো যে চাঁদটা আসলে বড় হচ্ছে, এমনকি কিছুক্ষণ পর ওটা দেখে মনে হচ্ছিলো যে ওটা সত্যিই গোল হয়ে যাবে। অবশ্যই সে একটা ভালো বাচ্চা ছিলো এবং সে জানতো ভালো বাচ্চাদের ইচ্ছে পূরণ হয়। কিন্তু সে অনেক রূপকথার গল্পে শুনেছিলো যেখানে মানুষেরা যা চাইতো তাই পেতো, যেমন রাজা মাইডাসের বেলায় হয়েছিলো। কিন্তু সেই ইচ্ছে পূরণের ফল বেশিরভাগ সময় ভালোর চেয়ে খারাপের দিকে গিয়েই শেষ হতো। সৌভাগ্যক্রমে, চাঁদটা যে আসলেই গোল হয়ে যাচ্ছে সেদিকে কেউ খেয়াল করলো না। সে তার দাদীর সাথে কথা বলার ইচ্ছে প্রকাশ করলো। তার মনে হতো উনি অনেক কিছু জানেন এবং ফ্রাঙ্কি নিশ্চিত ছিল যে তার গোপন কথা দাদি তার মা-বাবাকে বলে দেবেন না। চাঁদটা ক্রমশ বড় হতেই থাকলো এবং এক রাতে এতো বড় আর সাদা হয়ে গেলো যে ওটা তার আর পুরো বিশ্বের মানুষের হাড় শুষে নেবে, আর এটার দায় ফ্রাঙ্কি গোর্কি কিছুতেই নিতে চাইছিলো না। ফ্রাঙ্কি গোর্কির মনে পড়লো যে সাধারণত একটা নয়, তিনটা ইচ্ছে পূরণ করা যেতে পারে। এরপর ফ্রাঙ্কি গোর্কি শীতল মৃত্যুময় চাঁদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ইচ্ছে প্রকাশ করলো যেন ওটা দূর হয়ে যায় এবং তার দাদির সাথে যেন তার দেখা হয়।

ফ্রাঙ্কি গোর্কি হয়ত জগতের সবচেয়ে ভালো বাচ্চা ছিল কিন্তু তার মানে এই নয় যে সে সবসময় সঠিক কাজটি করতে পারতো এবং এটা সে বুঝতেও পেরেছিলো। এরপর যখন চাঁদটা প্রায় অর্ধেক চলেই গিয়েছিলো তখন সে স্বস্তি অনুভব করছিলো। সে ভেবেচিন্তে বের করলো যে তার আসলে ইচ্ছে প্রকাশ করা উচিত ছিল যেন চাঁদটা আগের মতো হয়ে যায়, একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমনটা নয়। চাঁদটা একেবারে উধাও হয়ে যাক এটা চাওয়া একটা সাঙ্ঘাতিক বড় ভুল ছিল, বিশেষত তখন যখন সে তার তৃতীয় ইচ্ছেটায় তার দাদীর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো। সে পরে জানতে পারলো যে বরাবরের মতোই এই বড়দিনে তার দাদি গোর্কিদের সাথে দেখা করতে আসছে।

অতপর, এই বছরের বড়দিনের আগের সন্ধ্যা ফ্রাঙ্কি গোর্কির জন্য একটা মন খারাপের সময় হয়ে গেলো যখন সে দেখলো চাঁদটা আর আকাশে নেই। সে বড়দিনে উপহার পাওয়া খেলনা নিয়েও কিছু ভাবতে পারছিলো না। সারারাত জেগে বড়দিনের সম্ভাব্য খেলনা উপহার পাওয়ার কথা চিন্তা না করে যখন তার —শিশু যিশু, বিজ্ঞ মানুষ এবং আদি পাপ থেকে বিশ্বের রক্ষা পাওয়ার উপায় নিয়ে ভাবার কথা ছিল, তখন সে সেসব নিয়ে না ভেবে বারবার উঠে জানালার কাছে গিয়ে চাঁদটাকে খুঁজছিলো, যেটাকে সে নিজের ইচ্ছের ভুল ব্যবহার করে মুছে ফেলেছে। আর এখন তার কাছে একটা মাত্র উপায় ছিল, দাদি গোর্কি, যে প্রতি বড়দিনের মতো বাফেলো থেকে গাড়ি চালিয়ে আসবে, যে তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং অবশ্যই বলতে পারবে এখন তার কি করণীয়।

এবং বড়দিনের সকালে, ফ্রাঙ্কি গোর্কি একটা তীরের মতোই সজাগ হয়ে বসেছিলো। সামনের জানালায় বসে অপেক্ষা করছিলো দাদি গোর্কির। যখন সে এলো, ফ্রাঙ্কি গোর্কি তার জীবনের প্রথম খারাপ কাজটি করলো। সে কোনো অনুমতি ছাড়াই দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তার ওপারে যেতে থাকলো যেখানে দাদি গোর্কি তার গাড়িটা রেখেছিলো, কারণ বড়দিনে প্রতিবেশীদের বাড়িতে আসা অতিথিদের প্রায় সবাই গোর্কিদের জায়গায় গাড়ি রেখেছিলো। ফ্রাঙ্কি গোর্কি বরফের ওপর পিছলে পড়ে গেলো, এবং একজন মদ্যপ গাড়িচালক তাকে মেরে ফেললো।

আমার বাবা বললো, যখন মানুষ অন্য মানুষের গাড়ি রাখার জায়গা নিয়ে নেয়, তখন এমনই হয়।

আমার মা বললো, যখন কেউ দুদিকে ভালো করে না দেখে রাস্তা পার হতে যায়, তখন এমনটা হয়।

আসলে যা হয় তা হলো, তুমি যদি জগতের সবচেয়ে ভালো বাচ্চা হও, তাহলে তোমাকে মরতে হবে।

এটাই হয়, যখন কেউ কাউকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে।