করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। তবু বন্ধ ক্যাম্পাসে আপ্যায়ন বাবদ ৩৭ লাখ টাকা খরচের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বহনকারী শাটল ট্রেন বন্ধ থাকলেও ভাড়া বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর বন্ধ আবাসিক হলগুলোর বাল্ব ও লাইট কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ হয়েছে সাত লাখ টাকা।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এ আর মল্লিক প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে ৩৩তম সিনেট সভায় ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম মনিরুল হাসান। এ সময় তিনি এসব তথ্য জানান। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেট ৩৬০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
এরমধ্যে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বরাদ্দ ৩৩১ কোটি ৭৯ লাখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বরাদ্দ ২০ কোটি। ঘাটতি বাজেট রয়েছে আট কোটি ৯৮ লাখ টাকা। উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ১৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা। গবেষণায় বরাদ্দ রয়েছে পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যা এ পর্যন্ত এ খাতের রেকর্ড বরাদ্দ।
একইসঙ্গে সিনেট অধিবেশনে গত অর্থবছরের ৩৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা সংশোধিত বাজেট অনুমোদিত হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও ২০২০-২১ অর্থবছরে আপ্যায়ন বাবদ ৩৭ লাখ টাকা, রেল ভাড়ায় ২০ লাখ টাকা খরচকে অস্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন অর্থবছরে এসব খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ৩৫ লাখ ও এক কোটি ২০ লাখ টাকা। যানবাহন বাবদ ২০২১-২২ সালে মোট বরাদ্দ দিয়েছে এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
আবার বন্ধ আবাসিক হলের বাল্ব বাবদ সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তবে বাজেট বইয়ের ১৮ পৃষ্ঠা অনুযায়ী ২০২১ সালের নববর্ষ উদযাপনের খরচ দুই কোটি ১২ লাখ ও ২০২০ সালের নববর্ষ উদযাপন খরচ এক কোটি ৯৫ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। আবার নতুন বছরের জন্য দুই কোটি ২৩ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
নববর্ষ উদযাপনের এই দুই ধরনের খরচের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক ফরিদুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে হওয়া বড় খরচটি শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভাতা বাবদ হয়েছে। অন্যান্য খরচের বিষয়ে আমাকে দেখে বলতে হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৩০ কোটি কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ৬৭ শতাংশ। তাদের পেনশনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৫৫ কোটি ৩ লাখ।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য চবির ৩৫১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়। যেখানে বেতন ভাতা বাবদ বরাদ্দ ছিল ২২২ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ৬৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। গবেষণায় বরাদ্দ রাখা হয়েছিল চার কোটি ২০ লাখ টাকা, যা মোট বাজেটের ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। পরিবহন খাতে তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা বাজেট রাখা হয়েছিল।
২০২০-২১ খণ্ডকালীন শিক্ষকদের ভাতা বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৯০ লাখ। এবার বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি টাকা
তিনি বলেন, ‘খণ্ডকালীন শিক্ষক কোথায়? ক্লাসই তো হয়নি, তাহলে তাদের বেতন কোথা থেকে এলো? এভাবে প্রায় ১৫-২০টি খাত আছে, যার খরচ অস্বাভাবিক। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সুবিধা, করোনার বিষয়ে কোনও অগ্রগতি নাই। একটা বিশ্ববিদ্যালয় তো এভাবে চলতে পারে না।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান কিছু জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, বাজেটের বিষয়টি হিসাব নিয়ামক জানেন।
ভারপ্রাপ্ত হিসাব নিয়ামক ফরিদুল আলম চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয়েছে, সে সবের জন্য আপ্যায়ন খরচ হয়েছে। আর আবাসিক হল বন্ধ থাকলেও বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল না। ১০টির বেশি হল আছে। সেগুলোতে বাল্বের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ে খরচ হয়েছে। রেলের দুই মাসের ভাড়াও দিতে হয়েছে। সেগুলোই খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছে।’