দেড় বছর পর শ্রেণিকক্ষে ঢাবি শিক্ষার্থীরা

করোনা পরিস্থিতিতে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

আজ রবিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে ঢাবি ক্যাম্পাস। বিভিন্ন অনুষদের শ্রেণিকক্ষগুলোতে প্রবেশমুখে শরীরের তাপমাত্রা মাপার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরিধানও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে আসার শুরু করেন শিক্ষার্থীরা

তবে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে শারীরিক দূরত্বের নিয়ম মানতে দেখা যায়নি। বেশিরভাগ শ্রেণিকক্ষেই এক বেঞ্চে তিন থেকে পাঁচ জন পর্যন্ত বসতে দেখা গেছে।

শোডাউন দিয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনগুলো

গত ৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সশরীরে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর ৫ অক্টোবর অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং ১০ অক্টোবর সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য হলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয় সভায়।

ক্লাসে ঢোকার আগে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী

কর্তৃপক্ষ বলছে, আজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাস্থ্যবিধি’ মেনে চলবে সশরীরে পাঠদান ও পরীক্ষা কার্যক্রম। তবে সশরীরে ক্লাসের পাশাপাশি কোনও বিভাগ বা ইনস্টিটিউট চাইলে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ক্লাস অনলাইনেও নিতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অনলাইন ও অফলাইন সমন্বয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ৬০ ভাগ ক্লাস সশরীরে নিতে হবে। সেশনজটে কাটাতে ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে সম্পন্ন করার কথাও বলা হয়েছে।

দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়া বন্ধুদের সঙ্গে চলছে কুলশ বিনিময়

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‑

* সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়মিত ও সার্বক্ষণিক মাস্ক নাক-মুখ ঢেকে পরিধান করতে হবে।

* স্বাস্থ্যবিধি পালনের জন্য সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

দীর্ঘদিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা

* স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী পরস্পরের কাছ থেকে কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফুট) শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

* শ্রেণিকক্ষে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করতে হবে।

* ল্যাবে কাজের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরির ধারণ ক্ষমতা, বসার ব্যবস্থা, কাজের বিন্যাস এবং যাতায়াতের পথযুক্ত নকশা তৈরি করতে হবে ও সর্বত্র প্রদর্শন করতে হবে।

* সমস্ত নির্দেশনাবলী শিক্ষার্থীদের আগেই জানাতে হবে।

* শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে ল্যাবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অবস্থান চিহ্নিত করতে হবে।

* ব্যবহৃত পিপিই যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও অপসারণের ব্যবস্থা করতে হবে।

* পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং শৌচাগারগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

* কোভিড-১৯ লক্ষণ থাকলে বাসা বা হলের কক্ষে থাকতে হবে ও কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

* লক্ষণযুক্ত ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহনে চলাচলের সময় অবশ্যই সার্বক্ষণিক মাস্ক পরতে হবে।

* বাসে ওঠার আগে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

* বাস এবং অন্যান্য যানবাহনে প্রবেশ ও বহির্গমন পথে ভিড় এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

* যানবাহনে প্রবেশ ও বহির্গমণের জন্য আলাদা দরজা নির্ধারণ করতে হবে।

* শুধু ক্লাস থাকলেই নিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যানবাহন ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ এবং প্রস্থান করতে পারবে।

* সম্ভব হলে গণপরিবহন ব্যবহার পরিহার করতে হবে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম