কাটেনি ধকল, শাবিপ্রবির অনশনকারীরা চলছেন চিকিৎসকের পরামর্শে

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে টানা ১৬৩ ঘণ্টা অনশন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ এ সময় ধরে খাবার না খেয়ে অনশন করায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই ২৮ শিক্ষার্থী। বর্তমানে চিকিৎসকের পরামর্শে চলছেন তারা।

এর আগে, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। অনশন করে অসুস্থ হয়ে পড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ শিক্ষার্থীকেও বুধবার সকালে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। 

অনশনকারীদের সার্বিক বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আদিল বলেন, ‘অনশন ভাঙানোর পরও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় সাত শিক্ষার্থীকে পুনরায় হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বুধবার সন্ধ্যায় পাঁচ শিক্ষার্থী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে রিলিজ নিয়ে চলে আসেন।’

তিনি বলেন, ‘তবে মাহিন শাহরিয়ার রাতুলের অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার শারীরিক অবস্থা খুব বেশি উন্নতি হয়নি। ব্যথা রয়েছে। এ ছাড়া আরেক শিক্ষার্থীর অবস্থা খারাপ থাকায় রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে আজ সকালে তিনিও রিলিজ নিয়েছেন।’ 

‘সবাইকে ডায়েট মেনে খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে’ উল্লেখ করে আদিল বলেন, ‘দীর্ঘ সময় খাবার না খাওয়ায় ভারী খাবার নিতে মানা করেছেন চিকিৎসক। তরল কিংবা উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি চিকিৎসা চলছে।’

সাফিন নামে অনশনকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দুয়েকজন বাদে বাকি সবাই মোটামুটি সুস্থ আছে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে হল, মেস ও বাসায় অবস্থান করছে।’ 

নিজের শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় কিছু না খাওয়ায় শরীর দুর্বল। চিকিৎসক ভারী খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। অন্তত দুদিন তরল কিংবা সুপ জাতীয় খাবার খেতে বলেছেন। তাই মেনে চলছি। পাশাপাশি ওষুধ নিচ্ছি।’

অনশনকারী শিক্ষার্থী মরিয়মের সহপাঠী অনামিকা বলেন, ‘এখন তারা সুস্থ আছেন। শরীর খুবই দুর্বল। মাথা সবসময় ঝিমঝিম করে মরিয়মের। এমনকি শরীর দুর্বল থাকায় ভালোভাবে হাঁটতেও পারছেন না।’

রাগিব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত এক চিকিৎসকের বরাত দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আদিল বলেন, ‘সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিয়ম মেনে চলতে হবে তাদেরকে। তা না হলে শারীরিকভাবে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাদেরকে পর্যাপ্ত রেস্ট নিতে হবে। বেশি বেশি প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। এছাড়া নিয়মিত চেকাপ ও কোনও সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

উল্লেখ্য, বুধবার বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক অনশন ভাঙান শিক্ষার্থীদের। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রাত থেকে প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

পরে আন্দোলনে পুলিশি হামলা হলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ১৬ জানুয়ারি থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ, অবস্থান কর্মসূচি, গণস্বাক্ষর কর্মসূচি, আমরণ অনশন, মশাল মিছিল, উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ, কাফন পরিধান করে প্রতীকী লাশ নিয়ে মিছিল, গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

১৯ জানুয়ারি দুপুর থেকে অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে একজনের বাবা অসুস্থ থাকায় তিনি বাসায় চলে যান। গণ অনশনের ডাকে আরও পাঁচ শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। সর্বমোট ১৬৩ ঘণ্টার অনশনে ছিলেন তারা।