রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী কবি নজরুল সরকারি কলেজে পরিবহন ফি’র কথা বলে প্রত্যেক বছর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে উত্তোলন করা হচ্ছে। কলেজের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, বর্তমানে কলেজটিতে প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। সেই হিসাবে কলেজটিতে প্রত্যেক বছর পরিবহন বাবদ প্রায় ৬৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। অথচ শিক্ষার্থীদের জন্য আদৌ কোনও ধরনের পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। পরিবহনের নামে এই টাকা কেন উত্তোলন করা হচ্ছে এবং উত্তোলনকৃত এই টাকা কোথায় যাচ্ছে জানতে চান সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
অফিস সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ার পর থেকে বিগত চার বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় (৬৮,০০,০০০×৪)= ২ কোটি ৭২ হাজার টাকা পরিবহন ফি নেওয়া হয়েছে। বিগত ১০ বছরে যার পরিমাণ অন্তত তিন গুণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৯ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, ঢাবিতে অধিভুক্তের পূর্বে কলেজের শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ২৭ হাজার। বিগত ১০ বছরে পরিবহন ফি’র নামে উত্তোলন করা টাকার নেই কোনও হদিস। উধাও হয়ে গিয়েছে শিক্ষার্থীদের পরিবহন ফি’র কোটি টাকা।
সূত্র আরও জানায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা পরিবহন ফি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রশ্নপত্র ও অফিস সংক্রান্ত ফাইল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনা নেওয়ার কাজে ব্যয় করা হয়। তবে তার জন্য আলাদা করে ভিন্ন ভিন্ন খাতে টাকা নেওয়ার কথাও জানা যায়। তাহলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিবহনের নাম করে নেওয়া এই টাকা যায় কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে কিছুই বলতে নারাজ কবি নজরুল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা হক বলেন, ‘এই কলেজে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে পড়াশুনা করছি। আমার পড়াশুনা এখন শেষ পর্যায়ে। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য কোনও ধরনের পরিবহনের ব্যবস্থা দেখিনি। অথচ আমরা প্রত্যেক বছর ৪০০ টাকা করে পরিবহন ফি দিয়ে থাকি। তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের এই টাকা কেন নিচ্ছে এবং প্রত্যেক বছর এই টাকা কোথায় যায়?’
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নারগিস আক্তার বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর ভর্তির সময় পরিবহন ফি দিলেও আমাদের কলেজে পরিবহনের কোনও সুযোগ সুবিধা নেই। পরিবহনের দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছি, কিন্তু এর কোনও সুরাহা হয়নি। আন্দোলনের মুখে আমাদের কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আই কে সেলিম স্যার ২০১৯ সালে দুটি বিআরটিসি বাস ভাড়া করেন। কিন্তু তাও কিছুদিন পরে বন্ধ হয়ে যায়। পাবলিক বাসে যাতায়াত করতে নানান ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমরা চাই কলেজ প্রশাসন যেন পরিবহনের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘব করে।’
এ বিষয়ে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমেনা বেগম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কলেজ থেকে যে যে খাতে টাকা নেওয়া হয়, তা সে সে খাতেই খরচ করা হয়। আর যা খরচ করা হয় না, তা ব্যাংকে পড়ে থাকে।’
শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা না করে তা ব্যাংকে কেন ফেলে রাখা হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পরিবহন ফি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রয়োজনে এবং কলেজের অন্যান্য যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা হয়।’
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা পরিবহন ফি কত টাকা জমা আছে এবং তা কেন শিক্ষার্থীদের পরিবহনের সুবিধার্থে ব্যবহার করা হয় না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তা তোমাদের জানার বিষয় না।’
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে পূর্বে ভাড়া করা দুটি বাস অতি শীঘ্রই পুনরায় চালু করার আশ্বাস দেন অধ্যক্ষ আমেনা বেগম। শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে বাস ক্রয়ের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এটা ইউনিভার্সিটি না, কলেজ। আমরা চাইলেই সবকিছু করতে পারি না। আমাদের মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হয়। ইতোমধ্যে আমরা কলেজ থেকে মাউশি’তে বাস ক্রয়ের জন্য আবেদন করেছি। অনুমতি এলে কিনবো। তাছাড়া আমাদের বাস রাখারও পর্যাপ্ত জায়গা নেই।’