জাবির ভর্তি আবেদন ফি দ্বিগুণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

 

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার অনলাইন আবেদন ১৮ মে শুরু হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে এ আবেদন চলবে ১৬ জুন পর্যন্ত। অন্যদিকে ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময় ৩১ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট। তবে গতবারের তুলনায় ভর্তি ফি দ্বিগুণ বাড়ানোয় ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ, বি, সি এবং ই ইউনিটের ভর্তি ফরমের মূল্য ধরা হয়েছে ৯০০ টাকা। গতবছর যা ছিল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া ডি ইউনিটের আবেদন ফি পূর্বের মূল্য ৬০০ টাকাই ধরা হয়েছে।

ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার সভাপতি আবু সাইদ বলেন, প্রশাসনের তরফ থেকে যে ঘোষণা এসেছে, তাতে ফর্মের দাম ৬০০ টাকা ও ৪০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে যথক্রমে ৯০০ ও ৬০০ টাকা করা হয়েছে। এ বছর ইউনিট সংখ্যা কম, অর্থাৎ পরীক্ষার সংখ্যাও কম হবে। সেই অনুযায়ী পরীক্ষা আয়োজনের ব্যয়ভার অনেক কমে আসার কথা। তারপরও এরকম ফি বাড়ানোর ঘটনাটি অন্যায় এবং প্রশাসনের লজ্জাজনক মুনাফালোভী চরিত্রেরই প্রকাশ। ফি বাড়ানোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে দরিদ্র পরিবারের ভর্তি হওয়ার পথ সংকুচিত হবে। বঞ্চিত হবে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা, যার সংখ্যাই এই দেশে সিংহভাগ। 

অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারহানা রিথী বলেন, ‘আমার মতে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাড়ানো একদমই উচিত হয়নি। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব শিক্ষার্থী আবেদন করেন তাদের বেশিরভাগই নিম্ন মধ্যবিত্ত/ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি সে তুলনায় মানুষের আয় বাড়েনি। এ অবস্থায় আবেদন ফি বহন করা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আর্থিক অস্বচ্ছলতার জন্য পিছিয়ে পড়ে। অনেকক্ষেত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করতে পারে না। সুতরাং প্রশাসনের উচিত হবে আবেদন ফি আগের মতো রাখা। 

ভর্তিচ্ছু অনুপ মণ্ডল বলেন, ‘আমার বাবা পেশায় একজন রিকশাচালক। করোনায় বাবার শরীরে বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। আগের মতো নিয়ম করে রিকশা চালাতে পারেন না। একদিন রিকশা নিয়ে যায়তো দু’দিন যেতে পারেন না। ইনকাম নেই বললেই চলে, সে মুহূর্তে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফি বৃদ্ধি আমার কাছে মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়ার মতো। এত টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবো আমি ভেবে পাচ্ছি না।’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ভর্তি আবেদনের ফি কমানো উচিত। ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য একটা ফি নেওয়া হয়, কিন্তু দেখা যায় খরচ বাদ দিয়ে আরও টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। গতবছর ৬০০ টাকা করে নিয়েও অনেক টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। এ বছর ৯০০ টাকা করার কোনও দরকার ছিল না।’ ইউনিট ভিত্তিক আবেদন ফি ৫০০ টাকা করার পরামর্শ দেন তিনি। 

ফরমের মূল্য বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম বলেন, ‘আমরা ইউনিট কমিয়ে এনেছি, তাই ফরমের দাম বাড়ানো হয়েছে। এবার কলা অনুষদের তিনটি ইউনিটকে একসঙ্গে করা হয়েছে, এই তিন ইউনিটে আগে খরচ হতো ১৪০০ টাকা; ইউনিট একটি করায় সেখানে খরচ হবে ৯০০ টাকা।’

উপাচার্যের দাবি, ডি ইউনিট ছাড়া বাকি চার ইউনিটেই আগের তুলনায় টাকা কমানো হয়েছে।