ঢাবি চত্বরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকায় সম্প্রতি সংগঠিত নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।

রবিবার (১২ জুন) বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করে সংগঠনটি।

এসময় বক্তারা বলেন, 'গত বুধবার দিবাগত রাত সোয়া বারোটার দিকে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে সহিংসতার শিকার হন এক নারী গণমাধ্যমকর্মী। বারবার আন্দোলনের পরও এই ধরনের ঘটনা থামছে না। কারণ এতসব ঘটনার পরও বিচার হচ্ছে না। যদি আমরা এগুলোর সঠিক বিচার করতে পারতাম তাহলে এগুলো আর ঘটতো না। আজকে বাংলাদেশ নারী পরজীবী কোনো শ্রেণি নয়, সে এখন স্বাবলম্বী। সুতরাং সরকারের এইদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। যদি এসব ঘটনা আর দেখতে না চান, আসুন আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি। এবং সরকারকে আইন প্রণয়নে বাধ্য করি।

সংগঠনের সভাপতি ডা. ফাওজিয়া মোসলেম বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল কেন্দ্র। আমরা যখন ছাত্র আন্দোলন করেছি, তখন রাত ১২টা/১টার দিকেও সার্জেন্ট জহুরুল হক হল থেকে একা ফিরেছি, কোনও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি। আমরা বাইরে থেকে যখন ক্যাম্পাসে ফিরেছি, তখন মনে হতো আমরা নিরাপদ জায়গায় আছি। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে এই ধরনের কাজ করছে, আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাদের চিহ্নিত করুন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আপনার সম্মানের সাথে জড়িত। এসময় তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা,  কর্মচারীদেরকে সহিংসতাকারীদের হাত থেকে ক্যাম্পাসকে মুক্ত রাখার আহ্বান জানান।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, 'একজন নারীকে মানুষ হিসেবে গ্রহণ করুন, সে আপনার অধীনস্থ না, পদানত না— এই শিক্ষায় আপনারা শিক্ষিত হোন। যদি তা না হয় তাহলে আপনার পরিবারেও একই ঘটনা ঘটবে। সেকল মৌলবাদী রাজনৈতিক শক্তি নারীর সাজসজ্জা, পোশাকের ওপর হস্তক্ষেপ করতে চায়, করতে শুরু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন সমাজকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।

এসময় মহিলা পরিষদ ১১টি প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের আন্দোলন উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি লবির পরিচালক জনা গোস্বমী। এগুলোর মধ্যে রয়েছে— উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের আলোকে পৃথক আইন প্রণয়ন করা। কর্মক্ষেত্র ও রাস্তাঘাট, গণপরিবহনসহ ঘরে-বাইরে সর্বত্র নারী ও কন্যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল বিশ্ববিদ্যালয় সিসি ক্যামেরার আওতায় এনে নিয়মিত মনিটরিং করা।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লবির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অ্যাড. দীপ্তি সিকদারের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন— যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সম্পাদক রেখা সাহা, উপপরিষদের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি ও ডা. নাহীদ নবী লেখা। এছাড়াও ঢাকা মহানগর শাখা মহিলা পরিষদের সহসম্পাদক মঞ্জু ধর, কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপপরিষদের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ঢাবি উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নিদিয়া রাকা ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী নির্জনা ভূঁইয়া।