বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুমে এবার গণমাধ্যমকর্মীকে নির্যাতন 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের গেস্টরুমে এবার এক গণমাধ্যমকর্মীকে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগের আট কর্মী এ ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতনের শিকার গণমাধ্যমকর্মী। মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আট জনকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।

অভিযুক্ত আট কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের আসাদ হক ও আরিফ জামান সেজান, ৪৭ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের জিয়াদ মির্জা, দর্শন বিভাগের হাসিবুল হাসান রিশাদ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের রাইহান বিন হাবিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মুনতাসির আহমেদ তাহরীম, আইন ও বিচার বিভাগের মাসুম বিল্লাহ্ ও ৪৮ ব্যাচের রসায়ন বিভাগের জাহিদ হাসান।

নির্যাতনের শিকার গণমাধ্যমকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি একটি গণমাধ্যমে কাজ করেন।

নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে এক বন্ধুর মাধ্যমে গেস্ট রুমে ডেকে আনা হয়। আসার পর তারা আমাকে নিজের ও বন্ধুদের পরিচয় দিতে বলে। এর আগে গেস্টরুমে না আসায় পরিচয় পর্ব শেষে আমাকে সিলিং ধরে ঝুলতে বলা হয়, টেবিলের নিচে বিশেষ পদ্ধতিতে মাথা দিতে (মুরগী হওয়া) ও একটানা দীর্ঘক্ষণ লাফাতে বলা হয়। আমি বাধ্য হয়ে সিলিংয়ে ঝুলেছি, লাফিয়েছি। কিন্তু টেবিলের নিচে মাথা না দেওয়ায় আমাকে মারধর করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, এ সময় তারা আমার মোবাইলফোনে কোনও কিছু রেকর্ড করা হয়েছে কিনা দেখতে চায়। তবে আমি ফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার শার্টের কলার ধরে মারধর শুরু করে। পরে তারা আমার ফোন নিয়ে যায় এবং প্রায় তিন ঘণ্টা আমাকে আটকে রাখে।

পরে খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নেতাকর্মী এবং সাংবাদিক নেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত মহন। তারা উভয়পক্ষের কথা শোনেন। 

পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজামান সোহেল বলেন, ‘সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় আট ছাত্রলীগ কর্মীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। সাংগঠনিক কাজকর্ম থেকে তারা অবাঞ্ছিত বলে গণ্য হবে। আগামী কমিটিতেও তাদের থাকার কোনও সুযোগ নেই। আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা আর ঘটুক।

তবে ওই সময় খবর পেয়েও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট, ওয়ার্ডেন, আবাসিক শিক্ষক ও সহকারী আবাসিক শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে আসেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। 

তবে বুধবার সকালে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী বলেন, ‘বিষয়টা রাতে জানতে পারিনি। এখনই শুনলাম, সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা জানার চেষ্টা করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে হল প্রশাসন যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হবে।’

এরআগেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগরসহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টরুমে শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন জড়িত থাকার প্রমাণও মেলে। এর মধ্যেই এবার জাবিতে গণমাধ্যমকর্মীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটলো।