বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তারা বহিষ্কৃত, তবু দিলেন পরীক্ষা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বহিষ্কৃত দুই ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরীক্ষা দিচ্ছে। শাস্তি ঘোষণার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও চিঠি ইস্যু হয়নি। লিখিত পত্র না থাকায় তাদেরকে পরীক্ষা থেকে বিরত রাখতে পারছে না বিভাগও।

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দুই ছাত্রী নির্যাতনের শিকার হন। ওই ঘটনায় ১০ মাস পর গত ২৫ জুলাই চার জনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় প্রশাসন। এর মধ্যে রাকিব হাসান রাজু ও ইমন আহমেদ বুধবার (৩ আগস্ট) থেকে শুরু হওয়া দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এখনও চিঠি ইস্যু করা হয়নি। তবে এ জন্য প্রশাসনের সদিচ্ছাকে দোষী করছেন ভুক্তভোগীরা।

ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক হেনস্তার বিচার চেয়ে এখন আমরা বারবার হেনস্তার শিকার হচ্ছি। ১০ মাস থেকে ঘুরছি প্রশাসনের কাছে। তখন থেকেই বলছে প্রসিডিউরাল (প্রক্রিয়াগত) কারণে চিঠি দেরি হচ্ছে, দ্রুত যাবে। ১০ মাস পরে শাস্তি ঘোষণার পরও বলছে শিগগির চিঠি যাবে। প্রশ্ন হচ্ছে কখন চিঠি যাবে?’

জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকেও একই কথা বলছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রসিডিউরাল কারণে এখনও চিঠি পাঠানো যায়নি। শিগগিরই চিঠি পাঠানো হবে।’

ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘তাদের পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে। আমরা জানতে পেরে বিভাগকে মৌখিকভাবে বলেছি। তবে চিঠি পাঠানো সম্ভব হয়নি। দ্রুত চিঠি যাবে বিভাগে।’

তবে মৌখিক নির্দেশে পরীক্ষা বাতিল করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন দর্শন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মৌখিকভাবে তাদের বিষয়ে জানিয়েছে। তাদের কাছে পরীক্ষার প্রবেশপত্র আছে, ব্যাংক রশিদ আছে। আমার কাছে তো অফিসিয়াল কোনও কাগজপত্র নেই। তাদেরকে কীভাবে বের করবো পরীক্ষার হল থেকে?’

তিনি আরও বলেন, ‘তবে তারা পরীক্ষা দিয়েছে, তার মানে এই না যে তাদের শাস্তি কার্যকর হবে না। প্রশাসন যদি পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই শাস্তি কার্যকর করে তাহলে এই পরীক্ষা দিয়ে কোনও লাভ নেই। অনেকের তো ৫/১০ বছর পরও সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে যায়।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলের সদস্য ড. লায়লা খালেদা আঁখি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপরাধী শাস্তি ভোগ না করলে সেটা আবার কেমন শাস্তি? অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে দুই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে চার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে গত ১৭ জুলাই যৌন নিপীড়নের শিকার হন আরেক ছাত্রী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ঘটনায় জড়িত দুজনকে ২৫ জুলাই বহিষ্কারের ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই আগের বছরের ঘটনায় অভিযুক্ত চার শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

তারা হলেন— আরবি বিভাগের ছাত্র মো. জুনায়েদ, ইসলামের ইতিহাস, সংস্কৃতি বিভাগের রুবেল হাসান, দর্শন বিভাগের ইমন আহমেদ ও রাকিব হাসান রাজু। তারা সবাই ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র।