কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৫

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন উভয় হলের কমপক্ষে ১৫ জন। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে দুই হলের মধ্যবর্তী স্থানে এ ঘটনা ঘটে। 

আহতদের মধ্যে রয়েছেন—বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো সায়েম, বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মী ইকবাল হোসাইন, মবিনুল বারি রাকিব, অনুপ দাস, নজরুল হলের সাকিব হাসান দীপ, আশরাফুল রায়হান। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বন্ধ থাকায় আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসা নিয়ে হলে ফিরেছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাতে দুই হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় বাঁশ, গাছের ডাল, রড নিয়ে একে-অপরের দিকে তেড়ে যান। এছাড়া একে-অপরকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়ে মারেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ সাহেদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির হোসেইন আসেন। তারা প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে মূল ফটক আটকে দেন। এরপর কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। তবে এ ঘটনায় কাজী নজরুল ইসলাম হলের হল প্রশাসন কাউকে দেখা যায়নি। অনেক সময় পর ওই হলের হাউজ টিউটর এনামুল হক আসেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীরা। 

CU-2

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে আছি। এত বড় ঘটনা ঘটে গেলো কিন্তু আমাদের হল প্রশাসনের কাউকে পাইনি। এটা দায়িত্ব অবহেলা ছাড়া আর কিছু না।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রাধ্যক্ষ মিহির লাল ভৌমিকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

হলের হাউজ টিউটর এনামুল হক বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। নজরুল হলের ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রক্টরিয়াল বডির সঙ্গে সমন্বয় করে এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এর আগে শুক্রবার (৯ আগস্ট) দুপুরে জুমার নামাজে যাওয়ার পথে ‘সাইড’ চাওয়াকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি হয়।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল রায়হান নামাজে যাচ্ছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল গেটের সামনে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একই হলের শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদ ‘সাইড’ দেওয়ার কথা বলেন। তখন সেলিম আহমেদের কাঁধে ধাক্কা লাগে। নামাজ শেষে সেলিম ও রায়হানের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। সেলিম, তার বন্ধু মাহবুব ও রায়হান একে-অপরের দিকে তেড়ে যান। এ নিয়ে দুই হলের শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এর জের ধরে সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম আবরারের ওপর হামলা চালান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদসহ কয়েকজন। রাত ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন একটি দোকানে কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রায় সাত-আট জন ছাত্রলীগ কর্মী গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করেন। এরপর দুই হলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এতে ১৫ জন আহত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হল প্রশাসন উপস্থিত হই। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সবাই মিলে বসে এ ঘটনায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

CU-3

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘আমি ঘটনাটি দেখেছি। দুই হলের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ হলে পাঠিয়েছি। যেহেতু দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে, সেজন্য সভাপতিসহ বসে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাসার সাকিব বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। যতটুকু শুনেছি দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংগঠন থেকে নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে কাজী নজরুল হল ছাত্রলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীরা আমাদের হলে এসে হামলা চালায়। আমি হলের সবাইকে ভেতরে রাখার চেষ্টা করেছি। এমন হামলার বিচার চাই আমরা।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করেছি। পরে হল প্রশাসনের সঙ্গে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’