উত্তরপত্রের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে আলোচনায় জবি শিক্ষক

স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীর উত্তরপত্রের ছবি ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে আলোচনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতর বলছে, কাজটি আইনসম্মত হয়নি। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরাও।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শওকত জাহাঙ্গীর নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে উত্তরপত্রের দুইটি ছবি আপলোড করেন।

পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেন, “মাস্টার্স পর্যায়ের মিড-টার্ম পরীক্ষার উত্তরপত্র। হাতের লেখা বেশ ভালো কিন্তু ভিতরে পড়ে আমি হতবাক! হতাশ মনটা ভালো করার জন্য উত্তরপত্র মূল্যায়নে বিরত থাকলাম।”

পরে শনিবার (২৯ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে পোস্টটি সম্পাদনা করে লেখা হয়, “মাস্টার্স পর্যায়ের (প্রাইভেট/পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভনিং প্রোগ্রামের ছাত্রের) মিড-টার্ম পরীক্ষার উত্তরপত্র…।” পরে পোস্টটি তিনি সরিয়ে নেন।

তবে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই পোস্টের স্ক্রিনশট ফেসবুকের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে ছড়িয়ে পরে। ফলে শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটা নিয়ে হাস্যরসের শিকার হচ্ছেন তারা। জবি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে সমালোচনাও করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'ফেসবুকে সবাই আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করছে। আমাদের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্যার পোস্টটা না করলেও পারতেন। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এধরণের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ আশা করা যায় না।'

একই বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা চাইলেই এটা নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছি না। স্যার প্রথমেই লিখতে পারতেন এটা ইভনিং-এর খাতা। উনি এডিট করলেও পোস্টটা ছড়িয়ে গেছে। আমরা হাস্যরসের শিকার হচ্ছি।'

পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীর  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'মূলত একটা মেসেজ দেওয়ার জন্য পোস্টটা করেছি। আমাদের শিক্ষার মান কোথায় যাচ্ছে, কতটা নিম্নমুখী হয়েছে এটা সবাইকে বোঝানোর জন্য। যারা নীতি নির্ধারক আছেন তাদের এটা বোঝা উচিত। আমি পোস্টে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষার্থীর পরিচয় উল্লেখ করিনি। আমার উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে মেসেজে দেওয়া।'

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে উত্তরপত্রের ছবি পোস্ট করা কতটা যুক্তিযুক্ত জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আখতারুজ্জামান বলেন,  'তিনি আইনসম্মত কাজ করেননি। যে ব্যাচেরই হোক, যারই খাতা হোক—তিনি পাবলিক করতে পারেন না। একজন সিনিয়র শিক্ষক এমন কাজ করলে, জুনিয়র শিক্ষকরা কি করবে?'

এবিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হককে বেশ কয়েকবার ফোন দেওয়া হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

এর আগে চলতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের এক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত উত্তরপত্রে ‘স্যার আজকে আমার মন ভালো নেই’ লিখে সেই ছবি ফেইসবুক পোস্ট করে শাস্তির মুখে পড়েছিলেন।